নিজস্ব সংবাদদাতা: দেওয়াল চাপা পড়ে উদ্ধার হওয়ার পরও এক ৫বছরের শিশুকে হাসপাতালে না নিয়ে যেতে পারায় বাড়িতে পড়ে থেকেই মৃত্যু হল ওই শিশুর। মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে খড়গপুর টাউন থানার অন্তর্গত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট আয়মা এলাকায়। প্রায় ২ ঘন্টা আহত অবস্থায় পড়েছিল ওই শিশু! এরপর সবার সামনেই ধিরে ধিরে মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়ে ওই শিশু। বৃহস্পতিবার এমনই মর্মান্তিক ঘটনার স্বাক্ষী থাকল খড়গপুর শহর। অথচ ঘটনা স্থল থেকে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার! গোটা ঘটনায় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে খড়গপুর শহরের পরিকাঠামো নিয়েই।
জানা গেছে ছোট আয়মার বস্তি এলাকায় মাটির বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গেই রাতে ঘুমিয়ে ছিল ওই শিশুটি। বুধবার রাতভোর ব্যাপক বৃষ্টির কারণে ওই এলাকায় জল জমে প্রায় প্রতিটি মাটির বাড়ি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারই মধ্যে রাতে বাবা-মার সঙ্গে শুয়েছিল ওই শিশুটি। বৃহস্পতিবার ভোর রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়িটি। বাড়ি ভেঙে পড়ার শব্দে ছুটে আসে প্রতিবেশীরা। কোনোও মতে ওদেরকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা। বাবা-মা ওই আঘাত সামলে উঠলেও ঘটনার অভিঘাত সামলাতে পারেনি শিশুটি। তার তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়তে থাকে সে। শিশুটির বাবা-মা বাচ্চাটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করতে থাকে কিন্তু ব্যাপক বৃষ্টির কারণে আয়মা গোটা শহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ওই এলাকায় কোনও গাড়ি ঢুকতে পারেনি তাই শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়নি।
অনেক পরে শিশুটির বাবা মা হেঁটেই শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা হয়। সেখানে যাওয়ার পরই দেখা যায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে। শিশুটিকে ময়নাতদন্তের নামে কাঁটাছেঁড়া করা হবে এমন কথা বলায় তাকে ফেরৎ নিয়ে আসে তার বাবা-মা ফলে কোনও ইউডি বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের হয়নি। স্থানীয় ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সনাতন যাদব জানিয়েছেন, ‘হ্যাঁ এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে শিশুটিকে মৃত বলে ঘোষণার পর তার বাবা-মা নিয়ে আসে। পরে স্থানীয় শশ্মানে তার সৎকার করা হয়েছে।’
যদিও শিশুটি দীর্ঘক্ষণ আহত অবস্থায় পড়েছিল এমন কথা তাঁর জানা নেই বলেই জানিয়েছেন। অবশ্য লাগোয়া ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সনাতন যাদবের ভাই সুরেশ যাদব বলেছেন, ‘হ্যাঁ, এটা ঘটনা কারন প্রবল বৃষ্টিতে সম্পুর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ছোট এবং বড় আয়মা। রামনগরের রাস্তা পুরো জলের তলায়, একই অবস্থা ভুসি গেটের দিকেও তাই কোনও ভাবেই এই এলাকায় গাড়ি ঢোকার মত অবস্থা ছিলনা ফলে দীর্ঘক্ষণ শিশুটিকে হাসপাতালে পাঠানো যায়নি বলেই জানি।’
এদিকে শুক্রবারও গোটা আয়মা বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায় এলাকার মানুষজন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার খড়গপুর স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে এক ভবঘুরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মনে করা হচ্ছে প্রবল বর্ষণে কোথাও ঠাঁই না পেয়েই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। রেল পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। উল্লেখ্য শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টি কমলেও বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনও জল নামেনি বলেই জানা গিয়েছে। ছবি:প্রতীকি