নিজস্ব সংবাদদাতা: ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার পর তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি ফিরব। অনেক গল্প এখনও বলার আছে।’ ফিরেও ছিলেন তিনি। তাঁর প্রিয় দর্শকদের গল্প বলার জন্য। সেভাবেই তো ফিরে অভিনয় করেছিলেন তাঁর শেষ ছবি, আংরেজি মিডিয়াম। এই ছবির প্রোমোশন করতে পারেননি তিনি। ট্রেলর রিলিজের সময় এক আবেগঘন বার্তা দিয়েছিলেন অভিনেতা। ইরফান বলেছিলেন, “বন্ধুরা আমি ইরফান। আজ আপনাদের সঙ্গে নেই, আবার আছিও। বিশ্বাস করুন যতটা ভালবাসা দিয়ে এই ছবিতে কাজ ঠিক ততটাই ভালবেসে ছবির প্রোমোশন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শরীরে এক অতিথি বাসা বেঁধেছে যাকে একদম চাইনি। অগত্যা উপায় কী।” একদম শেষে খানিক থেমে ইরফানকে বলতে শোনা গিয়েছিল “অবশ্যই আমার জন্য অপেক্ষা করুন।” সেই অপেক্ষা আর শেষ হল না দর্শকদের। মঙ্গলবার আচমকা শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে মুম্বইয়ের কোকিলাবেন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি, মাত্র ৫৩ বছর বয়সে।
সংবাদসংস্থা এএনআই জানিয়েছে, এই মুহূর্তে হাসপাতালে রয়েছেন অভিনেতার স্ত্রী সুতপা শিকদার ও তাঁর দুই ছেলে। অভিনেতার মুখপাত্র তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।দু’দিন আগেই জয়পুরে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। ৯৫ বছর বয়সে অসুস্থ অবস্থায় চলে যান তাঁর মা। নিজে অসুস্থ বলেই থাকতে পারেননি মায়ের শেষ যাত্রায়। এরপর তাঁর মহাপ্রয়ান। ইহলোক ত্যাগ করলেন ইরফান।
২০১৮ সালের মার্চ স্তব্ধ বলিউড আর তাঁর অগনিত ভক্তরা জানতে পারেন ইরফানের অসুস্থতার খবর। অভিনেতা নিজেই জানিয়েছিলেন বিরল এবং জটিল রোগ নিউরোইন্ডক্রিন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এরপর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডনে পাড়ি দেন ইরফান। এরপর ২০১৯-এর ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফেরেন ইরফান।
অভিনয় করেন শেষ ছবিতে।
সেই ছবি মুক্তি পাওয়ার সময়ও তাঁকে কোথাও দেখা যায়নি। অভিনেতার সুস্থতা কামনা করেছিলেন তাঁর অগণিত ভক্ত। পিকু ছবির ডিরেক্টর সুজিত সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল অভিনেতার। তিনি এদিন ট্যুইট করে ইরফানের চলে যাওয়ার খবর জানান। তিনি লেখেন, ‘ইরফান তুমি অনেক লড়াই করেছ। তোমার জন্য গর্ব হয়। আবার তোমার সঙ্গে দেখা হবে। সুতপা, বাবলি তোমরাও অনেক লড়েছ। তোমাদের সমবেদনা জানাই।’ সংবাদমাধ্যমকে সুজিত জানিয়েছেন, ”অনেকবারই এমনটা হয়েছে যে ইরফান খুবই অসুস্থ, সংকট আর বোধহয় কাটবেনা কিন্তু শেষ অবধি ফিরে এসেছে সে। শেষ তিন চার মাস মনে হচ্ছিল, যুদ্ধটা জিতেই গেছে সে কিন্তু তা আর হলনা।”
বিল্লু দ্য বারবার, পিকু, তলওয়ার, লাঞ্চ বক্সের মত ছবিতে তাঁর অভিনয় দক্ষতা মনে রাখার মত। শুধু বলিউড নয়, হলিউডেও দক্ষতার ছাপ রেখেছেন তিনি। লাইফ অফ পাই, জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের মত ছবিতেও দেখা গিয়েছে অভিনেতাকে।
মঙ্গলবার হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পরেই ছড়িয়ে যায় মারা গিয়েছেন ইরফান। যেমনটা আরও কয়েকবার হয়েছিল। যদিও সেই সময় তাঁর মুখপাত্রের তরফে এই খবর গুজব বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। মুখপাত্র জানান, “ইরফানের শক্তি আর উৎসাহই ওঁকে এতদিন লড়াই করতে সাহায্য করেছে। এবারেও ওঁর তীব্র ইচ্ছাশক্তি এবং পজিটিভ ভাবনা আর সকলের প্রার্থনায় খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন ইরফান।“ কিন্তু এবার আর লড়াই জিততে পারলেন না তিনি। থেমেই গেলেন অনেক না বলা গল্পের নায়ক ।