নিজস্ব সংবাদদাতা: দিন রাত এক করে কাজ করছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই বিপর্যয়ের সময়েও অবিচল কর্তব্যে। অথচ তাঁদের দ্বারাই নাকি এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়বে এমনই অজুহাত তুলে স্বাস্থ্যকর্মীদের এলাকা ছাড়া করতে তাণ্ডব চালালো একদল উন্মত্ত জনতা। ঘটনা খোদ মহানগরের গা ঘেঁষে রাজারহাটে। মাত্র ২৪ঘন্টা আগেই সাংবাদিকদের কাছে মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা বলেছেন মেদিনীপুর শহরের ১২৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী। বলেছেন কী ভাবে পাড়ায় পাড়ায় সামজিক বয়কট আর হেনস্থার শিকার তাঁরা। বাড়ি ছাড়া হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে দিন কাটাতে হচ্ছে ওই ১২৭ জনকে। অপরাধ, তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা হয়েছিল এমন একজন রুগীর যাঁর পরবর্তীকালে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে।
আর তারপরই রাজারহাটের ঘটনা । রাজারহাট এলাকার নারায়ণপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়িতে থাকতে না দেওয়ার ফতোয়া জারি করলেন এলাকার মানুষজন। এই নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই ধুন্ধুমার বেঁধে গেল। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থলে গিয়ে জনসাধারণকে বোঝান বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়। ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও আশ্বাস দেন তিনি।
বিধাননগর পুরনিগমের অন্তর্গত রাজারহাটের নারায়ণপুর এলাকার মনিখোলা। সেখানেই মঙ্গলবার রাতে ঘটে গেল অপ্রীতিকর ঘটনা। স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা যেহেতু হাসপাতালে কাজ করেন, তাই তাঁদের থেকে এলাকায় করোনা সংক্রমণ হতে পারে, এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে তাঁদের বাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান কয়েকজন এলাকাবাসী। এমনকী পাথরও ছোঁড়া হয়। কয়েকজন ছোঁড়েন কয়েকজন বলে অভিযোগ। ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকায় যান নারায়ণপুর থানার পুলিশ কর্মীরা। বিক্ষোভ সামাল দিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয় পুলিশ।
ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিধাননগর পুরনিগমের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়। তিনি সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। পাশাপাশি, ওই স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার ও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এই ঘটনা এখানেই প্রথম নয়। দেশজুড়েই এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনকে নানাভাবে হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। সে চিকিৎসকই হোন বা নার্স অথবা অন্য কোনওভাবে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিদের কিছুটা একঘরে করে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে সমাজের একাংশের মানুষের মধ্যে। সরকারের এ নিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকলেও, তার তোয়াক্কা করছেন না অনকেই। শুধুমাত্র করোনা সম্পর্কে অসচেতনতাই কি এর কারণ? এর উত্তর খোঁজার সময় এসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই লাগাতার আক্রমনের মুখে যদি এক যোগে সবাই মানু্ষের চিকিৎসা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন কোথায় যাবে মানুষ? নিজের পায়ে কুড়োল মারার এই প্রবনতা থেকে কবে মুক্ত হবে মানুষ ? এই মহা সংকটের সময় যাঁদের পুজো করার কথা তাঁদেরই অবজ্ঞা করা হচ্ছে । এমনকি প্রধানমন্ত্রী , মূখ্যমন্ত্রী বারবার সতর্ক করার পরও এই একই ঘটনা ঘটেই চলেছে ! ছবি -প্রতীকি