নিজস্ব সংবাদদাতা: আমনের জন্য বীজতলা ফেলেছিলেন স্বামী আর সেই ধানের চারা যাতে ষাঁড় না খেয়ে ফেলে তাই বীজতলা রক্ষা করতে বেআইনি ভাবে বিদ্যুতের বেড়া দিয়েছিলেন। তাতে ষাঁড় আসেনি বটে, রক্ষাও পেয়েছিল বীজতলা কিন্তু শস্যলক্ষী রক্ষা করতে গিয়ে মর্মান্তিক ভাবে প্রান গেল গৃহলক্ষীর।
শনিবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল থানা এলাকার গড়ধরা গ্রামের কৃষি জমিতে। পুলিশ জানিয়েছে মৃত গৃহবধূর নাম সুপ্রিয়া রানা। মৃতদেহ উদ্ধারের পর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে গড়ধরা গ্রামের বর্ধিষ্ণু কৃষক নবকুমার রানা চলতি মরশুমে আমন চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ডুলুং নদীর পলিলালিত উর্বর কয়েক বিঘা কৃষি জমিতে ধান রোপনের জন্য বীজতলা ফেলেছিলেন। কিন্তু বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ষাঁড়ের উপদ্রব। রাত নামলেই কচি ধানের সবুজ চারা খেতে বীজতলায় হানা দিত ষাঁড়। চারা যা খাওয়ার খেত তো বটেই তার সাথে তছনছ করে দিত বীজতলার বাকি অংশ।
ষাঁড়ের এই উপদ্রব ঠেকাতেই বীজতলা রক্ষার উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ পরিবাহী খোলা তার দিয়ে জমির চারপাশ ঘিরে রাখতেন। স্থানীয় একটি বিদ্যুৎ খুঁটি থেকে হুক করে সেই তার রাখা থাকত। সকালবেলায় যার বিদ্যুৎ সংযোগ খুলে নেওয়া হত। জানা যায় বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মানুষদের সতর্ক করেছিলেন নবকুমার বাবু যাতে কেউ বিপদের সম্মুখীন না হন। কিন্তু নিজের পাতা ফাঁদে পড়তে হল তার নিজের স্ত্রীকেই।
নবকুমার বাবুর স্ত্রী সুপ্রিয়া শনিবার সকালে জমিতে গিয়েছিলেন বীজতলার গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করতে। কৃষক পরিবারের গৃহলক্ষীদের কাছে এটা স্বাভাবিক। প্রতিদিনই যেতেন তিনি। জমিতে জল আছে কিনা, পোকার উপদ্রব হয়েছে কিনা ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ।
শনিবার সেটা করতে গিয়েই ভুলবশত পা পড়ে যায় খোলা তারে। ঘটনাক্রমে এদিনই বিদ্যুৎ সংযোগ খোলা হয়নি। ভেজা পা, খালি পা, ফলে ভুল হয়নি ওঁৎ পেতে থাকা উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎ পরিবাহী যমের। নিমেষের মধ্যেই পড়ে যান তিনি। স্থানীয় মানুষজন দেখতে পেয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাঁকে উদ্ধার করে ভাঙ্গাগড় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তারা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনায় পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে মামলা শুরু করেছে। এখন জোড়া বিপদের মুখে নবকুমার।