নিজস্ব সংবাদদাতা: ঝাড়গ্রাম: মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ খেলার মাঠের পাশেই লুটিয়ে পড়েছিলেন তকবীর আলি। বুধবার দুপুর ১টার সময় শুয়ে আছেন ঝাড়গ্রাম শহরের লাশকাটা ঘরে! প্রকাশ্য দিবালোকে পিস্তল ঠেকিয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে খুন! অভিযুক্ত আর কেউ নয় একজন NVF কর্মী, প্রায় পুলিশেরই সমান। সরকার যাকে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেয় জনগনের নিরাপত্তা সহ নানা কাজে। সকলের চোখের সামনে খুন করে দিয়ে পালিয়ে গেল। এত নেট ওয়ার্ক পুলিশের, এত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অথচ ধরা পড়েনি অভিযুক্ত। তাই ক্ষোভে বিক্ষোভে ফেটে পড়ল ঝাড়গ্রাম।
বুধবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত হল ঝাড়গ্রাম। অভিযুক্ত কে এখনও গ্রেপ্তার করা গেলনা কেন এই প্রশ্ন তুলে এদিন সকাল থেকেই ঝাড়গ্রাম শহর লাগোয়া রাধানগর মোড়ে ঝাড়গ্রাম মেদিনীপুর রাস্তায় অবরোধ শুরু করে নিহত তকবীর আলীর আত্মীয় পরিজনেরা। সঙ্গে সামিল হয় স্থানীয় বাসিন্দারাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী । অবরোধের জেরে আটকে পড়ে বহু যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ি ।
বিক্ষোভকারীরা এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, ঘটনার সময় খুব সামনেই ছিলেন সিভিক ভলেনটিয়রা। তাদের সামনেই কী করে ঘটনাটি ঘটে গেল আর কী করেই বা তকবীরকে খুন করে পালিয়ে গেল? জনতার দাবি অভিযুক্ত যুবক পুলিশে কর্মরত বলেই তাকে ধরতে গড়িমসি করছে পুলিশ। জনতার দাবি, সামান্য অপরাধ কিংবা বিনা অপরাধেই পুলিশ এতটাই তৎপর হয়ে ওঠে যে মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যায় অথচ খুনের মত মারাত্মক অপরাধের পরেও পুলিশ নীরব কেন? শ্লোগান সাউটিং করার সময় জনতার একাংশ এই ঘটনায় পুলিশ সুপারের পদত্যাগও দাবি করেন।
গতকাল দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ ঝাড়গ্রামের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাছুরডোবা এলাকায় একটি ক্রিকেট খেলা দেখতে এসে দর্শক আসনে থাকা রাধানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা ২৮ বছরের যুবক তকবির আলী । অভিযোগ তকবির কে দুটো হাতে দুটি পিস্তল বের করে গুলি করে বাছুরডোবা এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ প্রধান নামে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে কর্তব্যরত এক এনভিএফ কর্মী । তকবীরের কপালে একটি গুলি লাগে, অপরটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তাকে উদ্ধার করে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাঁকে কলকাতা স্থানতর করা হয় ।
ঝাড়গ্রাম থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পথে রাস্তায় মৃত্যু হয় তকবির এর । সেই মৃত্যুর খবর রটতেই রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল ঝাড়গ্রামের বাছুরডোবা এলাকা । তকবির এর পরিবার লোকজন বিশ্বজিৎ এর বাড়ী ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠে । ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিশাল পুলিশবাহিনী ও দমকল বাহিনী । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ । কিন্তু ২৪ঘন্টা পরেও অপরাধী ধরা না পড়ায় আজ ফের বিক্ষোভে ফেটে পড়ে জনতা।
।ঝাড়গ্রামের শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা দফায় দফায় আলোচনা চালায় অবরোধকারীদের সাথে। জানা গেছে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে পুলিশ আশ্বস্ত করার পর বেলা ৩টা নাগাদ অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় জনতা। বুধবার ময়নাতদন্তের পর নিজের গ্রামে সমাহিত করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে তকবীরের দেহ। উত্তেজনা এড়াতে মোতায়েন রয়েছে পুলিশ।