নিজস্ব সংবাদদাতা: বজ্রপাতে হৃৎপিণ্ড স্তব্ধ হয়ে গেল ৯বছরের বালকের আর বালকের সঙ্গি আরেকটি বালক ৭ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা। মারাত্মক ট্রমায় চলে যাওয়া ওই বালককে তড়িঘড়ি নিয়ে আসা হয়েছে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বালককে সুস্থ করার জন্য। রবিবার এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে খড়গপুর গ্রামীন থানার অন্তর্গত গোকুলপুর রেলস্টেশন লাগোয়া একটি গ্রামে। অন্যদিকে এই বজ্রপাতেই খড়গপুর গ্রামীন থানার চড়কাবনী গ্রামে এক দশম শ্রেণীর ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃত বালকটির নাম সেক সফিবুল হোসেন। ৯ বছর বয়সী ওই বালক স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাশ ফোরের ছাত্র। বাড়ি গোকুলপুর স্টেশনের দক্ষিণে পূর্ব আম্বা গ্রাম লাগোয়া দুজিনগরে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে স্থানীয় একটি মসজিদ লাগোয়া মাঠে সফিবুল এবং তার বন্ধুরা ফুট টেনিস খেলছিল। প্রায় ৭জন বালক ছিল ওখানে। দুপুর ২টার কিছু পরে হঠাৎই মেঘ কালো হয়ে বৃষ্টি নামার উপক্রম হয়। এরপর প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে ৫জন ছেলে দৌড়ে মন্দিরের ভেতরে আশ্রয় নেয়। সফিবুল ও তার এক সঙ্গি আশ্রয় নেয় মসজিদ ও মাঠের মধ্যবর্তী একটি গাছের তলায়। সেই সময় একটি বাজ পড়ে ওদের খুব কাছাকাছি। সেই বাজের শব্দে লুটিয়ে পড়ে দু’জনই।
স্থানীয় এক অধিবাসী সেক শাজাহান জানিয়েছেন, ” বৃষ্টির সঙ্গেই পালা করে বাজ পড়ছিল। সেই বাজের শব্দ কখনও কাছে কিংবা দুরে শোনা যাচ্ছিল কিন্তু এই বাজটি আমাদের সবার হৃদপিন্ড কাঁপিয়ে দেয়। খুব সম্ভবত বেলা ২টা বেজে ২০মিনিট নাগাদ এই বাজ পড়েছিল। মুহূর্তে যেন লক্ষ লক্ষ পাওয়ারের বাল্ব জ্বলে উঠল আমাদের গ্রামে। ঘরের ভেতরে থেকেও চোখ ধাঁদিয়ে গেছিল আমাদের। সঙ্গে কান ফাটানো আওয়াজ। আমাদের তখুনি মনে হয়েছিল, কারও সর্বনাশ হয়ে গেলনা তো? সেই সর্বনাশ যে আমাদের ঘরের কাছেই তা বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারলাম যখন চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হয়।”
স্থানীয় তৃনমূল নেতা মজিবুল হুসেন জানিয়েছেন,” আশ্চর্যের বিষয় এই যে বাজ ওদের থেকে বেশ কিছুটা দুরেই পড়েছিল। ওদের শরীরে কোনও আঁচড়ই পড়েনি। আমরা ভেবেছিলাম ছেলে দুটো ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে। ওদের চোখ দুটো বোঝা ছিল, গায়ের তাপমাত্রাও ছিল। আমরা দ্রুত একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে ওদের নিয়ে খড়গপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানেই জানা যায় সফিবুল প্রাণ হারিয়েছে। অন্য বালকটির জ্ঞান ফিরলেও কানে কিছুই শুনতে পাচ্ছেনা। “চিকিৎসকরা মনে করছেন বজ্রপাতের বিকট শব্দেই হার্ট অ্যটাক বা হৃৎপিণ্ডের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় সফিবুলের। এই ধরনের ঘটনা সচরাচর বিরল বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।
অন্য আরেকটি ঘটনায় খড়গপুর গ্রামীনের অর্জুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন চড়কাবনী লাগোয়া খুদমার গ্রামে মৃত্যু হয়েছে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রের। রবিবার দুপুরে ওই মন্টু মাহাতো নামে ১৭ বছরের চড়কাবনী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর এই ছাত্র মাঠ থেকে গরু নিয়ে বাড়ির দিকে ফিরছিল। তখনই বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। তারসাথে একটি গরু মারা যায়। ঘটনার জেরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।