নিজস্ব সংবাদদাতা: বিধানসভা নির্বাচন হয়ে গেছিল এপ্রিল মাসে। ২রা মে ভোট গণনা। কে জিতবেন কেউ জানেনা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। কলকাতা থেকে খড়গপুরে ছুটে এসেছেন বিজেপি প্রার্থী হিরন। নিজস্ব কোভিড টিম তৈরি করেছেন, বিশেষ আ্যম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেছেন। দুটো হেল্প লাইন নম্বর দেওয়া আছে, যখনই ফোন করা হয় ওপাশ থেকে হ্যালো শুনতে পাওয়া যাবে। তারপর ২রা মে, হিরন জয়ী হয়েছেন খড়গপুর শহর বিধানসভা ক্ষেত্রে। সরকার অবশ্য গড়েছে তৃনমূল। তাতে অবশ্য ‘বিধায়ক’ হিরন থেমে থাকেননি। খড়গপুর রেলের কোভিড ওয়ার্ডের আসন বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে রাজি করিয়েছেন, কথাবার্তা চলছে প্রয়োজনে রেলের টিবি হাসপাতালটিকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার। এ হেন হিরন চট্টোপাধ্যায়কে নিরুদ্দেশ বলার ঝুঁকি নিচ্ছেনা তৃনমূল!
শুক্রবার খড়গপুর শহরের প্রান্তিক এলাকা তালবাগিচা ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৪টি পোষ্টার পড়েছে হিরন নিরুদ্দেশ নামে। পোষ্টারের ধরন আর ছবি দেখে পরিষ্কার যে এলাকারই কোনও ভালো আঁকিয়ে কে দিয়ে স্কেচ করানো হয়েছে। কিন্তু পোষ্টার টি কে দিয়েছে তার নাম নেই। সাধারণত শাসকদলের নেতা মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রাগে ক্ষোভে অনেক সময় পোষ্টার দিলে মানুষ ভয়ে নাম দেয়না কারন পুলিশকে দিয়ে হয়রানি করতে পারে। হিরন তো শাসকদলের নয়, তাহলে কিসের ভয়? যেখানে পোষ্টার পড়েছে সেই তালবাগিচা এলাকায় বাড়ি খড়গপুর শহর তৃনমূল যুব সভাপতি অসিত পালের। অসিত জানিয়েছেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে কোনও পোষ্টার দেওয়া হয়নি কিন্তু পোষ্টারের বিষয় সম্পর্কে আমরা একমত। কোথায় বিধায়ক, বহুদিন শহর দেখেনি তাঁকে।”
বিজেপি বলছে, “জনরোষের ভয়। হিরনকে নিরুদ্দেশ বললে খড়গপুরের মানুষ তৃনমূলকে এমন খোরাক করবে যে রাস্তায় বেরুতে লজ্জা পাবেন তৃনমূল নেতারা। তাই গোটা শহর বাদ দিয়ে পোষ্টার দেওয়া হয়েছে শহরের এক কোনায়, যাতে কম মানুষের নজরে পড়ে। তাও আবার নিজেদের নাম নিতে ভয় পাচ্ছে তৃনমুল।”
বিধায়ক হিরণ নিজে বলেছেন, ‘আমি পাত্তাই দিচ্ছি না এসব।আগামীকাল যদি নন্দীগ্রামে পোস্টার পড়ে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে পুলিশ-প্রশাসন কী করবে? গত ১২ মার্চ থেকে আমি খড়গপুরেই আছি। কাজ ছাড়া খড়গপুরের বাইরে যাইনি। আমার ওখানে বাড়ি-অফিস রয়েছে। বিধানসভার অধিবেশন রয়েছে বলে কলকাতায় এসেছি। তাহলে নিরুদ্দেশ হলাম কী করে!’
পোস্টার প্রসঙ্গে হিরণ আরও বলেছেন, ‘যাঁরা সত্যি কথা লেখেন, তাঁরা নাম লেখেন।এখানে তো পোস্টারে কোনও নাম লেখা নেই। ভীতু বলেই কে বা কারা পোস্টার দিয়েছে, তাঁর নাম লেখা নেই। পুলিশ-প্রশাসনের উপর ছেড়ে দিয়েছি। বিরোধী পক্ষ বলে পুলিশ-প্রশাসন চুপ করে রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে পোস্টার পড়লে পুলিশ-প্রশাসন নড়েচড়ে বসত।”
ওই পোষ্টারে দাবি করা হয়েছে নিরুদ্দেশ হিরনকে খুঁজে দিতে পারলে পুরস্কার হিসেবে তিনি হিরনের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগ পাবেন যিনি সন্ধান দিতে পারবেন।
বিজেপির এক নেতা বলেছেন, “বিধায়কের সঙ্গে ছবি তুলতে চেয়েছেন কেউ কেউ, উনি ছবি তুলেছেন। মানুষ ছবি তুলেছেন করোনা কালে বিধায়কের বস্তিতে বস্তিতে গিয়ে খাবার, জামা কাপড় বিলি করতে দেখে। কিন্তু ওই করোনা কালে খড়গপুর মানুষ যখন বিপর্যস্ত তখন সুদূর কাশ্মীরে বসে নিজের বিলাসবহুল ভ্রমনের সেলফি কে ফেসবুকে আপলোড করে যাচ্ছিল বলুনতো? সে সব দামি সেল্ফিও যত্ন করে রেখেছি আমরা। আমাদের নোংরামি না করার রুচিকে আমাদের দুর্বলতা ভাবা ভুল হবে। কেমন হবে যদি পৌরভোটের আগে করোনা কালে কাশ্মীরে নৌকা বিলাসের সেল্ফি গুলো সামনে আনি?”