নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জীর হাত ধরেছিলেন বিমল গুরুং। না, বলাটা বোধহয় ভুল হল। বলা যায় মমতা ব্যানার্জীই হাত ধরেছিলেন বিমল গুরুংয়ের। যেমন তিনি ধরেছিলেন মাওবাদীদের মদতপুষ্ট ছত্রধর মহাত কিংবা কামতাপুরিদের হাত ধরে ছিলেন। তারপর নির্বিচার লুট খুন আর অগ্নি সংযোগ, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস। ঠিক যেমনটা মাওবাদীরা বা কামতাপুরীরা করেছিল। ২০১১ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সাত খুন মাপ হয়েছিল গুরুংদের। তারপর মা-মাটি-মানুষের হাত ধরে সরকারি ক্ষমতার স্বাদ। কিন্তু পরবর্তী কালে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং তৃণমূলের সঙ্গ ত্যাগ করে বিজেপির সাথে মাখামাখি। তারপর আবারও খুন খারাপি। আগে খুন হয়েছিলেন মদন তামাং এরপর পুলিশ আধিকারিক অমিতাভ মালিকের হত্যা। আপাতত সব ইতিহাস!
সামনে ফের নির্বাচন, ফের খুনি গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তন, সৌজন্যে ফের মমতা ব্যানার্জী। গুরুং বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদি বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে গোর্খাল্যান্ডের দাবির প্রতি। তাই মমতা ব্যানার্জীর হাত ধরে লড়ব। মমতাকেই মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই।” নরেন্দ্র মোদি না হয় বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তাহলে মমতা ব্যানার্জী কী মেনে নিয়েছেন গোর্খাল্যান্ডের দাবি ? ২০২১ শে গুরুং কোন দাবিকে সামনে রেখে লড়বেন জানা নেই কিন্তু পাহাড় আর যে তার নেই তা প্রমাণ হয়ে গেল রবিবার। বিমল গুরুংয়ের পাহাড়ে ফেরা নিশ্চিত হতেই দার্জিলিংয়ে চরমে পৌঁছল রাজনৈতিক উত্তেজনা। শক্তি প্রদর্শনে রবিবার সেখানে মিছিল করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং গোষ্ঠীর এই ‘শান্তিমিছিল’-এ চোখে পড়ার মতো।
গুরুং তৃণমূলের হাত ধরতেই পাহাড়ে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে সংকটে ভুগতে শুরু করেছেন তামাংপন্থীরা। এদিন দার্জিলিং শহরের চকবাজার থেকে মিছিল করেন তাঁরা। মিছিল থেকে স্লোগান ওঠে, পাহাড়ে যারা অশান্তি তৈরি করেছে তাদের আর পাহাড়ে ফেরার দরকার নেই। এখন প্রশ্ন হল মমতা ব্যানার্জী না হয় গুরুংকে বন্ধু করলেন কিন্ত বিনয় তামাংকে কী করবেন? এতদিন গুরুংয়ের বিরুদ্ধে বিনয় তামাংকে কাজে লাগিয়েছেন এবার বিনয় তামাং গুরুংকে মানবেন কেন?
শোনা যাচ্ছে, মাস তিনেক আগে দিল্লিতে গুরুংয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল তৃণমূলের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের। পরে রাজ্যের এক মন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক হয় তাঁর। তারপরেই গুরুংয়ের প্রত্যাবর্তন। কিন্তু পাহাড়ের পুকুরে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খায়না। ঘিসিং আর গুরুং যেমন এক সাথে খায়নি তেমনি গুরুং আর তামাং খাবেনা। গুরুংকে যখন মমতা টেনেছেন তখন তামাংকে রাজু বিস্তা টানবে।
গত কয়েকদিনে পাহাড়ে বিভিন্ন জায়গায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন গুরুং অনুগামীরা। বিভিন্ন জায়গায় গুরুংয়ের ছবিসহ পোস্টার লাগিয়েছেন তাঁরা। সেই পোস্টার লাগানো নিয়ে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে পোস্টার ছেঁড়ার খবর এসেছে। গুরুংয়ে সামনে রেখে তৃণমূলের পাহাড় দখলের খেলায় তামাংপন্থীদের এবার মদত দেবে রাজু বিস্তা। রবিবার পাহাড়ে তামাংপন্থীদের বিশাল মিছিল বুঝিয়ে দিয়েছে সেই খেলা শুরু হয়েছে। বহু জায়গাতেই তামাংয়ের মিছিলে লোক জুটিয়েছে রাজু বিস্তার গোষ্ঠীরাই।
পাহাড় বড় কঠিন, ঠিক জঙ্গলের মতই। গোটা জঙ্গলমহল যেমন এখন শাসক বিরোধী ঠিক তেমনই পাহাড়। ছত্রধর যেমন তৃণমূলকে জঙ্গলমহল ফিরিয়ে দিতে পারবেনা তেমনই বিমল গুরুংও ফিরিয়ে দিতে পারবেনা পাহাড়।পাহাড় আর জঙ্গল কোনওটাই আর হাসছে না আজকাল বরং কাশছে, গলা খাঁকারি দিচ্ছে, ক্ষোভে ফেটে পড়ার। রবিবারের পাহাড়ি মিছিল যদি গুরুং বিরোধী হয়ে থাকে তবে তা তৃনমূল কংগ্রেস বিরোধীও। পাহাড়ের হাসি এখন কঠিন অট্টহাসি। হয়ত কঠিন উপহাসেরও। অন্তঃত রবিবারের ঘিসিং বিরোধী মিছিল তাই বলছে।