নিজস্ব সংবাদদাতা: পুকুর নয় রাস্তা! একটা আস্ত রাস্তার মধ্যে এক কোমর ঢুকিয়ে মানুষ দেখালেন কী রকম উন্নয়ন হচ্ছে গ্রামে। কেশপুরের গড় সোনাপাতা গ্রামের রাস্তায় এরকমই হতবাক করা দৃশ্য দেখিয়ে টিম প্রশান্ত কিশোরের তৈরি করা একটি দলকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন স্থানীয় গ্রাম বাসীরা। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরে।
তৃনমূল কংগ্রেসকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করানোর ৫০০ কোটির ঠিকাদার অথবা পরামর্শদাতা প্রশান্ত কিশোর নানাবিধ পদ্ধতি প্রকরণ গ্রহন করছেন। কখনও দিদিকে বল তো কখনও বাংলার গর্ব মমতা। সব কর্মসূচীরই একটাই লক্ষ্য, তৃনমূল কংগ্রেস কর্মীদের আরও মানুষের কাছাকাছি যেতে বলা যাতে মানুষের মনের ক্ষোভকে প্রশমিত করে ফের তৃণমূলের পালে হওয়া লাগানো যায়। প্রশান্ত কিশোরের এমনই এক নতুন সংযোজন ‘তপশিলী সংলাপ।’ এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল গ্রামের তপশিলী জাতি উপজাতি মানুষদের কাছে দলেরই একটি গোষ্ঠী যাবেন, তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনবেন, অবস্থার ছবি তুলবেন এবং দলকে ফিরে এসে রিপোর্ট করবেন। ভবিষ্যতে দল সেই অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
এই কর্মসূচীর জন্য একটি গাড়িও ডিজাইন করা হয়েছে। নীল সাদা সেই গাড়িতে আঁকা দলের প্রতীক চিহ্ন। সামনে লেখা তপসিলী সংলাপ। সেই গাড়িকেই ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি গ্রামবাসীরাই ভিডিও করে সেই ভাইরাল ছেড়ে দিয়েছেন নেট দুনিয়ায়। ‘দ্য খড়গপুর পোষ্ট’ ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করেনি। তবে জানা গেছে ভিডিওটি গড়সোনাপাতা যাওয়ার মোরাম রাস্তায়। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওই গাড়িকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বেশ কিছু মহিলা পুরুষ। তাঁরা বলছেন, “প্রশান্ত কিশোরকে কোটি কোটি টাকা না দিয়ে গ্রামে টাকা দিলে গ্রামের অনেক উন্নয়ন হতে পারত।” বলতে বলতেই একটি মানুষ রাস্তায় জল জমে থাকা একটি গর্তে নেমে বসে দেখিয়ে দেন কেমন উন্নয়নের হাল।
উত্তেজিত জনতা জানালেন, “আবাস যোজনার বরাদ্দ পেতে ২০ হাজার, ১৬ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তাঁদের। মিশন বাংলার শৌচালয় পেতে ৮০০ টাকা দিতে হয়।” তাঁরা আরও জানিয়েছেন, ” ১০০দিনের কাজ করিয়ে টাকা দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদ করায় তাঁদের কাজ থেকে বের করে দিয়ে বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে কাজ করানো হয়েছে। ক্ষুব্ধ জনতা সত্তরোর্ধ এক বৃদ্ধকে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে বলেছেন, এখনো এঁর বার্ধক্য ভাতা হয়নি কিন্তু তৃণমূল কর্মীদের বাবা-মা হলে অনায়াসে ভাতা হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ জনতা বলে, “এই সব ছবি তুলে নিয়ে গিয়ে প্রশান্ত কিশোর আর মমতাকে দেখান।”
প্রথম দিকে দলটিকে এলাকা ছেড়ে যেতে দেওয়া হবেনা বলে জানিয়ে দেন জনতা। দলটি জানায় তাঁরা এই সমস্ত অভিযোগই শুনতে এসেছেন। কিন্তু পাল্টা জনতা জানিয়ে দেন সামনে ভোট আসছে তাই এসব চালাকি শুরু হয়েছে। জনতা কথাই বলতে রাজি হয়নি। পরে তাঁদের অভাব অভিযোগ শুনে, রাস্তার ছবি তুলে বিষয়টি যথাযথ জায়গায় জানানো হবে বলে কোনও রকমে এলাকা ছাড়েন তাঁরা। উত্তেজিত জনতা নামও করেছেন এক পঞ্চায়েতে সদস্যর। শুকদেব দোলাই নামে তৃণমূলের ওই পঞ্চায়েত সদস্য নাকি ভোট না দিলে তাঁদের আঙুল কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। জনতার আরও অভিযোগ, পুলিশ দিয়ে ভোট করে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছে।