নিজস্ব সংবাদদাতা: আনলক পর্বে স্বাভাবিকের চেয়েও যেন বেশি স্বাভাবিক খড়গপুর শহর। পুলিশের ফাইন, গ্রেপ্তার যেমন চলছে তেমনি চলছে বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা। শহরের ওপর দিয়ে বাস যাচ্ছে আশে পাশের শহরে। শহরের মধ্যে রিকশা, আটো, টোটো। শহরে আক্রান্তের হার ও পরিমান দুই-ই বাড়ছে। কিন্তু সচেতনতা কতটুকু বাড়ছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। পুলিশকে ফাঁকি দিতে পারলেই যেন বাইরে বেরুনোর মোক্ষ লাভ। আর সেটা করতে গিয়েই ক্রমশ করোনার ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে মানুষ নিজেই। ফলে ক্রমশ বেলাগাম হতে চলেছে শহরের করোনা পরিস্থিতি। সংক্রমন বেড়েই চলেছে আর বুধবারও সেই সংক্রমনের তালিকায় ঢুকে পড়েছে ১১জনের নাম।
এই ১১ জনের মধ্যে রেল যোগ রয়েছে ৩ জনের। বাকি খড়গপুর শহরের ৭ জনের মধ্যে ৩জন আক্রান্তই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে টোটো পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ফলে গন পরিবহন ব্যবস্থার সুযোগ নিতে গেলে যথার্থ নিরাপত্তা ভাবতে হবে শহরকে। নতুবা বিপদ বাড়তে পারে। বুধবার স্বাস্থ্য দপ্তরের হিসাব মোতাবেক খড়গপুর শহরের সিএমই গেট এলাকায় ১মহিলা সহ তিন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। এই তিনটি পরিবার একই পাড়ার মধ্যে অবস্থিত শুধু নয়, প্রায় গা ঘেঁষেই এদের বাস। আক্রান্তদের মধ্যে ১জন টোটো চালক, একজন টোটো চালকের স্ত্রী এবং অপরজন এই দুই টোটো চালকের বন্ধু, এক সাথে ওঠা বসা। এলাকাটি বস্তি এলাকা। টোটোর পাশাপাশি রয়েছেন বেশ কিছু রিকশা চালকও, রয়েছেন ভাড়া নিয়ে আটো চালান এমন যুবকও।
যে টোটো চালক আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী বা পরিবারের সদস্যদের পরীক্ষা যেমন হয়নি তেমনি পরীক্ষা হয়নি আক্রান্ত স্ত্রীর টোটো চালক স্বামী বা পরিবারের। বৃহস্পতিবার এঁদের নমুনা নেওয়া হবে। এই টোটো চালকরা হয়ত যাত্রী বহন করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন তেমনই যাত্রীরাও এঁদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। সোজা কথায় গন পরিবহন ব্যবস্থা থেকে করোনা ছড়াচ্ছে কিনা ভেবে দরকার বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারাই। কারন টোটো, আটো বা রিকশা স্যানেটাইজ করা হচ্ছে কিনা প্রতিবার ব্যবহারের পরে বোঝার উপায় নেই।
বুধবার বাকি ৭ আক্রান্তের যে তিনজন রেল যোগ রয়েছে তাঁর একজন আরপিএফ জওয়ান। ৫০ বছরের এই ব্যক্তির উপসর্গ দেখা দেওয়ার পরই রেল কর্তৃপক্ষ এঁকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে রেখেছেন। অন্য এক ৩৭ বছরের মহিলা আক্রান্ত হয়েছেন রেলের নৈশ প্রহরী স্বামীর কাছ থেকে। খরিদা বিধানপল্লীর বাসিন্দা এই মহিলার স্বামী আগেই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন। অন্য আরেক ৩০ বছরের মহিলা রেল কোয়ার্টারের বাসিন্দা।
রেল সূত্রের বাইরে বাকি ৫ জনের একজন মথুরাকাটির ৫০ বছরের ঠিকা মজুর। এঁর উপসর্গটি অদ্ভূত। ইনি কোনও কিছুর গন্ধ পাচ্ছিলেন না। চিকিৎসকের পরামর্শে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে পজিটিভ বলে চিহ্নিত হন। দেওয়ানমাড়ো এলাকার আক্রান্ত ৩৬ বছরের যুবক আবার বিগ বাজারের নিরাপত্তা রক্ষী। এছাড়া পুরানো বাজার এলাকায় আক্রান্ত হয়েছেন এক ৮৫ বছরের বৃদ্ধা ও তাঁর ৪৮ বছর বয়সী পুত্রবধূ। শহরের একাদশতম আক্রান্ত ব্যক্তি এক বৃদ্ধ যাঁর আ্যন্টিজেন পরীক্ষা হয় খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে।
এদিন নজির বিহীন অমীমাংসিত ফলাফল এসেছে। যার থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে বৃহস্পতিবার বেশ বড় সংখ্যায় আক্রান্তের খোঁজ মিলতে চলেছে খড়গপুর শহর জুড়ে। খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী জানিয়েছেন বুধবার প্রায় ৩০জন অমীমাংসিত ফলাফল এসেছে ফলে মনে হচ্ছে বৃহস্পতিবার বেশ বড় মাত্রায় নতুন আক্রান্তের খোঁজ মিলতে চলেছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে ৩৫টি অমীমাংসিত রয়েছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে পাওয়া নমুনার মধ্যে। জানা গেছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে ১১আগস্ট প্রায় ১৬০ জনের নমুনা সংগ্ৰহ করা হয়েছিল। যার মধ্যেই ৭ জনের পজিটিভ ও ৩৫ জনের অমীমাংসিত ফলাফল পাওয়া গেছে।
বুধবার এই ৩৫ টি অমীমাংসিত ফলের নতুন করে পরীক্ষা হবে এবং তার সঙ্গে ওই বুধবারই নতুন করে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তারও পরীক্ষা হবে। যেহেতু সাধারন ভাবে খড়গপুর শহরের ক্ষেত্রে অমীমাংসিত ফল থেকে ভাল হারে পজিটিভ বের হওয়ার ঘটনা এর আগেও দেখা গিয়েছে তাই আশঙ্কা করাটাই স্বাভাবিক যে বৃহস্পতিবার বড়সড় ফাঁড়ার মুখে শহর। ৪৮ ঘন্টা আগে একদিনে ২৫ আক্রান্ত শহরে বৃহস্পতিবার তাকেও ছাড়িয়ে যায় কিনা আক্রান্তের সংখ্যা সেটাই এখন দেখার।