নিজস্ব সংবাদদাতা: এত বোমা এক সাথে কখনও উদ্ধার করেছেন কিনা ভাবতে পারছেননা সিআইডি বোম্ব স্কোয়াডের এক সদস্য। অন্তত সাম্প্রতিক অতীতে নয়। কত বোমা? পুলিশ বলছে ৯৮ টি! স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন প্লাস্টিকের বড় পাত্র যাতে ১৫লিটার জল ধরে সেরকম ৬টি ডাব্বা ছিল। দামোদরচক, কেশপুরের যে গ্রামে বৃহস্পতিবার রাতে তৃণমূলের ২টি গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এক কিশোর ছাত্র সহ ২জনের মৃত্যু হয়েছিল সেই তিনশ বাড়ির গ্রামের অর্ধেক উড়িয়ে দেওয়া যেত এই বোমায়!
এত বোম ছিল যে রবিবার সকালে মোট তিন দফায় বিস্ফোরন ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করতে হয়েছে বোমাগুলি। ” কত পিস বোমা উদ্ধার হল তার চেয়েও বড় কথা বোমার গুনমান কী রকম ছিল? যদি এক সাথে বোমা গুলি নিষ্ক্রিয় করা হত তবে তার অভিঘাত হত মারাত্মক। যখন কয়েক দফায় বোম নিষ্ক্রিয় করা হয় তখন বুঝে নিন কী পরিমাণ বিস্ফোরক ছিল!” জানালেন ওই সদস্য।
কেশপুর থানা থেকে দেড় কিলোমিটার দুরে উত্তর কেশপুরের ফাঁকা মাঠে একটি পুকুরের পাশে ফাটানো হয়েছে বোমাগুলি। যার আওয়াজে কেঁপে উঠেছে জগন্নাথপুর, বিকলচক, টাঙাগেড়া, বিবেকপুর, সরুই, রনপাড়া, দোগাছিয়া সহ তিন থেকে চার কিলোমিটার দুরের গ্রাম। আর এতেই বোঝা গেছে বিস্ফোরণের তীব্রতা কি পরিমান ছিল।
যদিও কেশপুরের মানুষের বক্তব্য এটা এমন কিছুই নয়, পুরো কেশপুরই বোমার গর্ভে বসে রয়েছে। যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারনে ২জনের মৃত্যু হয়েছে সেই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণেই নাকি এরকমই কেশপুরের গ্রামে গ্রামে মজুত রয়েছে বোমা, আত্মরক্ষার মহান অধিকারে।
রবিবার সকাল থেকেই দামোদরচকের কয়েকটি ঘরে পুলিশ আর সিআইডি তল্লাশি চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতের সংঘর্ষে জড়িত দুই পক্ষের মাত্র ৩টি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে এই বোমা। অভিযুক্তরা বাড়িতে কেউ ছিলনা। হয় গ্রেপ্তার হয়েছে না হয় পলাতক। পুলিশ এখনও অবধি ১৫জনকে গ্রেপ্তার করেছে দু’পক্ষের। তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যদিও মূল অভিযুক্ত এক্তার এখনও অধরা।
বোমা গুলি উদ্ধারের পর পুলিশ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে জলে ভিজিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশের কনভয়, দমকল এবং সিআইডির দলটি অত্যন্ত ঢিমেতালে প্রায় ১০কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা গতিবেগে যায় নিষ্ক্রিয়করনের মাঠের দিকে। রাস্তার খানাখন্দ, বাম্প সযত্নে এড়িয়ে গাড়ি চালিয়েছে চালক। তারপর বিস্ফোরক নিরোধক পোশাক পরে দফায় দফায় নিষ্ক্রিয়করন।
৯৮ টা বোমা নিষ্ক্রিয় করে পুলিশের কতটা স্বস্তি তা জানা নেই তবে স্বস্তি নেই কেশপুরের। সামনে বিধানসভা নির্বাচন তাই কেশপুরের রাজনীতি বোমাতেই হাত সেঁকবে এটা কেশপুরের জানা। বোমা নিস্ক্রিয়করনের আওয়াজ তাই হাড়ে কাঁপন ধরাচ্ছে কেশপুরবাসীর। কেশপুরের গ্রামে গ্রামে নাকি বোমার চাষ শুরু হয়ে গেছে। আমনের চারার মত আপাতত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জল সিঞ্চনে সে বোমা বাড়ছে। এরপর নির্বাচন কাছে এলে বিপক্ষের হাতেও বোমা যাবে। বোমা থেকে কেশপুরের মুক্তি কোথায়?