অশ্লেষা চৌধুরী: ফের প্রকাশ্যে ঘাসফুল শিবিরের গোষ্ঠী কোন্দল, দলের শীর্ষ নেতৃত্বে ডাক প্রত্যাখ্যান বিধায়কের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ছাড়া কাউকেই নিজের সমস্যার কথা জানাবেন না বলেই স্পষ্ট জানালেন বিধায়ক।
কিছুদিন থেকেই শাসকদলের অন্দরে বেশ কয়েকজন বেসুরো বাজতে শুরু করেছেন, সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছেন আসানসোলের মেয়র তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারিও। দু’দিন আগেই রাজনৈতিক কারণে আসানসোল পুরসভাকে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে একটি চিঠি লিখেছিলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তিনি লেখেন, কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের ২০০০ কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে আসানসোল। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের টাকাও তাঁরা পায়নি বলেই অভিযোগ। তাঁর কথায়, রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্রের একাধিক প্রকল্পের টাকা নিয়ে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছে। যার জেরে আদতে ক্ষতি হয়েছে আসানসোলের। তারপরেই রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে রানিগঞ্জ গার্লস কলেজ ও রানিগঞ্জ টিডিবি কলেজের গভর্নিং বডি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি।
তবে, জিতেন্দ্রর চিঠির পরিবর্তে তাঁকে পাল্টা দিয়েছেন পুরমন্ত্রী। স্মার্ট সিটি হিসেবে আসানসোলের নাম নেই বলেই দাবী করেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি জানিয়েছেন চারটি শহরের নাম রয়েছে স্মার্ট সিটি হিসেবে। নিউটাউন, বিধান নগর, হলদিয়া, দুর্গাপুর। তাহলে কেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি দাবী করছেন স্মার্ট সিটি হিসেবে আসানসোলের নাম রয়েছে। তবে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে গ্রীন সিটি অনেকগুলোই করা হয়েছে। তারপরেও জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে আসানসোলের জন্য বেশ কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি মন্তব্য করেছেন ইতিমধ্যে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে তিনি ফোন করেছেন, তবে জিতেন্দ্র তিওয়ারি ফোন রিসিভ করেননি। তবে তিনি আশা করেন যে তিওয়ারি অবশ্যই ফোন করবেন। তবে এসবের মধ্যে ফিরহাদ বিজেপির ষড়যন্ত্রের গন্ধই পান, কারণ জিতেন্দ্রর পাঠানো চিঠি ফিরহাদের কাছে সোমবার সকালবেলা ৯টা ১৫ নাগাদ পৌঁছায়। কিন্তু মিডিয়ার কাছে চিঠি রবিবার রাতেই ফাঁস করে দেন বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।
গন্ডগোলটা হয় সেখানেই, জিতেন্দ্রর চিঠিই ফের ট্যুইট করে তৃণমূলকে নিশানা করেন অমিত মালব্য, তা মোটেই ভালভাবে নেয়নি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই কথা বলার জন্য জিতেন্দ্রকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে আলোচনার জন্য তাঁকে মঙ্গলবার ডেকে পাঠিয়েছিল দল। কথা ছিল, পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে বৈঠক হবে। কিন্তু সেই ডাকে সাড়া দিলেন না তিনি। মঙ্গলবার সকালেই তিনি জানিয়ে দিলেন, বৈঠকের বিশেষ দরকার নেই, যা সমস্যা তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন। তাঁর কাছে সময় চেয়েছেন।
এ বিষয়ে জিতেন্দ্র তিওয়ারি সাংবাদিকদের বলেন, ”মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে সোমবার রাতে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ১৮ তারিখ ৫ মিনিটের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সময় দিতে পারেন। সেখানেই আমি যেন কথা বলি।” এরপরেই তিনি বলেন, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি সরাসরি সমস্যার কথা জানাতে পারবেন , সেখানে ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে ওই বৈঠকের কোনও প্রয়োজন নেই।
তবে এই বিতর্কের মাঝেও এসব গুরুত্ব না দিয়ে জিতেন্দ্র তিওয়ারি এদিনও দলীয় কর্মসূচি ও সরকারি কাজ স্বাভাবিকভাবেই করে চলেছেন। মঙ্গলবারও তিনি আসানসোল পুরনিগমে নিজের দপ্তরে বসে প্রয়োজনীয় কাজকর্ম করলেন। সাহায্যপ্রার্থীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন, সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। তবে দলের প্রতি যে তিনি খানিক ক্ষুব্ধ, তা চেপে রাখলেন না। স্পষ্টই বারবার জানালেন, সমস্যা নিয়ে শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই কথা বলতে চান।