নিজস্ব সংবাদদাতা: আগামী তিন বছরে ৩৫লক্ষ কর্মসংস্থান করা হবে বলে বৃহস্পতিবারই নবান্নে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এই দিনই রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রাজীব সিংহ বলেছিলেন, রাজ্যের শিল্প তালুকগুলিতে ১৫হাজার একর জায়গা পড়ে আছে। যেখানে আগামী ৬ মাসেই ৪-৫লক্ষ কাজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবটা হল অন্যরকম। মূখ্যমন্ত্রী ও চেয়ারম্যানের সেই ঘোষণার ২৪ঘন্টাও পের হলনা, খড়গপুরের বন্ধ হয়ে গেল আরও একটি কারখানা আর যার ফলে বেকার হয়ে গেলেন ৬০০ শ্রমিক। আবার বন্ধ হল একটি শিল্প তালুকের মধ্যেই যা নিয়ে রীতিমত দুশ্চিন্তায় খড়গপুরের বাসিন্দারা।
খড়গপুর বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকে (Vidyasagar Industrial Park)শুক্রবার সাত সকালেই হতাশায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল কয়েকশ শ্রমিককে যখন তাঁরা দেখেন তাঁরা যে কারখানায় কাজ করতেন সেই রবিউন বিনিময় প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য লে-অফ নোটিশ। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, গত ৮ বছর ধরে বেতন বাড়েনি এক পয়সায়। কিছুদিন আগেই কোম্পানি লেবার কমিশনারের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকারি হারে বেতন দেওয়ার। গত তিনদিন ধরে শ্রমিককরা সেই দাবি নিয়েই প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন আর তার মধ্যেই এই নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হল। করোনা কালের সর্বনাশা লকডাউনের ধাক্কার ক্ষত এখনও নিরাময় হয়নি শ্রমিকদের সংসার থেকে তারই মধ্যে এতবড় ধাক্কায় দিশেহারা শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের অভিযোগ ইন্টিরিয়র ডেকোরেশন সহ বিভিন্ন রকমের স্টিলের পাইপ তৈরি হত এই কারখানায়। বাজারে যার চাহিদা অসীম। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবেই কর্তৃপক্ষ কারখানাটিকে চূড়ান্ত লোকসানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল যার পরিণতিতে ‘লিকুইডেশনে চলে যায় কারখানাটি। এরপর আদালত লিকুইডেটর নিযুক্ত করে কিন্তু সঠিক সরকারি তত্ত্বাবধানের অভাবে লিকুইডেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারলনা এই কারখানা।
এক শ্রমিক জানালেন, “মাত্র ৮০০০ টাকা মাস মাইনেতে কাজ করানো হত আমাদের। ওই টাকায় সংসার চলেনা। বছর খানেক আগে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম তখন কারখানা কর্তৃপক্ষ হুমকি দেয় কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার। ভয়ে পিছিয়ে আসি আমরা কারন আমাদের পক্ষে কেউ দাঁড়ায়নি। এরপর বিষয়টি আমরা লেবার কমিশনারকে জানাই। সেখানেই ঠিক হয় সরকারের নিয়ম মেনেই বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু দিনের পর দিন টাল বাহানা চলতেই থাকে। বাধ্য হয়েই গত তিনদিন ধরে আমরা সেই প্রতিশ্রতি রাখার দাবিতেই আন্দোলন করছিলাম। তার পরিনতি এভাবে মেটানো হবে ভাবতেই পারিনি। চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করা হল আমাদের সঙ্গে।”
উল্লেখ্য এই কারখানাটি BRG নামক একটি কোম্পানির অধিন তাঁদের আরও একটি কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমান কারখানাটিতে ৩০০জন স্থায়ী এবং ৩০০জন চুক্তি ভিত্তিক কর্মী কাজ করেন যাঁদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। শ্রমিকদের অভিযোগ তাঁদের পাশে কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই এমন কি গোটা শিল্প তালুক জুড়েই যাদের আধিপত্য সেই আইএনটিটিইউসির কোনও নেতা বা সংগঠক এই ঘটনার পরে তাঁদের পাশে নেই। শুক্রবার সকালে যাঁদের ডিউটি ছিল তাঁরা কারখানার গেটে এই নোটিশ দেখতে পাওয়ার পরই খবর দেন অন্যদের। সর্বনাশের খবর শুনে ছুটে আসেন সবাই। শুরু হয় বিক্ষোভ।
এই কারখানায় কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিকই খড়গপুর শহর ও শহরতলির বাসিন্দা। এঁদের একটি অংশ আবার জমিদাতা। শিল্প তালুক গড়ে তোলার জন্য নিজেদের কৃষি জমি দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই হিসাবে কাজ পেয়েছিলেন তাঁরা।ভাবিক ভাবেই যন্ত্রনা ছড়িয়েছে খড়গপুর জুড়েই। বছর গড়ালেই বিধানসভা নির্বাচনের তার আগে এই অবস্থার পরিবর্তন না ঘটাতে পারলে ভোটের বাক্সে বড়সড় প্রভাব পড়বে সন্দেহ নেই।