Homeমহানগরখড়গপুরপুজোর আগে দুরস্ত খড়গপুর শহরের জঞ্জাল সাফাই, দিদির দিকেই তাকিয়ে পুরসভা

পুজোর আগে দুরস্ত খড়গপুর শহরের জঞ্জাল সাফাই, দিদির দিকেই তাকিয়ে পুরসভা

অচিন্ত্য ত্রিপাঠী : করোনা কালের মধ্যেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। এবার উৎসব কেমন হবে ভাবতে না ভাবতেই পুজো পিছু ৫০হাজার টাকা করে অনুদান দিয়ে সে ঢাকের বাদ্যি বাজিয়ে দিয়েছেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। এবারও নিশ্চই নীল আর সাদা আলোয় ভরে উঠবে খড়গপুর শহর কিন্তু ফি বছরের মত এবারও কি পুজোর আগে আবর্জনা মুক্ত হবে শহর? খড়গপুরবাসীর কাছে এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

গোটা শহর জুড়েই আবর্জনা ডাঁই হয়ে রয়েছে। ইন্দা থেকে শুরু করে খরিদা, মালঞ্চ হয়ে নিমপুরা কিংবা কৌশল্যা থেকে ঝাপেটাপুর, ছোট ট্যংরা, তালবাগিচা, প্রেমবাজার অলিতে গলিতে জমছে জঞ্জাল। দুর্গন্ধ তো আছেই, তার সঙ্গে রয়েছে রোগবাহি মাছি, মশা, পতঙ্গের উপদ্রব। এই বিপুল পরিমাণ আবর্জনা কোথায় সরানো হবে তাই নিয়ে মাথায় হাত পুরসভার।

তিনবছর চলার পর মুখ থুবড়ে পড়েছে শহরের প্রান্ত ঘেঁষে হিরাডিহির প্রায় ৯০ কোটি টাকার সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রোজেক্ট। ম্যানেজমেন্টের ম না করে আবর্জনা ডাঁই করে রাখা আর অবৈজ্ঞানিক ভাবে আগুনে পোড়ানোর ফলে দুর্গন্ধ আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ফলে প্রায় ৬ মাস আবর্জনা ফেলা বন্ধ। এখন শহরের আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই।

পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, রেল এবং IIT-Kharagpur ক্যাম্পাস বাদ দিলে প্রতিদিনই প্রায় ১০০ টন আবর্জনা উৎপাদন করে খড়গপুর শহর। পৌরসভার ১ ডজনেরও বেশি লরি এই আবর্জনা প্রতিদিন ফেলে আসত হিরাডিহিতে। এখন সে উপায় নেই। অবস্থা এতটাই খারাপ যে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের আবর্জনাই প্রতিদিন সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছেনা। এদিকে বারংবার আলোচনায় বসে খোলা যায়নি হিরাডিহি ডাম্পিং ইয়ার্ডের তালা। এলাকার মানুষ প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। ফলে শহর জুড়ে প্রতিদিন জমতে থাকা জঞ্জালের পাহাড় সরবে কোথায়? সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাফাই কর্মীরা জানাচ্ছেন, “যেখানে খুব সমস্যা হচ্ছে সেখান থেকে ময়লা সরিয়ে চুপিসারে ফেলে রেখে আসা হচ্ছে জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ লরি আবর্জনা কোনোমতে সরানো হচ্ছে যা শহরের প্রতিদিন কার জমা আবর্জনার মাত্র ৩০%। কিন্তু এটাও বেশিদিন সম্ভব হবেনা কারন সেখানেও মানুষ জানতে পারলে ক্ষেপে যাচ্ছে। তাছাড়া জাতীয় সড়কের ধারে আবর্জনা ফেলায় আপত্তি তুলবে কলাইকুন্ডায় অবস্থিত বায়ুসেনা। হিরাডিহিতে আবর্জনা ফেলার আগেও জাতীয় সড়কের ধারে আবর্জনা ফেলত পৌরসভা। বায়ুসেনার পক্ষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাসককে জানিয়েছিল, এতে আকাশে চিল ও শকুন জাতীয় পাখি ভিড় করছে। বিমান ওঠা নামায় সমস্যা হচ্ছে, বিপদের মুখে পাইলটরা। এরপরেই জাতীয় সড়কের পাশে ময়লা ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। হিরাডিহি চালু হওয়ায় সেই সমস্যা মিটে গিয়েছিল কিন্তু হিরাডিহি বন্ধ হতে আবারও সেই সমস্যা হাজির হবে।

এই সঙ্কটের জন্য পুরবোর্ডকে দায়ি করেছে সাফাই কর্মীরাও। তাঁরা বলছেন, ‘সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতিতে জঞ্জাল মুক্তির প্রকল্প চালু হয়েছিল। তিনবছর ধরে তার কিছুই করা হয়নি। হিরাডিহিতে ডাম্পিং ইয়ার্ড শুরুর মুখেই বাধা দিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। তখন তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি সব ময়লা আবর্জনা নিয়ন্ত্রন করা হবে। তারপরই মানুষ প্রকল্প রূপায়ণে বাধা দেওয়া থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু পুরসভা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেননি। শুধুই আবর্জনা ফেলা হচ্ছিল আর পোড়ানো হচ্ছিল। তিনবছর ধরে সহ্য করার পর মানুষ ক্ষেপে ওঠেন। বিদায়ী বোর্ড যদি সরকারের দেওয়া টাকা আর মানুষের দেওয়া সময়ের সদ্ব্যবহার করত তা’হলে এই দিন দেখতে হতনা।

এখন তা’হলে কী হবে? কোন পথে ঘটবে পুর এলাকার জঞ্জাল মুক্তি? থই খুঁজে পাচ্ছেননা পুর প্রশাসকরা। বিদায়ী পুর বোর্ডের আবর্জনা নিষ্কাশনের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত পুর পারিষদ সুরেশ যাদব জানাচ্ছেন, ” হিরাডিহি আপাতত বন্ধ প্রজেক্ট। আমরা নতুন করে মুক্তির কোনোও উপায় দেখতে পাচ্ছিনা। ৬ তারিখ দিদি (মূখ্যমন্ত্রী) প্রশাসনিক সভা করতে খড়গপুর আসছেন। সেখানে বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য চেষ্টা করা হবে। দেখা যাক, উনি কি বলেন।”
এদিকে যে কোনোও ভাবেই হোক জঞ্জাল সরাতেই হবে পুজোর আগে। নচেৎ বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে নাগরিকদের মধ্যে। এখন কোন পথে সেই কাজ হয় সেটাই এখন দেখার।
ছবি:প্রতিবেদক

RELATED ARTICLES

Most Popular