নিজস্ব সংবাদদাতা: নির্মম ও অমানবিক পুলিশি অত্যাচারের স্বাক্ষী থাকলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ী থানার কিয়ারচাঁদ নামক একটি গ্রামের মানুষ। ফল বোঝাই একটি গাড়ি উল্টে আহত হওয়া দুই ব্যক্তিদের বেধড়ক লাঠি পেটা করতে দেখা গেল দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার ও এক পুলিশ কনস্টেবলকে।শনিবার দুপুরের এই ঘটনা নিমেষে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আর মোবাইল বন্দি সেই ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে গেছেন মানুষ। গাড়ি উল্টে তখনও জ্ঞান হীন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন গাড়ির চালক। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে তার দুই সঙ্গীকে বেধড়ক লাঠি পেটা করছে পুলিশ। পুলিশের লাঠির আঘাতে এক যুবকের গাল ফেটে যেতেও দেখা গেছে।
পুলিশের মারে আহত ওই যুবক রাজীব অধিকারী জানিয়েছেন, ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানার কেশিয়াপাতা বাজারে ফলের দোকান রয়েছে। ফল কেনার উদ্দেশ্য নিয়েই তারা কেশিয়াড়ী গিয়েছিল। দুপুরেন কেশিয়াড়ী থেকে আম নিয়ে ফিরছিল কেশিয়াপাতাতে। একটি ছোট টাটা এস গাড়িতে চালক ছাড়াও ছিলেন রাজীব অধিকারী ও শুভ হুই। ওই সময় কেশিয়াড়ি থানা এলাকার কিয়ারচাঁদ এলাকায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল ও সিভিক ভলেন্টিয়াররা তাদের পথ আটকে টাকা চায় বলে অভিযোগ। রাজীব ও শুভ জানায় ফল কিনে নেওয়ায় তাঁদের কাছে আর টাকা নেই। এরপরই অভিযুক্ত কনস্টেবল জানায়, টাকা না দিলে তাঁদের মূল সড়ক ধরে যেতে দেওয়া হবেনা কারন মূল সড়কে গাড়ি চালানোর আইন নেই লকডাউনের জন্য।
রাজীব বলেন, ” এরপরই আমরা গ্রামীন একটি সড়ক ধরি। কিন্তু তারপরেও বাইক নিয়ে আমাদের পেছনে ধাওয়া করে ওই তিনজন। গাড়ির চালক ভয় পেয়ে দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকে। তার লক্ষ্য ছিল কোনও ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়া। পেছনে পেছনে অশ্রাব্য গালিগালাজ করতে করতে বাইক ছোটাচ্ছিল সিভিক ভল্যান্টিয়ার এবং এক কনস্টেবল। তারা চিৎকার করে গ্রামের লোকেদেরও আমাদের গাড়ি আটকানোর জন্য বলে। ফলে চালক এবং আমরা আরও ঘাবড়ে যাই। এরপরই গ্রামের এবড়ো খেবড়ো রাস্তায় নিয়ন্ত্রন না রাখতে পেরে গাড়িটি উল্টে যায়। চালক জ্ঞান হারায়। আমরাও পড়ে গেছিলাম। আমরা ২জন যখন মাটি থেকে ওঠার চেষ্টা করছি তখন লাঠি নিয়ে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওই তিনজন। অমানুষের মত লাঠি পেটা করতে থাকে আমাদের। ওদের একটাই রাগ, আমরা কেন তোলা দেইনি।”
মারের চোটে রাজীবের বাঁদিকের গাল কেটে বসে গেছে, রক্তাক্ত হয়েছে সে। অন্যদিকে শুভকে বেধড়ক পেটানোর পর তাকে পুলিশের পায়ে ধরে ক্ষমা চাওয়াতেও দেখা গিয়েছে। গোটা ঘটনার ভিডিও মোবাইল বন্দি করে রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। তাঁরাই দাবি করেছেন লকডাউন পর্বেও এভাবেই তোলা আদায় হচ্ছে। ঘটনার পর গ্রামের স্থানীয় কিছু বাসিন্দারাই পড়ে থাকা ফলগুলি ঝুড়িতে তুলে দেয়। তাঁদেরই উদ্যোগে কেশিয়াপাতা হাসপাতালে পাঠানো হয় চালককে। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন তিনি।
ঘটনা যদি সত্যি হয় তবে এই ঘটনাকে মারাত্মক বলে জানিয়ে খড়গপুর মহকুমার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, “এভাবে মারধর করা অন্যায়। যদি এই ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।” এদিকে রাতেই এই খবর এসে পৌঁছেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তরে। পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, অত্যন্ত গর্হিত কাজ। তিনজনকেই ক্লোজ করার জন্য কেশিয়াড়ী থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জকে বলা হয়েছে। ওঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হচ্ছে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”