নিজস্ব সংবাদদাতা: প্রথমে খাবারের সাথে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করার পর প্রেমিকের সাহায্য নিয়ে গলার নলি কেটে খুন। তারপর বাড়ির রান্না ঘরের মেঝে খুঁড়ে স্বামীর দেহ পুঁতে দিয়ে সিমেন্টের ঢালাই। দিনের রান্না ওখানেই সেরে রাতে মেঝেতেই বিছানা পেতে প্রেমিকের সাথে আশনাই । গত আট দিন এভাবেই চলছিল কিন্তু শেষরক্ষা হলনা, স্বামীর বাড়ির লোকেদের সন্দেহ হওয়ায় শেষ অবধি মহিলার বাপের বাড়ির রান্নাঘরের মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার হল সেই মৃতদেহ। শনিবার বেলার দিকে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানা এলাকার ঘটনায় ফের একবার ফিরে এল মনুয়া কাণ্ডের ছায়া। ২০১৭ সালে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে প্রেমিকর সাহায্য নিয়ে মনুয়া মজুমদারের স্বামীকে হত্যার যে কাহিনী নাড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাকে।
শনিবার নন্দকুমার থানার ফতেপুর গ্রামে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘরের মেঝে খুঁড়ে উদ্ধার হয় ৪০বছরের শেখ নূর মহম্মদের মৃতদেহ। স্থানীয় ধান্যঘর গ্রামের বাসিন্দা নূর গত আটদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। খুনের ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে নূরের স্ত্রী আশমা বিবি আর আশমার প্রেমিক স্থানীয় শ্যামসুন্দরপুরের বাসিন্দা শেখ দুলাল। পুলিশ আটক করেছে আশমার মা তথা নূরের শাশুড়ি ফতেপুরের বাসিন্দা রাবেয়া বিবিকেও।
গোটা ঘটনায় তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে উঠে এসেছে প্রেম, রিরংসা আর প্রতিহিংসার এক ভয়ংকর কাহিনী যা রহস্য কাহিনীকেও ছড়িয়ে যায়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নূর আর আশমার বিবাহিত জীবনে উদয় হয়েছিল দুলালের আর সেই পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরেই এই মর্মান্তিক নৃশংসতা। পরকীয়ার রেশ ধরেই সংসারে অশান্তি লেগেই থাকত। মাসদেড়েক আগে তা নিয়ে সালিশিও বসেছিল। অভিযোগ, তার জেরেই প্রেমিক ও তার শাগরেদদের বাপের বাড়িতে ডেকে এনে স্বামীকে খুন করায় ওই মহিলা।
নন্দকুমার থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, “তদন্তে নামার তিন দিনের মধ্যেই খুনের ঘটনার কিনারা হয়েছে। অপরাধ স্বীকার করেছে ধৃতরা সকলে। পুলিশি জেরায় তারা জানিয়েছে, খুন করে দেহ ঘরের মেঝে খুঁড়ে পুঁতে ফেলে তারা।সন্দেহ এড়াতে মেঝের ওই অংশ ঢেকে ফেলা হয় কংক্রিটে।”
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভ্যান চালক নূরের সঙ্গে ১৬ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল আশমার। ১৪ ও ৮ বছরের দুই ছেলে রয়েছে দম্পতির। কাজের সুবাদে প্রায়ই বাড়ির বাইরেই থাকতেন নূর। সেই সুযোগে চিংড়ি ভেড়ির মালিক দুলালের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ায় আশমা। যা নিয়েই শুরু হয় অশান্তি।
দেড়মাস আগের সেই সালিশি সভাতেই নাকি ১মাসের মধ্যেই নূরকে সরানোর হুমকি দিয়েছিল দুলাল। সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল বসেছিল খুনের ছক কষা।
আট দিন আগের শুক্রবার, ৩ জুলাই বিকেলে নূরকে নিয়ে ফতেপুর গ্রামে বাপের বাড়ি ফতেপুর যায় আশমা। রাতে স্বামী নূরের খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয় সে। সেই খাবার খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়ে নূর। তখন ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরের গলার নলি কেটে খুন করে আশমা-দুলালরা।
শনিবার নিজের বাড়ি ধান্যঘর গ্রামে ফিরে ফের ছোট ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি যায় আশমা। আর যাওয়ার আগে শ্বশুরবাড়িতে জানিয়ে যায় নূর ট্রাকের হেল্পার হয়ে বাইরে চলে গেছে।
সোমবার ফের নিজের বাড়ি ধান্যঘরে ফিরে আসে আশমা। এদিকে নূরের ফোন বন্ধ থাকায় সন্দেহ বাড়ে নূরের মা ও অন্যদের। মঙ্গলবার নন্দকুমার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি জমা করে আসেন নূরের মা নূরজান বিবি। বৃহস্পতিবার রাতে দুলালের সঙ্গে আশমার ফোনে কিছু কথোপকথন ফের সন্দেহ বাড়ায় নূরজান বিবির। শুক্রবার সে কথা থানায় জানিয়ে আসেন পরিবারের লোকেরা।পুলিশের দাবি, তারপর চেপে ধরতেই অপরাধ কবুল করে আশমা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে শনি এবং রবিবার যে রান্নাঘরের মেঝেতে নূরকে পোঁতা হয়েছিল সেখানেই রান্না করেছে আশমা বিবি আর ছোট ছেলেকে দিদার কাছে পাঠিয়ে দুলালের সঙ্গেই রাত কাটিয়েছে সে।