নিজস্ব সংবাদদাতা:একবার নয়, দু’বার কাজ হারিয়েছেন লকডাউনে। তারপরেও চেষ্টা চালিয়েছিলেন কাজে ফেরার কিন্তু বারবার জবাব এসেছে লকডাউনের জন্য বন্ধ হয়ে আছে একের পর এক কারখানা। তাই ফেরা হয়নি কাজে। আর অবশ্য ফেরার দরকার নেই। শুক্রবার গলায় দড়ি দিয়ে না ফেরার দেশেই চলে গেলেন ১৯বছরের তরুণ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত শাকমাল গ্রামের হতদরিদ্র দিন মজুর পরিবারের বড় সন্তানের এই পরিনতিতে ভেঙে পড়েছে গোটা পরিবার। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মৃত ওই তরুণের নাম সুব্রত সিং। বয়স ১৯ বছর। ভূমিহীন ক্ষেতমজুর পরিবারের সন্তান সুব্রত ক্লাশ ফাইভেই পড়া ছেড়ে দিয়েছিল বা বলা যেতে পারে ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। এরপর বাবার সঙ্গেই টুকটাক কাজ করত। মাত্র সাড়ে ১৬বছর বয়সে ঠিকাদারের হাত ধরে গুজরাট পাড়ি দেয় সে। কয়েকমাস কাজ করার পর প্রথম দফার লকডাউন শুরু হয় দেশ জুড়ে। ফিরে আসতে বাধ্য হয়।
এরপর আনলক ইন্ডিয়া পর্বে ফের গুজরাট ফিরে যায় সে। কিন্ত করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আলাদা আলাদা করে রাজ্যগুলিতে লকডাউন শুরু হলে ফের ফিরে আসতে হয় সুব্রতকে। তারপর থেকে আর কাজে ফেরা হয়নি। যদিও পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা বুঝে উঠতেই পারছেননা কেন এমনটা হল। উঠতি বয়সের ছেলেপুলেদের মত যে তার কোনও প্রেমঘটিত ব্যাপার ছিল এমনটাও জানা নেই পরিবারের। পরিবারের তরফে শুধু বলা হয়েছে, আত্মহত্যার কারন তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেননা ঠিকই কিন্তু এটা ঘটনা যে কাজে ফিরে যাওয়ার খুবই ব্যগ্র হয়ে উঠেছিল। বারবার ঠিকাদারকে ফোন করত কোথাও একটা কাজের ব্যাবস্থা করতে। কিন্তু ও প্রান্ত থেকে জবাব আসত, সব কল কারখানা বন্ধ। লকডাউন না ওঠা অবধি কাজের সুযোগ নেই।
পরিবারের লোকেরা জানিয়েছে যে ঠিকাদারের হাত ধরে সুব্রত কাজে যোগ দিয়েছিলেন তাকে বারবার ফোন করত কোথাও একটা কাজে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ঠিকাদার জানাতো কারখানা খোলেনি এখনও। বেশ কিছুদিন ধরেই একটু যেন মুষড়ে পড়েছিল সে। শুক্রবার দুপুরেও খাওয়া দাওয়া করেছে চুপচাপ। এরপর যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সুব্রতর কাকিমা কোনও একটা কাজে সুব্রতর ঘরে গিয়ে দেখে কড়ি থেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে সে। এরপরই তাকে নিকটবর্তী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। বাবা-মা ছাড়াও তার একটি ছোট ভাই রয়েছে।