নিজস্ব সংবাদদাতা: দুই সমাজবিরোধী শক্তির মধ্যে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল খড়গপুর শহর। অভিযোগ উঠেছে পরস্পরের মধ্যে গুলি চালানোর। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি তাঁরা অন্ততঃ দুটি গুলির শব্দ শুনেছেন। এলাকাবাসীর আরও দাবি খড়গপুর শহরে নতুন করে আধিপত্য কায়েম করতে চাওয়া একদা রামবাবু ঘনিষ্ট শঙ্কর রাও গোষ্ঠী বনাম জেলে থাকা রামবাবুর নিয়ন্ত্রণাধীন সোনু মিশ্র গোষ্ঠীর লড়াইয়েই সোমবার বিকালে এই ঘটনা। ঘটনায় মাথায় চোট পেয়েছে সোনু। যদিও সেই চোট গুলি থেকে নয়। সোনু জানিয়েছে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল বটে কিন্তু মাথা সরিয়ে নেওয়ায় সে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপরই তার মাথায় হকিস্টিক দিয়ে মারে শঙ্কর রাওয়ের গোষ্ঠীর পোস্ত ও শের খাঁন ওরফে শেরু। অভিযোগ সোনুর লোকেরাও গুলি চালিয়েছে তবে সেই গুলিও লাগেনি। খড়গপুর পৌরসভার ৯ এবং ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত এই ঝিন তলাব এলাকায় সমাজবিরোধীদের গন্ডগোলের জেরে মানুষজন রীতিমতো আতঙ্কিত ও বিরক্ত।
যদিও পুলিশ গুলি চালানোর বিষয়টি এখনও স্বীকার করেনি। পুলিশের বক্তব্য প্রথমতঃ গুলি চালানোর অভিযোগ দায়ের করেনি কেউ। দ্বিতীয়ত, গুলিতে কাউকেই আহত অবস্থায় পাওয়া যায়নি এবং তৃতীয়তঃ এলাকা থেকে খোলা কার্তুজ, গুলির দাগ ইত্যাদি কোনও নমুনাই পাওয়া যায়নি। জানা যাচ্ছে খড়গপুরের এই এলাকায় এই পুরো দলটিরই নিয়ন্ত্রণ এক সময় রামবাবুর হাতে। রামবাবুর অনুপস্থিতিতে এই পুরো দলটিকে নিয়ন্ত্রণ করত শঙ্কর রাও এবং দীপংকর শুক্লা। শঙ্কর রাও দেখত খড়গপুর শহরের ঝিন তলাব এলাকায় থাকা জিল্লা ছোটুর টিমকে। এই টিমেই রয়েছে পোস্ত ও শের খাঁনরা। অন্য দিকে গাটার পাড়া এলাকার সোনু মিশ্রদের টিমকে নিয়ন্ত্রণ করে দীপঙ্কর শুক্লা। বর্তমানে অবশ্য শুক্লা প্রকাশ্যে আসেনা। নেতৃত্ব দেয় সোনু মিশ্রই। যতদিন শহরের আরেক মাফিয়া শ্রীনু নাইডু জীবিত ছিল ততদিন শ্রীনুর ভয়ে এক ছিল এই পুরো দলটি। কিন্তু শ্রীনুর মৃত্যুর পর রামবাবুর নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে আলাদা নেতৃত্ব দিতে শুরু করে। শুরু হয় সংঘাত। আর এই সংঘাতের মূলে রয়েছে খড়গপুর শহরে জমি কেনাবেচা, জমির দখল পাইয়ে দেওয়া ইত্যাদি নানা কাজের ওপর পারস্পরিক নিয়ন্ত্রণ। আর এই নিয়েই মাঝে মধ্যে সংঘর্ষ চলে থাকে। কখনও লুকিয়ে, কখনও প্রকাশ্যে।
সোমবার বিকালে ঝিনতালাব এলাকায় গাটারপাড়া এলাকার সমাজবিরোধী সোনু মিশ্রের নেতৃত্বে একটি দল পৌঁছায়। তারপরেই ঝিনতালাব এলাকার পোস্তর দলের সঙ্গে গন্ডগোল শুরু হয় এবং পারস্পরিক গুলি চালানোর অভিযোগ উঠে। তাঁর অভিযোগ ঝিনতালাব এলাকায় রাজা নামে কেউ একজন তাঁকে ডেকে পাঠায়। তিনি কয়েকজনকে নিয়ে সেখানে পৌছানোর পরেই গন্ডগোল শুরু করে পোস্ত ও শের খাঁর দল। তাঁর অভিযোগ ওইসময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। মাথা সরিয়ে নেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়েছে বলে তিনি জানালেন। অন্যদিকে অভিযোগ প্ৰথমিক ধাক্কা সামলে পাল্টা গুলি চালায় সোনুও। কিন্তু পালাতে সমর্থ হয় পোস্ত।
এদিকে গন্ডগোলের খবর পাওয়ার পরই খড়গপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপক সরকারের নেতৃত্বে খড়গপুর টাউন থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ততক্ষণে অবশ্য সমাজবিরোধীরা পালিয়ে যায়। তবে এই ব্যাপারে খড়গপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক দীপক সরকার বলেছেন ” দুই পক্ষের মধ্যে একটি গন্ডগোল হয়েছে। তবে গুলি চালানোর কোনও প্রমাণ পাওয়া যায় নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” জানা গিয়েছে ঘটনার পর থেকে পোস্ত উধাও হয়ে গিয়েছে। হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবশ্য উধাও হয়ে গেছে সোনুও। তবে পুলিশ শের খাঁন ওরফে শেরুকে গ্রেপ্তার করতে সামর্থ্য হয়েছে। মনে করা হচ্ছে রামবাবুর নিয়ন্ত্রণ ভেঙে নয়া মাফিয়ার জন্মের মুহূর্তে গর্ভযন্ত্রনা শুরু হয়েছে খড়গপুরের।