নিজস্ব সংবাদদাতা: জুনের শুরুতে যখন ওরা মাসিক রেশন ব্যবস্থা চালু করেছিল তখন সংখ্যাটা ছিল ৩৫ জন। এখন ৯০। লাল জামা ফেলে রাখা শক্ত কাঁধ গুলো তখন শুকিয়ে কাঠ। গলার কাছ থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসছে হাড়। ততদিনে প্রায় ৭০ দিন হয়ে গেছে ট্রেন না চলার। নগদ পয়সার অভাবে, খাবারের অভাবে ধুঁকছে খড়গপুর স্টেশনের কুলি আর হকাররা।
শুরুটা যত সহজে হয়েছিল চালিয়ে যাওয়াটা তত সহজ হচ্ছেনা বলেই জানাচ্ছেন রকি, প্রীতি, সোমা, তুলিকারা। কারন যে মানুষরা প্রথমে এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন পরে তাদেরও ক্ষমতা কুলায়না।তাই খুঁজতে হয় নতুন নতুন মানুষ, সেটা সময় স্বাপেক্ষ ততদিন কারও পেট অপেক্ষা করেনা। রেশন চালিয়েই যেতে হয়। চালিয়ে যায় ওরা। এবার নিজেরাই বের করে নিয়েছিল রেশনের টাকা, রাখি বিক্রি করেই।
রকি সরকার, আঁকার শিক্ষক। তুলিকা মজুমদার বেরা গৃহবধূ, প্রীতি শেখর একটা ছোট্ট দোকান চালান, সোমা পাত্রের একটা নিজস্ব লড়াই আছে, সুলেখা লোহানি কেউই খুব মারকাটারি জীবন যাপন করেননা। কোভিড ১৯ এঁদেরও পেশায় জোরালো প্রভাব ফেলেছে কিন্তু তা’বলে থেমে থাকেননি কেউ নিজেদের টিকে থাকার পাশাপাশি সেই মানুষগুলিকেও টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন যাঁদের কেউ দেখার নেই।
ট্রেন বন্ধ হওয়ার পর থেকে যাঁদের সংসার বন্ধ হয়ে গেছে। খড়গপুরের একটি বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা এই সংগঠন বর্ন টু হেল্প (Born 2 Help)য়ের মাধ্যমেই চলছে এই পরিষেবা।
“কিছু সাহায্য এসেছে বন্ধু বান্ধব পরিচিত শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে বাকিটা আমাদের কিছু সদস্য নিজের হাতে রাখি বানিয়ে প্রায় ৫হাজার টাকা উপার্জন করেছিলেন সেটা দিয়েই এবারকার মত চালানো গেছে।” জানালেন রকি।
শুধুই রেশন নয়, করোনা পরিস্থিতিতেও চালাতে হচ্ছে গরিব মানুষের জন্য ফ্রী মেডিক্যাল ক্যাম্প, দিতে হচ্ছে ওষুধ। সুন্দরবন এলাকার আম্ফনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবারের হাতে তুলে দিয়েছে খাবার, ত্রিপল ইত্যাদি। কাজটা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে ঠিকই বিশেষ করে আর্থিক সংস্থান কিন্তু তার জন্য থেমে নেই এঁরা। নিত্য নতুন পথ খুঁজেই চলছে বর্ন টু হেল্পের লড়াই। লড়ছেন রকি, তুলিকা, প্রীতি, সোমা,সুলেখারা। রাখির পর এবার কী? খুঁজছেন তাঁরা।