অশ্লেষা চৌধুরী: একটা নয়, দুটো নয়, প্রায় শ’য়ের কাছাকাছি পাইলট তিমির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। নিউজিল্যান্ডের মূল দ্বীপাঞ্চলগুলো থেকে প্রায় আটশ’ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত চ্যাথাম দ্বীপ। নিউ জিল্যান্ডের এই দুর্গম চ্যাথাম দ্বীপের সমুদ্র উপকূলে আটকা পড়ে প্রায় একশ’ পাইলট তিমির মৃত্যু হয়েছে।
সেই দেশের সংরক্ষণ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তিমি আটকা পড়ার বিষয়টি গত রবিবার তারা জানতে পারেন। তবে তারা যখন ওয়েতাঙ্গি ওয়েস্ট বিচের ঘটনাস্থলে পৌঁছান তখনও কয়েকটি প্রাণী জীবিত ছিল। এই ঘটনায় মোট ৯৭টি তিমি ও তিনটি ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে শত শত তিমির আটকে পড়া ও মারা যাওয়ার খবর প্রকাশিত হয়। এক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গিয়েছে।
সেখানকার উপকূলে এসব তিমি আটকে পড়ার সুনির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি দেশের আধিকারিকেরা। নিউ জিল্যান্ডের জলসীমায় দেখা যাওয়া তিমির প্রজাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পাইলট তিমি। প্রায় ২০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে এই প্রজাতির এসব স্তন্যপায়ী প্রাণী।
ওই দেশের সংরক্ষণ দফতরের (ডিওসি) তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন যৌক্তিক কারণে চ্যাথাম দ্বীপে গণহারে সামুদ্রিক প্রাণী আটকে পড়ার ঘটনা বেশ স্বাভাবিক। ১৯১৮ সালে দ্বীপটিতে প্রায় এক হাজার তিমি আটকে পড়ে প্রাণ হারায়। দেশটিতে সেটাই এই ধরনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এছাড়া দুই বছর আগে দেশের স্টুয়ার্ট দ্বীপে আটকা পড়ে প্রাণ হারায় ১৪৫টি পাইলট তিমি।
নিউ জিল্যান্ডের সংরক্ষণ দফতরের (ডিওসি) রেঞ্জার জেমা ওয়েলচ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, সামুদ্রিক পরিস্থিতির কারণে তারা আটকে পড়া ২৬টি প্রাণীকে ছেড়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, ওই অঞ্চলের সমুদ্রের জলে সাদা হাঙর থাকা এবং সেগুলো একইভাবে উপকূলে আটকে পড়ার মতো পরিস্থিতিতে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
সে দেশের কর্তৃপক্ষটি জানিয়েছে, মৃত তিমিগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে স্থানীয় মরিয়রি ও মাওরি জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। মৃত তিমিগুলোর দেহ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, দু’মাস আগে অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া উপকূলে গণহারে তিমি আটকা পড়ার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাকে রেকর্ড হওয়া দুনিয়ার সবচেয়ে বড় গণ আটকা পড়ার ঘটনা হিসেবে মনে করেন সংরক্ষণবাদীরা। সেসময় বহু প্রাণীকে সাগরে ফেরত পাঠানো গেলেও মারা যায় প্রায় ৩৮০টি পাইলট তিমি।
আর এখন আবার এতগুলো পাইলট তিমির আটকে পড়ে মৃত্যু, সত্যিই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর এই ঘটনার কোনও কারণ খুঁজে না পাওয়া আরও বড় দুশ্চিন্তার কারণ।