নিজস্ব সংবাদদাতা: পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে আর এক শ্রেণীর মানুষ ইতিমধ্যেই মেতে উঠেছেন পুজোর আমেজে। বাজার ঘাটে জমজমাট ভিড়, চলছে পুজার কেনাকাটা। অনেকেই কয়েকমাসের লকডাউনের বন্দী জীবনে বাইরে বেরুনোর ঘাটতি মিটিয়ে নিতে চাইছেন কড়ায় গন্ডায়। যদিও করোনার ঘাটতি ঘটেনি খুব একটা। কম বেশি করোনার প্রকোপ চলছেই আর বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন যদি কঠোর অনুশাসনের মধ্যে বাঙালির এই উৎসব প্রতিপালন না হয় তবে কপালে দুঃখ রয়েছে। বিশ্বে যেমন স্পেন যেমন উৎসবের আনন্দে করোনা ফিরিয়ে এনেছে কিংবা কেরল যেমন ওনামের আনন্দ নিতে গিয়ে করোনা জয় করেও ফের করোনার শিকার হয়েছে তেমনই সচেতন না হলে বাঙালিরও মুক্তি নেই।
দ্য খড়গপুর পোষ্টয়ের পক্ষ থেকে গত ১০দিনের আরটি/পিসিআর রিপোর্ট বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কয়েকটি থানা এলাকার করোনা মানচিত্র লক্ষ্য করার পর এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে ওই থানা এলাকাগুলির সদর শহরের যে সমস্ত জায়গায় বড় বড় পূজা হয়ে থাকে অর্থাৎ যেখানে জাঁক জমক ও ভিড় বেশি হয় সেই এলাকা গুলির অধিকাংশই এখনো করোনা সংক্রমন বলয়ে রয়ে গেছে শুধু নয় কয়েকটি এলাকায় নতুন করে করোনা বাড়ছে। যেমন খড়গপুর শহরের ইদানিং প্রবণতায় দেখা যাচ্ছে প্রেমবাজার তথা হিজলী কো অপারেটিভ সোসাইটি, তালবাগিচা এবং সংলগ্ন এলাকায় সাম্প্রতিক কালে করোনার গতি বেড়েছে।
গত ১রা থেকে ১০ই অক্টোবর ১০ দিনে তালবাগিচা এলাকায় ১২টি, প্রেমবাজার ও হিজলি কো-অপারেটিভ সোসাইটি এলাকায় ১০টি এবং সংলগ্ন ডিভিসি-মায়াপুর মিলিয়ে ৭ টি করোনা পজিটিভ মামলা নতুন করে পাওয়া গেছে। শহরের দক্ষিনের এই অঞ্চলটি কিন্তু নতুন করে আক্রান্তের মানচিত্রের তালিকায় উঠে এসেছে। সংক্রমন শুরু হওয়ার প্রথম দিক কিংবা মাধামাঝি সময়েও এই এলাকায় এতটা সংক্রমন ছিলনা। প্রেমবাজার এবং তালবাগিচা পূজার মানচিত্রে এখন জেলা ছড়িয়ে রাজ্যে সুনাম কুড়িয়েছে। এই দুটো পুজো যাঁরা দেখতে আসেন তাঁরা অনেকেই IIT-Kharagpur ক্যাম্পাসের ভেতরে দুটো প্রতিমা দর্শন করেন। এবার সেই IIT-Kharagpur ক্যাম্পাসও সংক্রমিত। এ মাসের শুরুর ২দিনেই ক্যাম্পাসের ভেতরে অন্তত ১৫টি পজিটিভ মামলা পাওয়া গেছে। পরের দিনগুলোতেও একটা দুটো তিনটে করে পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।
খড়গপুর শহরের উত্তরে ইন্দা এলাকা। তিনটি পূর্ন ওয়ার্ড এবং ২টি আংশিক ওয়ার্ড নিয়ে এই এলাকার বিস্তার। এই এলাকায় ছোট বড় মিলিয়ে অন্ততঃ ৫টি পুজো হয়(ট্রাফিক সহ)। করোনা যাত্রার শুরু থেকেই এই এলাকায় যে সংক্রমন শুরু হয়েছিল তার গতি আজও স্তিমিত হয়নি। গত ১ তারিখ থেকে ১০তারিখ অবধি মূল ইন্দা ছাড়াও রামকৃষ্ণপল্লী, সারদাপল্লী, বিদ্যাসাগরপুর, ইন্দা বামুনপাড়া ইত্যাদি এলাকায় করোনা পজিটিভের নতুন প্রায় ১২ টি মামলা পাওয়া গেছে।
