নিজস্ব সংবাদদাতা: আশঙ্কা সত্যি হল, করোনা পজিটিভ ধরা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুর কেশিয়াড়ীর ব্লক ডেভলপমেন্ট আধিকারিক সৌগত রায়। বুধবারই জ্বর, গলা ব্যথা নিয়ে কলকাতা থেকে ফিরেছিলেন ৪৩ বছরের আধিকারিক। ফিরে এতটাই অসুস্থ হয়েছিলেন যে অফিস না করেই কোয়ার্টারে থেকে যান। এরপরই চূড়ান্ত উপসর্গ দেখা দেওয়ায় বেলদা গ্রামীন হাসপাতালে নমুনা দেন তিনি রবিবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি ল্যাবে ওই নমুনা পরীক্ষার পর করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
গোটা ঘটনায় উদ্বিগ্নতা ছড়িয়েছে বিডিও অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে। সোমবার অফিসে না আসার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে জরুরি পরিষেবা ছাড়া সমস্ত কর্মীদের।
এদিকে বিডিওর অবিমৃশ্যকারিতায় অসন্তুষ্ট অফিসের কর্মচারীদের বেশিরভাগই। উপসর্গ থাকা স্বত্ত্বেও কেন তিনি কলকাতার মত সংক্রমন প্রবন এলাকা থেকে অফিসে এলেন তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
জানা গেছে বিডিওর স্ত্রীর কিছুদিন আগেই কলকাতার একটি নার্সিং হোমে গলব্লাডার স্টোন অপারেশন হয়। সেই সময় কলকাতাতেই ছিলেন বিডিও। নিয়মমত নার্সিংহোমে যাতায়ত করেছেন। ওই সময় দীর্ঘ ছুটিতেও ছিলেন তিনি। অপারেশন শেষ হওয়ার পর স্ত্রী বাড়িতে ফেরার পরই তিনি বুধবার কেশিয়াড়ীতে চলে আসেন। উল্লেখ্য মাত্র তিনেক আগেই দ্বিতীয় সন্তানের পিতা হয়েছেন বিডিও। তার পর পরই এই অপারেশন হয় তাঁর স্ত্রীর।
যদিও একটি তরফে জানানো হয়েছে বিডিও কেশিয়াড়ী ফিরলেও তিনি যেহেতু অফিস করেননি তাই কর্মচারীদের আশঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সূত্র বলছে বাড়িতে নবজাতক থাকার কারনেই মা ও শিশুদের নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই কলকাতা ছেড়ে আসেন তিনি। পাশাপাশি বেশ কিছু ফাইলে সই করাও জরুরি ছিল। প্রশাসনের তরফে বিডিওকে হাসপাতালে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য সৌগত রায় হলেন জেলার দ্বিতীয় বিডিও যিনি করোনায় আক্রান্ত হলেন এর ৩৬ ঘন্টা আগেই চন্দ্রকোনা ১ বিডিও অভিষেক মিশ্র আক্রান্ত হয়ে শালবনী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
অন্যদিকে পরপর ২টি ঘটনায় যথেষ্টই আতঙ্কে রয়েছেন কেশিয়াড়ীর বাসিন্দারা। বুধবারই নতুন বদলি হয়ে আসা কমিউনিটি হেলথ অফিসার শ্রাবনী জানা কাজে যোগ দেওয়ার পরেই খবর আসে তিনি করোনা পজিটিভ। মেদিনীপুর থেকে বদলি হয়ে আসার আগেই তিনি উপসর্গ থাকায় নমুনা দিয়ে এসেছিলেন। অনেকেই মনে করছেন ফলাফল না আসা অবধি তার নতুন কাজের ক্ষেত্রে যোগ দেওয়া উচিৎ হয়নি। তিনি তা না করে শুধু হাসপাতাল নয়, এলাকারই বাসিন্দা হওয়ার সুযোগ ঘুরে বেড়িয়েছেন বাজার ঘাট সমস্ত জায়গায়। রাতেই খবর আসে তিনি পজিটিভ ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সর্বত্র। আতঙ্কের মুখে স্বাস্থ্য কর্মীরাও।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকরা যাঁরা কিনা করোনা যুদ্ধে জনগনকে সচেতন হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন তাঁরা নিজেরাই যদি এই ধরনের কাজ করেন যেখানে তাঁদের হাত ধরে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার সম্ভবনা তৈরি হয় তবে করোনা যুদ্ধের হবেটা কী?
রবিবারই বেলদা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বিদ্যাসাগরপল্লীতে ৪৪বছরের এক ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে। অসমর্থিত একটি সূত্র বলছে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ওই ব্যক্তির স্ত্রী একজন স্বাস্থ্য কর্মী। তিনি যে অঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবায় নিযুক্ত সেই সূত্রেই সন্ক্রমনের সম্ভবনা আছে কিনা খোঁজ করা হচ্ছে।
এদিকে পার্শ্ববর্তী ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রামের খড়িকামাথানি সংলগ্ন গ্রাম রাঙিয়ামে এক ২৬ বছরের যুবতীর করোনা পজিটিভ হয়েছে ধরা পড়েছে যিনি বেলদা হাসপাতালেই নমুনা দিয়েছিলেন।