নিজস্ব সংবাদদাতা: এক অদ্ভুত ফাঁদ পাতা হয়েছে আপনার টাকা লুট করে নেওয়ার। সাইবার ক্রাইমের দুনিয়ায় এ যাবৎ কালের অভূতপূর্ব এই পরিকল্পনা। যার জন্য কিনা সূর্য গ্রহনের দিনটাকেই। আর টোলপ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত কে যা কিনা এই সময়ে মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রেখেছে। আগামী কাল রবিবার, ব্যাঙ্ক বন্ধ ফলে মাত্র কয়েকঘন্টায় আমার আপনার মত মানুষদের আ্যকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা ফাঁকা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতে ব্যাঙ্কের অনেকটাই সময় লেগে যাবে, ততক্ষনে হ্যাকারদের ঝুলিতে চলে যাবে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা। যে কোনও অপারেশননের ক্ষেত্রে সময় নির্বাচনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই ২১ জুন অর্থাৎ রবিবারকেই বেছে নেওয়া হয়েছে যা কিনা আবার সূর্যগ্রহনের দিনও। এটা নিয়ে পরে আলোচনা করছি। আগে দেখে নেওয়া যাক মূল বিষয়টা।
সাইফারমা (Cyfirma), সিঙ্গাপুর ভিত্তিক একটি সাইবার পরিষেবা বিষয়ক নিরাপত্তা সংস্থা যারা তাদের গ্রাহকদের সাইবার ক্রাইম সম্পর্কে সতর্ক ও ক্রাইম পরবর্তী কালীন পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারাই জানিয়েছে, ২১ শে জুন বড়সড় সাইবার হানার শিকার হতে পারে ভারত। উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা কোভিড-১৯ থিমের ফিশিং ক্যাম্পেনের মাধ্যমে এই হামলা চালাতে পারে বলে জানা গিয়েছে। তবে ভারত একা নয়, হামলা চালানো হবে আরও ৫টি দেশে।
সাইফারমা বলছে, উত্তর কোরিয়ার এই হ্যাকার গোষ্ঠী ল্যাজারাস গ্রুপের বড় কোনও ক্যাম্পেনের অংশ বিশেষ। ভারত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইউকে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ লক্ষ ব্যক্তিবিশেষ, ক্ষুদ্র ও বৃহৎ এন্টারপ্রাইস-সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন রয়েছে হ্যাকারদের নিশানায়। শুক্রবার এমনই জানা গিয়েছে, ZDNet-এর একটি রিপোর্টে।
Cyfirma নামে সিঙ্গাপুরের এক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়ার এই হ্যাকার গোষ্ঠী তাদের ক্যাম্পেনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লাভের ছক কষেছে।
যেখানে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কোনও প্রতারক পোস্ট বা ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে বলা হবে। তার পর সেই ব্যক্তিকে নানান প্রলোভন দেখিয়ে ব্যক্তিগত ও আর্থিক ডেটা প্রকাশের মাধ্যমে কাজ হাসিল করবে তারা।জাপানের ১১ লক্ষ ইন্ডিভিজুয়ালের ইমেল আইডির ডিটেল রয়েছে। এর পাশাপাশি ইউকে-র ১৮০,০০০ হাজার বিজনেস কনট্যাক্টও রয়েছে। অভিযান চালানো হবে সিঙ্গাপুরের ৮,০০০ ব্যবসায়িক সংস্থায় যাদের নম্বর থেকে সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের সদস্যদের উদ্দেশে ই-মেল করা হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, সিঙ্গাপুরের যে সংস্থাগুলিকে লক্ষ্য করা হয়েছে, তাদের জনশক্তি মন্ত্রকের একটি জাল অ্যাকাউন্ট থেকে ফিশিং মেল পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সেই মেলে সরকারের কোভিড-১৯ সাপোর্ট প্যাকেজের অধীনে কর্মচারীদের অতিরিক্ত পেআউটের প্রলোভন দেখানো হবে।
Cyfirma-র প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কুমার রীতেশ জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি কম্পিউটার এমারজেন্সি রেসপন্স টিম ও ইউকে-র ন্যাশনাল সাইবার সিকিওরিটি সেন্টারকে অবগত করা হয়েছে। এই ৬টি দেশের এজেন্সিগুলি এ বিষয়ে তদন্তে নেমেছে বলে জানা গিয়েছে। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, গত ৬ মাস ধরে করোনাভাইরাস অতিমারী সংক্রান্ত হ্যাকার অ্যাক্টিভিটি নজরে পড়েছে।
আরও সহজ করে বললে, আপনার কাছে ভারত সরকারের একটি মেল এল তাতে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত কী কী সুবিধা ও আর্থিক প্যাকেজ আপনি পেতে পারেন তা জানানো হল। হয়ত বলা হল আজই শেষদিন এই সুবিধা পাওয়ার। একটি লোভনীয় প্যাকেজ দেখানো হল। আপনি কোভিড আতঙ্কে ভুগছেন, লোভনীয় প্যাকেজে আপনি ঢুকে যাচ্ছেন ভারত সরকারের নামে জাল ওই ওয়েবসাইটের অপশনে ক্লিক করতে করতে। আপনার ব্যাঙ্ক তহবিলে টাকা ঢুকবে এখুনি, আপনি ব্যাঙ্কের এবং আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিলেন। আ্যকাউন্ট নম্বর, আইএফসিআই, পাসওয়ার্ড,ওটিপি ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে বসলেন ব্যস কেল্লাফতে।
একে রবিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ, তাই লেনদেন বন্ধ, লিঙ্কে ভাল স্পিড আর ব্যাঙ্কের নজরদারিও কম। তার ওপর সূর্যগ্রহন, অধিকাংশ ভারতীয় চালু লেনদেন করবেনা, দিনের বেলা এটিএমের ধারেকাছে মাড়াবেননা ফলে ভারতের জন্য হ্যাকারদের আদর্শ সময়।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি গোয়েন্দা ব্যুরোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এই ল্যাজারাস গোষ্ঠী। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কাসপার্স্কাই নিরাপত্তা গবেষকরা ল্যাজারাস গোষ্ঠীর তৈরি একটি ম্যালওয়্যার ধরে ছিলেন, যার সাহায্যে ভারতীয় এটিএমের মাধ্যমে গ্রাহকদের কার্ড ডেটা চুরি করা যেত। কয়েক বছর আগে ভারত ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনেও সাইবার হানা সংগঠিত করে ছিল এই সংস্থাটি। তাই সাধু সাবধান।