এরপর চলে আসা যাক সুভাসপল্লী,ভবানীপুর, দেবলপুর এবং গোলবাজার সংলগ্ন এলাকায়। বি.এন.আর গ্রাউন্ড সেবাসমিতির বিখ্যাত পূজা এই এলাকায়। গত ১০দিনে ১০ টি করোনা পজিটিভ মিলেছে যার মধ্যে ভবানীপুর ও সুভাসপল্লীতে ৭ টি, দেবলপুর, গোলবাজারে ৩ টি পজিটিভ পাওয়া গেছে।
শহরের পশ্চিম দিকে খরিদা মালঞ্চ নিমপুরাতে বেশ কয়েকটি বড় পূজা হয়ে থাকে। এই এলাকার মধ্যে খরিদায় গত ১০দিনে খুব বেশি পজিটিভ পাওয়া যায়নি।কিন্তু বৃহত্তর মালঞ্চ অর্থাৎ ওল্ড মালঞ্চ, মালঞ্চ রোড, রাখাজঙ্গল, চণ্ডীপুর, খিদিরপুর মিলিয়ে একডজনের বেশি মানুষ করোনা সক্রিয় হয়েছেন। নিমপুরা থেকে আরামবাটি অন্তত ৫টি পজিটিভ কেস পাওয়া গেছে যার মধ্যে টাটা বিয়ারিং আবাসন এলাকা রয়েছে।
উল্লেখিত এলাকা বাদ দিলেও ঝাপেটাপুর, ঝুলি সোনামূখী, বুলবুলচটি, মিরপুর, বারবেটিয়া, সাঁজোয়াল, টুরিপাড়া, রবীন্দ্রপল্লী ইত্যাদি এলাকাও করোনা সংক্রমন তালিকায় রয়েছে।
শহরের আরও একটি বড় অংশ রয়েছে রেল এলাকা। বোগদা, ডেভলপমেন্ট, মথুরাকাটি এবং বিএনআর গ্রাউন্ডের বড় পূজাগুলি রেল আবাসন বেষ্টিত। গত ১০দিনে আক্রান্ত অন্ততঃ ৪০ জন রেলকর্মী বা তাঁদের পরিবার এই এলাকাতেই বসবাস করেন।
শহরে শুধু শহরের মানুষই নন, প্রতিমা দর্শনে উঠে আসে শহরতলিও। সেক্ষেত্রে শহরতলির অবস্থাও খুব ভাল নয়। শহরের দক্ষিনে সালুয়া এবং গোপালি এলাকায় গত ১০দিনে করোনা সংক্রমন মারাত্মক। ১২টির মত পজিটিভ কেস এসেছে শুধু দক্ষিণ অংশ থেকে। অন্যদিকে পূর্বদিকে সাঁজোয়াল, পপরআড়া, জকপুরেও সক্রিয় করোনা।
গত ১০দিনে গড়ে ২০জন করে শহরে নতুন করে করোনার কবলে এসেছেন। অর্থাৎ ১০দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ২০০জন।
এবার একটু হালফিলের হিসাব দেখে নেওয়া যাক। গত ৭২ঘন্টা বা তিনদিনে (৭-১০ অক্টোবর) আরটি/পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী খড়গপুর শহরে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩জন। যারমধ্যে তালবাগিচা এলাকায় ৭জন, ইন্দা এলাকায় ৮জন, প্রেমবাজার, মালঞ্চ, সুভাসপল্লী ভবানীপুর এলাকায় ৩জন করে আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। বাকি আক্রান্তরা শহরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যার মধ্যে রেল এলাকায় ১৫জন রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পক্ষকালের মধ্যেই বাঙালির সাথে এই শহরেরও বড় উৎসব। সচেতন ও সতর্কতার মধ্যেই সেই উৎসব পালিত হোক। মনে রাখতে হবে শুধুমাত্র আরটি/পিসিআর রিপোর্টেই চিত্রটা এই! আ্যন্টিজেন যুক্ত হলে বাস্তব আক্রান্তের সংখ্যা আরও খানিকটা বেশি হবে।