নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের স্বাস্থ্য সৈনিকদের হাতে অস্ত্র তুলে দিল আইআইটি খড়গপুর। লকডাউন চলাকালীনই আইআইটির দুই অধ্যাপক গবেষকের এই অস্ত্র জাতিকে শক্তিশালী করবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে কোনও অংশেই কম নয়, বিশ্বব্যাপী যে যুদ্ধে লক্ষাধিক মানুষ আহত আর মৃত্যুর সংখ্যা ৩২হাজার ছুঁই ছুঁই। প্রতিদিনই আহত ও নিহতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। নিত্য নতুন দেশ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে করোনার আওতায়। যেমন এখন ভারত। ভারত ক্রমশ করোনা যুদ্ধের তৃতীয় স্তরে। গোষ্টি সংক্রমনের এই স্তরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা মুড়ি মুড়কির মত বাড়তে পারে এমনই আশংকা করা হচ্ছে। আর এই ভয়ংকর যুদ্ধে দেশের প্রধান সৈনিকরা হলেন আমাদের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষীরা।
ভারতে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সারা দেশজুড়ে যেমন লকডাউন চলছে তেমনই রাস্তায় নামতে হয়েছে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষীদের। আর সবচেয়ে কঠিন লড়াইটি তাঁদেরকেই লড়তে হচ্ছে সরাসরি করানোর মুখোমুখি এঁরা। যদিও দুর্ভাগ্য এদেশের যে আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দের হার এতটাই কম যে এই লড়াইয়ে প্রকৃত সৈনিকদের হাতে আমরা ঢাল তরোয়াল তুলে দিতে পারছিনা। অপ্রতুল অস্ত্র নিয়েই মারাত্মক লড়াইয়ে আমাদের সৈনিকরা। দেশে পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইক্যুইভমেন্ট(পিপিই ) বা ব্যক্তিগত নিরপত্তা সরঞ্জাম অত্যন্ত কম। এই পিপিই হল মাস্ক, চশমা, গ্লোভস গাউন ইত্যাদি যা ব্যতিরেকে এই যুদ্ধে নামা কার্যতঃ আত্মহত্যার সামিল।
এই নিদারুণ সংকটের মধ্যেই আইআইটি খড়গপুর নিয়ে এল একটি দারুন সুখবর। লকডাউন চলাকালীনই আইআইটি খড়গপুরের স্কুল অফ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক অধ্যাপক শান্তনু ধাড়া এবং অধ্যাপিকা সংগীতা দাশ ভট্টাচার্য্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য তৈরি করে ফেলেছেন একটি কার্যকরি শিরস্ত্রান যা ওঁদের ভাষায় ফেস শিল্ড। চিকিৎসক , স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা নিরপত্তারক্ষীদের জন্য উপযুক্ত এই ফেস শিল্ড হল একটি স্বচ্ছ প্লাস্টিকের প্রতিরক্ষামুলক কভার যা ইলাস্টিক হেডগিয়ারের সাথে সংযুক্ত। এটি মুখমণ্ডলকে সংক্রামক রুগীর মুখ কিংবা নাক থেকে ছিটকে আসা জলীয় অংশ, থুতু, শেল্ষ্মা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করবে।
স্কুল অফ মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির গবেষক দলটি ওই ফেস শ্লিডের ছাঁচ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই জাতীয় ১৪ টি ঢাল তৈরি করে ফেলেছেন এবং আরও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর মনে রাখতে হবে এই সম্পুর্ন কাজই হচ্ছে লকডাউন নির্দেশিকা মেনেই ‘বাড়ি থেকেই কাজ কর’ পদ্ধতিতে।
অধ্যাপক ধাড়া সংবাদসংস্থাকে বলেছেন ‘আমরা এমন সময়ে এই কাজটিতে সাফল্য পেয়েছি যখন প্রতিরক্ষামূলক পোশাকের চাহিদা তীব্র আকার ধারণ করেছে। আমাদের ভাল লাগছে যে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য খুব সহজেই উৎপাদন ও ব্যবহারের উপযোগি এই বস্তুটি তৈরি করতে পেরেছি। খুবই সহজ প্রক্রিয়া ব্যবহার করে এই পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হবে।”
“অধ্যাপক সংগীতা দাস ভট্টাচার্য বলেন “স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম পাওয়াটা খুবই জরুরি এবং অপরিহার্য। আমরা চেষ্টা করেছি তাঁদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য উপাদান যোগান দিতে।’