নিজস্ব সংবাদদাতা: এ যেন লোহার বাসর ঘরে ঢুকে পড়ল কাল নাগিনী!আইআইটি খড়গপুরের হাজারো প্রতিষেধকের দুর্গ ভেদ করে ঢুকে পড়ল করোনা। আক্রান্ত হলেন এক পড়ুয়া। বুধবার ওই পড়ুয়ার করোনা পজিটিভ নিশ্চিত হওয়ার পরই আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন, তারা যেন ২৩ তারিখের মধ্যেই আইআইটির হোস্টেল খালি করে দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যায়।
আইআইটির পক্ষ থেকে পড়ুয়াদের সঙ্গে সংযুক্ত ডিন এবং হল ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হোস্টেল গুলির ওয়ার্ডেন দের একটি সার্কুলার দিয়ে জানিয়েছেন, “বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে সমস্ত আবাসিকদের জানানো হচ্ছে যে তারা যেন তাদের রুম খালি করে দেয় এবং ২৩তারিখের মধ্যে ক্যাম্পাস পরিত্যাগ করে।”
উল্লেখ্য লকডাউন পর্বে আইআইটির কিছু গবেষক পড়ুয়া এবং স্নাতক স্তরের পড়ুয়া লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ও মদন মোহন মালব্য হলে থেকে গিয়েছে। আইআইটি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০০ পড়ুয়া এখনও ক্যাম্পাসে থেকে গিয়েছেন যারা লকডাউনের কারনে ট্রেন ও অন্যান্য পরিবহনের অপ্রতুলতার কারনে বাড়ি ফিরতে পারেননি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁদের আর রেখে দেওয়াটা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হয়ে যাবে বলেই জানিয়েছেন এক আধিকারিক।
করোনা ক্রান্তিকালের শুরুতেই আইআইটি উল্লেখ যোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়ে লকডাউন শুরু হওয়ার আগেই পড়ুয়াদের ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়ি চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। সেই সময় ১৪হাজার পড়ুয়ার সাড়ে ৯হাজার পড়ুয়া বাড়ি চলে যায়। বাকি পড়ুয়ারা আইআইটিতে থেকে যায়। এই সময় আইআইটি করোনা সংক্রমনের বিরুদ্ধে দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তোলে। আইআইটির চারটি ফটকের মধ্যে একটি ফটক খোলা রেখে বাকি তিনটি ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঢোকা বেরুনোর পথে কড়া নিরাপত্তা বহাল করা হয়। বিশেষ নির্দেশিকা জারি করে ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। এমন কি সংক্রমন আটকাতে মেসের কর্মচারীদের ক্যাম্পাসের বাইরে যেতে বারণ করে দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যেই অনলাইন পাঠক্রম চালু করা, ল্যাব ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং আ্যকাডেমিক ক্যাম্পাসও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নের ভিত্তিতে বসন্তকালীন সেমিস্টার শেষ ঘোষণা করা হয়। এসবের একটাই উদ্দেশ্য ছিল কোনও ভাবেই যেন কারও থেকে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এত করেও রোধ করা গেলনা সংক্রমন। শেষ অবধি যেন বিশ্বকর্মার ছিদ্র করে রাখা সরু ছিদ্র দিয়েই ঢুকে পড়ল করোনা।
লকডাউন ধাপে ধাপে প্রত্যাহার পর্বের শুরুতেই আইআইটি থেকে যাওয়া ছাত্রদের ফের হোস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সময়েও অনেক পড়ুয়া চলে যান কিন্তু থেকে গিয়েছিল এই শ’তিনেক পড়ুয়া। বিভিন্ন হোস্টেল থেকে সরিয়ে তাঁদের দুটি নির্দিষ্ট হোস্টেলে রাখা হয়। চালু করা হয় একটি প্রাইভেট মেস। কিন্তু তাতেও ঠেকানো গেলনা সংক্রমন। জানা গেছে সংক্রমিত পড়ুয়া অন্যদের সাথে অন্য একটি প্রাইভেট মেসে রাতের খাবার খেতেন। সেখান থেকেই তার সংক্রমিত হওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে আর পড়ুয়াদের ক্যাম্পাসে রাখা কোনও ভাবেই সম্ভব নয় বলেই জানিয়ে দিয়েছেন আইআইটি খড়গপুর কর্তৃপক্ষ।