নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সর্বাধিক আক্রান্ত হতে পারে শিশুরাই এবং মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ১৮ বছরের নিচেই ধরে নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করে দিল ঝাড়খন্ড সরকার। শুধু তাই নয় এই লড়াইয়ের কৌশল হিসেবে একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে ফেলেছে তারা যাকে বলা হচ্ছে ‘Manual for Preparation, Prevention and Planning for Covid-19 third wave in Jharkhand: The way forward’ বা করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য প্রস্তুতি, প্রতিরোধ, পরিকল্পনার জন্য নির্দেশিকা। এই নির্দেশিকায় রাজ্যের ১৪লক্ষ শিশু-কিশোরদের জন্য স্বাস্থ্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় অন্ততঃ একটি করে ২০শয্যার শিশু আইসিইউ (Paediatric ICU) সমন্বিত ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের সমস্ত পুষ্টিকরন কেন্দ্রগুলিকে হাই ডিপেন্ডেসি ইউনিটে (HDU) রূপান্তরিত করার কথা বলা হয়েছে যেখানে শিশুদের পুষ্টিকরনের সাথেই চলবে করোনার চিকিৎসা। ওই কেন্দ্রগুলোর দেওয়াল সাজাতে বলা হয়েছে শিশুদের উপযোগী চিত্রকলা, কার্টুন ইত্যাদি দিয়ে। ওই নির্দেশিকায় করোনার বিরুদ্ধে লড়াই যে মানবসম্পদের ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করার পাশাপাশি শিশুদের উপযোগী পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত করার কথাও বলা হয়েছে।
এই নির্দেশিকাটি তৈরি হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলার জন্য গঠিত রাজ্যের ৫সদস্যের কমিটির তত্ত্বাবধানে যাদের সাহায্য করেছেন ১৪জন বিশেষজ্ঞ
চিকিৎসক। পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ভারত বিষয়ক উপদেষ্টা ডাঃ রেডরিকো অফরিন, দিল্লি এইমসের (AIIMS) শিশু বিভাগীয় প্রধান ডাঃ অশোক দেওরারি, মেদানতার ডিরেক্টর ডাঃ নীলাম মোহন এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ ও নিউরোসায়েন্সের (NIMHANS) মহামারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রদীপ বি.এস।
এই নির্দেশিকায় রাজ্যের ১৮ বছরের নিচে থাকা ১কোটি ৪৩লক্ষ শিশু-কিশোরদের সর্বাধিক ১০শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৫শতাংশ আক্রান্ত হতে পারে ধরে নিয়ে ৯ হাজার ৪০টি অক্সিজেন সমন্বিত শয্যা, ১হাজার ৪টি এইচডিইউ শয্যা এবং ২ হাজার ৯ টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য এই মুহুর্তে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি, ধানবাদ ও জামসেদপুরের সরকারি হাসপাতালে সদ্যজাতদের জন্য ৩৯টি ও শিশু-কিশোরদের জন্য মাত্র ২০টি আইসিইউ আছে বলে জানা গেছে।
রাজ্যের করোনা মোকাবিলা সংক্রান্ত প্যানেলের ভাইস চেয়ারম্যান ভুবনেশ প্রতাপ সিং বলেছেন, ” যেসব আক্রান্ত শিশু-কিশোরদের হাসপাতালে আনার প্রয়োজন হবেনা তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়ার জন্য টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থাপনাকে জোরদার করা হবে যাতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ সেই সুবিধা পেতে পারেন। মোবাইল বা অন্যান্য গেজেট মারফৎ সরকারি পরিষেবা দেওয়া হবে। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এ অবধি রাজ্যে ১৪বছরের নিচে করোনা আক্রান্ত হয়েছে এমন সংখ্যাটা ৯ হাজার। এরমধ্যে কিছু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বয়স্ক মানুষদের তুলনায় যা কম। এখন যেহেতু বয়স্কদের মধ্যে টিকাকরন হয়ে যাচ্ছে তাই এবার আক্রান্তের দিক পরিবর্তন হয়ে কমবয়সীদের দিকে যেতে পারে। কিছু কিছু জেলায় সেরকম লক্ষণ পাওয়া গেছে যা বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
“করোনার তৃতীয় ঢেউ হয়ত সাইক্লোনের মতই আছড়ে পড়তে পারে আমরা সেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের পরিকাঠামো উন্নত ও পরিবর্তন করে যাব। হয়ত প্রতিটি জেলায় ২০টি করে শিশু আইসিইউ দরকার নাও হতে পারে সেক্ষেত্রে সেগুলিকে প্রবীণদের জন্য ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করব কিন্তু এখন আমরা প্রতিটি জেলাকেই এই প্রস্তুতি নিতে বলেছি।” জানালেন ঝাড়খণ্ডের এক স্বাস্থ্যকর্তা। রাজ্যের কোভিড মোকাবিলা সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ শান্তনু অগ্রহারি জানালেন, ” দেশে এই প্রথম কোনও কোভিড ম্যানুয়েল তৈরি হল যা পরিস্কার এবং কার্যকরী নির্দেশিকা দিতে সক্ষম। বিভিন্ন বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে তৈরি করা নেই নির্দেশিকায়
আমরা বিশেষকরে শিশুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দিকে জোর দিয়েছি। এখানে সরকারি এবং বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রেই সমন্বয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।”
পূর্বেই বলা হয়েছে শিশু হাসপাতাল গুলিকে এমনভাবে সাজাতে বলা হয়েছে যা শিশুদের কাছে আকর্ষণীয়, মনোগ্রাহী এবং ভালোলাগার হয়ে ওঠে। ছবি, চিত্রকলা, মডেল ইত্যাদি নানারকম ভাবে সুসজ্জিত করা হবে হাসপাতালগুলিকে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নবজাতক থেকে শুরু করে ৬মাস বয়স অবধি আক্রান্তরা কেবলমাত্র মায়ের দুধই খাবে। জল, গরুর দুধ বা অন্য কোনও তরল নয়। কারন মায়ের দুধই শিশুকে কোভিড প্রতিরক্ষা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে শিশুর সাথে মায়েরও থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যদি মা কিংবা শিশুর অতিরিক্ত অসুস্থার কারনে পাশাপাশি থাকার পরিসর না থাকে তবে একজন নার্স অথবা পরিবারের আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তি মায়ের দুধ সংগ্ৰহ করে শিশুকে খাওয়াবেন।