নিজস্ব সংবাদদাতা: অক্সিজেন লেবেল ঠিকই আছে, জ্বরও হালকা অতএব হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই রাখা হল সাধারণ করোনা ওয়ার্ডে। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই দেখা গেল হু হু করে কমে যাচ্ছে অক্সিজেন স্যাচুরেশন। শুরু হল ছোটাছুটি। প্রথমে এইচডিইউ, তারপর আইসিইউ। না, তাতেও কিছু হচ্ছেনা। দ্রুত নামছে বি.পি। পালস ক্ষীণ হয়ে আসছে। নিয়ে যাওয়া হল ভেন্টিলেটর সাপোর্টে কিন্তু না, সব শেষ। করোনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউয়ে এরকম মৃত্যু হয়েছে অনেক। যেমনটা হয়েছে করোনা সংক্রমন কম বলে হোম আইসোলেশনে রাখার পর হঠাৎ বিপত্তি। করোনার নিয়মই এরকম, শরীরের ভেতরে থাকা সুগার, প্রেসার, ফুসফুস, হার্ট এমন কী অন্য কোনও মানসিক সমস্যা যেমন হাইপার টেনশনের চ্যানেল বেয়ে করোনা কখন ছুরি চালায় তা ধরাই মুশকিল। বহিরঙ্গে যা স্বাভাবিক ভেতরে ভেতরে তারই ক্ষত হয়ত খুঁড়ে রেখেছে মরন সুড়ঙ্গ। যেখানে অনেক সময়ই হতাশ হতে হয়েছে চিকিৎসকদের। এবার সেখান থেকেই মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন IIT-র একদল গবেষক। যদি এই দাবি সত্যি হয় তবে করোনার তৃতীয় ঢেউ সামলানোর এক মোক্ষম অস্ত্র চলে আসছে মানুষের হাতে।
IIT- এক দল গবেষক পড়ুয়া তৈরি করে ফেলেছে আশ্চর্য এক সফটওয়্যার। যার সাহায্যে নাকি চিহ্নিত করা যাবে কোন রোগীদের ভেন্টিলেশনে রাখতে হবে। এমনকী, কাদের এখনই হাসপাতালে ভরতি করতে হবে তাও বলে দেবে ওই সফটওয়্যার। কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে আইআইটির (IIT) পড়ুয়াদের তৈরি করা সফটওয়্যারটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভিড সেভেরিটি স্কোর’(COVID Severity Score ) বা সংক্ষেপে CSS।যাকে ঘিরে প্রত্যাশা বাড়ছে কেন্দ্রের। কিন্তু কীভাবে রোগীর শরীরে সংক্রমণের তীব্রতাকে দ্রুত মেপে ফেলবে এই সফটওয়্যার?
আসলে এই সফটওয়্যার একটা অ্যালগরিজম মেনে কাজ করে। আর সেই অনুযায়ীই রোগীর শরীরে সংক্রমণের তীব্রতা কতটা তা নির্ধারণ করে। রোগীর শরীরে অসুখের লক্ষণ, গুরুতর প্যারামিটারগুলি, টেস্ট রিপোর্ট এবং কোমর্বিডিটি আছে কিনা, থাকলেও কতটা ইত্যাদি জরুরি তথ্যের সাহায্যে বিচার করে ওই সফটওয়্যার। তারপর রোগীর আগের রিপোর্ট ও অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে দ্রুত মিলিয়ে নিয়ে রোগীর বর্তমান পরিস্থিতি প্রকাশ করে নির্দিষ্ট এককের সাহায্যে।
আর তারই সাহায্যে সহজেই বোঝা সম্ভব হবে রোগীকে হাসপাতালে ভরতি করা কিংবা তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখার সম্ভাবনার দিকটা। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ গিয়েছে, ততটা গুরুতর অসুস্থ না হয়েও অনেকে হাসপাতালে বেড দখল করে রেখেছেন। এর ফলে অনেক সময়ই যাঁদের প্রয়োজন তাঁরা বেড পাননি। এই সফটওয়্যারের সাহায্যে সহজেই এই ধরনের অভিযোগের মোকাবিলা করা যাবে।
এপ্রিলে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়া করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত হয়েছিল দেশ। আপাতত সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এলেও চোখ রাঙাচ্ছে তৃতীয় ঢেউ। তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা জাগাচ্ছে ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন। আশঙ্কা শিশুরাই এবার সম্ভাব্য আক্রমনের মুখে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে করোনার বিরুদ্ধে এবার লড়াইটা শুধু কঠিনই নয়, স্পর্শকাতরও বটে যার মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্র, প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্যগুলিও। তার আগেই যদি IIT-র গবেষকদের ‘কোভিড সেভেরিটি স্কোর’ (COVID Severity Score) বাজারে আনা সক্ষম হয় লড়াইটা অনেক সহজ হবে বৈকি।