নিজস্ব সংবাদদাতা: সারা বিশ্ব যখন করোন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যেমন তাদের প্রথাগত পাঠক্রম এবং অন্যান্য ক্রিয়াকলাপগুলি স্থগিত করে সেই লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছে ঠিক তেমনই পূর্ব ভারতের প্রান্তে দাঁড়িয়ে কোভিড -১৯ তথা করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার অঙ্গীকার গ্রহন করেছেন দেশের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইআইটি খড়গপুর। আইআইটি খড়গপুর সুত্রে জানা গেছে আইআইটির শিক্ষার্থী ও গবেষকরা করোনো ভাইরাস মহামারী সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় সংস্থান তৈরি করার জন্য বিস্তৃত উদ্যোগ গ্রহন করেছে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি দাবি করছে একটি পারস্পারিক দুরত্ব বজায় রাখার কিন্তু তার জন্য শিক্ষা বা জ্ঞান বিস্তারের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারেনা তাই এখন প্রয়োজন বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষাদান। যে কারনে আমরা সামাজিকভাবে দূরত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অর্থবহ এবং বিকল্প শিক্ষার পদ্ধতি আবিষ্কার করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি যা অত্যন্ত সহজলভ্য ও সাবলীল হবে। আইআইটি খড়গপুর এই গুরুত্বপূর্ণ সেরকমই একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে।
সম্প্রতি আইআইটি খড়গপুরের ২০ সদস্যের একটি পড়ুয়ার দল গোষ্ঠী ভিশন প্রবাহ মানবসম্পদ উন্নয়ন, যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী শ্রী সঞ্জয় ধোত্রের পরামর্শ মত করোনা সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’র জারি করা সতর্কতা ও পরামর্শকে এগারোটি ভারতীয় ভাষায় অনুবাদ করেছে। যার উদ্দ্যেশ্য মাতৃভাষায় মানুষকে এই বিষয়গুলি বুঝতে সাহায্য করা।
গ্রুপের এক সদস্য বিশ্বরূপ মন্ডল বলেন, “ স্থানীয় ভাষাগুলিতে বার্তাগুলির মানু্ষের কাছে পৌঁছালে তা আরও বেশি বেশি করে কার্যকর হবে মনে করেই আমরা অসমিয়া, বাংলা, ওড়িয়া, তেলুগু, মালায়ালাম, কান্নাদা, মারাঠি, গুজরাটি, পাঞ্জাবি, কাশ্মীরি এবং হিন্দিতে ডাব্লুএইচওর জারি করা পরামর্শটির অনুবাদ করেছি। পাশাপশি আমরা ভিডিওটির আরও সংস্করন তৈরি করতে আঞ্চলিক ভাষায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছি ”
অন্যদিকে আইআইটির চার গবেষক ভ্রমণ ও সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ‘নিয়মিত ভ্রমণে করোনার কারনে সামাজিক দূরত্বের প্রভাব’ শিরোনামে একটি গবেষণা চালাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন অন্তর্দৃষ্টি বোঝার জন্য মতামত সংগ্রহ করছে।
এছাড়া অন্য একটি গবেষক গোষ্টি আবার ‘হু’ নির্দেশিকা মেনে স্বতন্ত্রভাবে একটি হ্যান্ড স্যানিটাইজিং পদ্ধতির বিকাশ ঘটানোর চেষ্টা করছে যা কিনা সস্তা ও সহজলভ্য হবে। আইআইটির পরিবহন বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ ব্যবহারে স্বাস্থ্যবিধি সম্মত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
আইআইটি খড়গপুরের ডিরেক্টর অধ্যাপক বীরেন্দ্র কুমার তেওয়ারি সংবাদসংস্থাকে জানিয়েছেন। “সামাজিক দুরত্ব, যতদুর সম্ভব পারস্পারিক সংস্পর্শ এড়ানোর মধ্যেও কিছু অনিবার্য সামাজিক ও পেশাদারি কাজ করতেই হয়। সেই সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা স্থানীয় ভাবেই এমন মাস্কের ডিজাইন ও উৎপাদন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছি যা পূণর্ব্যবহারযোগ্য অর্থাৎ ধুয়ে নিয়ে আবার ব্যবহার করা যাবে। ক্যাম্পাসের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় ভাবেই উৎপাদন করা হবে সেগুলি।”
২২শে মার্চ, রবিবার প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতাকে সম্মান দিয়ে ইনস্টিটিউটটি করোনা মহামারী চলাকালীন সমাজের যে সকল অংশকে পরিশ্রম করে ক্যাম্পাসে সেবা করে চলেছে তাদের সাথে কৃতজ্ঞতা ও সংহতির মুহূর্তের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অধ্যাপক তিওয়ারি জানিয়েছেন, যে সমস্ত কর্মচারী ও নিরপত্তারক্ষীরা স্বাস্থ্যসেবা, সুরক্ষা, হোস্টেল মেস, স্যানিটেশন, বিদ্যুৎ ইত্যাদির মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিতে নিযুক্ত কর্মীদের সাথে সংহতি বজায় রাখতে এদিন তাঁদের সম্মান জানাবে ক্যাম্পাস।