নিজস্ব সংবাদদাতা: কথা ছিল সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি গড়ে তোলা হবে। এরজন্য বরাদ্দ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। কিন্তু আদতে যা তৈরি হয়েছে তা হল মস্ত প্রাচীর তুলে তার ভেতরে বড় বড় খাদের মত গর্ত খুঁড়ে খড়গপুর পৌরসভার যাবতীয় আবর্জনা ফেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া। দিন রাত ২৪ঘন্টা সেই আগুন জ্বলছে। আর প্ল্যাস্টিক, পলিথিন, পলিমারের ধোঁয়ায় ঢেকে থাকছে চারদিক।
কটূ দুর্গন্ধ, ভারী হয়ে যাওয়া বাতাস আর বাতাস বয়ে নিয়ে যাওয়া কালো কার্বন কনা অতিষ্ঠ করে তুলেছে হিরাডিহি, আম্বাশোল, কেশিয়াশোল, দক্ষিন তালবাগিচা, হরিপুর, আরামবাটি ইত্যাদি কয়েকটি ঘনবসতিপূর্ন এলাকার মানুষের জীবন। মানুষের নিরন্তর অভিযোগের মুখে মঙ্গলবার রাজ্য দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের কর্মকর্তারা খড়গপুর পৌরসভার তৈরী করা ওই নরক পরিদর্শন করতে যান আর তখনই একটি কফিনকে ঘিরে মুহূর্তের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
ইতিমধ্যেই দূষন পর্ষদের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আশেপাশের বেশ কিছু সাধারন মানুষ উপস্থিত ছিলেন। কফিনের মধ্যে করোনার মৃতদেহ এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ায় নিমেষের মধ্যে কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো হয়ে যায় আর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের অভিযোগ, গর্ত করে লাশ পুঁতে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই জেসিপি দিয়ে রাতের অন্ধকারে খোঁড়া হচ্ছে কবর। ক্রমশ উত্তাল হয়ে ওঠে খড়গপুর শহর লাগোয়া পৌরসভার ডাম্পিং ইয়ার্ড সংলগ্ন এলাকা। আশেপাশের চার পাঁচটি গ্রামের লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে ডাম্পিং ইয়ার্ডকে ঘিরে।
ভাঙচুর করা হয় নিরাপত্তারক্ষীদের চেয়ার টেবিল। আধিকারিকরা বেরিয়ে যাওয়ার পর সাধারন মানুষ তালা লাগিয়ে দেয় ওই ইয়ার্ডের গেটে। খবর পেয়ে বিকালে পুলিশের এক বিশাল বাহিনী আসে। খড়গপুর গ্রামীন থানার পদস্থ আধিকারিক বিষয়টি নিয়ে আগামী দু’একদিনের মধ্যেই স্থানীয় মানুষজনদের সাথে আলোচনায় বসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দিয়ে যান।
এটা ঘটনা যে দূষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের এক আধিকারিক জানিয়ে গেছেন যে, যে পদ্ধতিতে আবর্জনা নিয়ন্ত্রন করা দরকার তার বিন্দু বিসর্গ নিয়ম এখানে মানা হয়না। বিষয়টি নিয়ে সরকারকে তারা রিপোর্ট দেবেন, এমনটাও জানিয়েছেন। প্রশ্ন উঠছে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের বরাদ্দ টাকা, যে টাকায় আবর্জনা নিয়ন্ত্রন, পুনর্ব্যবহার যোগ্য করে তোলার যন্ত্রপাতি কেনার কথা ছিল তা কোথায় গেল?
তবে ডাম্পিং ইয়ার্ডকে ঘিরে মানুষের অভিযোগের সারবত্তা থাকলেও করোনার লাশ গায়েব করার অভিযোগটি পুরোপুরি ভিত্তিহীন। ঘটনা হচ্ছে ২০১৭ সালে ডাম্পিং ইয়ার্ড গড়ে তোলার আগে এখানে একটি অলিখিত খ্রিস্টীয় কবর খানা ছিল। ডাম্পিং ইয়ার্ড গড়ে তোলার সময় ক্রিশ্চান সম্প্রদায়ের মানুষ প্রশ্ন তোলেন যে তাঁদের কবরখানার কি হবে? পৌর কর্তৃপক্ষ ইয়ার্ডের মধ্যেই একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দেন তাঁদের কবরের জন্য। সম্ভবত প্রাপ্ত কফিনটি সেরকমই কোনও মৃতদেহের যা দেখে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনাক্রমে কদিন ধরে ইয়ার্ডের আলো জ্বলছিলনা। কিছু মানুষ তাই দাবী করতে শুরু করেন রাতের অন্ধকারে কবর খোঁড়া হচ্ছিল। বাস্তবে জেলায় করোনা রুগীর মৃত্যু হলে তার জন্য নির্দিষ্ট কবরখানা তৈরী করেছে প্রশাসন, আছে পোড়ানোরও ব্যবস্থা। তাই লুকিয়ে মৃতদেহ সৎকারের কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক।