ভবানী গিরি : শ্রী চৈতন্য ভাবাশ্রিত জনপদ শ্রীপাট গোপীবল্লভপুর। জীবে দয়া আর জীবে প্রেম এখানকার সাধারন মানুষের সহজাত ধর্ম। ওড়িশা সংলগ্ন প্রাচীন এই জনপদ সুবর্নরেখা অববাহিকার পলিলালিত উর্বর মাটিতে শস্য আর সবজির ভান্ডার হওয়ায় এই এলাকায় হনুমানের আনাগোনা। কখনও কখনও তাদের উপদ্রবে সাধারণ মানুষ একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন। কিন্তু তাতে জীবে প্রেমে ভাটা পড়েনা মানুষের। বাড়ির দুষ্টু ছেলের দস্যিপনার মতই সেই উপদ্রব মেনেও নেয় মানুষ। আর যাই হোক হনুমানের উপদ্রব নিয়ে নালিশ করতে শোনা যায়নি বনদপ্তরের কাছে।রবিবার সেরকমই এক অবলাপ্রানীর প্রতি নিজের ভালবাসা দেখালেন গোপীবল্লভপুরের যুবক কল্যান বারিক।
হনুমানের পালের সঙ্গে থাকে একাধিক শাবক। মায়ের কোলে ঘোরার পাশাপাশি নিজের মত করে খেলে, দলের সঙ্গ ছেড়ে একটু এদিক ওদিক ছুটে যায় ঠিক মানুষের বাচ্চার মতই। তেমনই শিশুসুলভ আচরন করতে গিয়ে একটি হনুমান শাবক জড়িয়ে পড়ে সবজি ক্ষেত রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত নাইলনের জালে। সভ্যতার জাল বলে কথা! যতই ছাড়াতে যাও ততই জড়িয়ে পড়বে। মানুষের বাচ্চাই ও জাল কাটিয়ে বেরুতে পারেনা হনুমান তো দুরের কথা।
রবিবার দুপুরে গোপীবল্লভপুর বাজারের দক্ষিণ পাড়ায় কল্যান বাবু লক্ষ্য করেন একটি পরিত্যাক্ত জালে জড়িয়ে পড়ে একটি সদ্য জাত হনুমানের বাচ্চার হাতে পায়ে গলা সহ সর্বাঙ্গ জড়িয়ে রয়েছে সেই জাল। প্রান বাঁচাতে ত্রাহি ত্রাহি রব। শিশুকে বাঁচাতে মা আর দলবলের করুন আকুতি। দীর্ঘক্ষণ জালে জড়িয়ে থাকার জন্য শাবকটি চোখ মুখ উল্টে একপ্রকার মৃত্যুর মুখে চলে যাচ্ছে, আর হনুমানের বাচ্চাটিকে ঘিরে রয়েছে একপাল হনুমান।
কল্যানবাবু জানান, নিত্যদিনের মতই গোবিন্দ মন্দির থেকে ঠাকুর দর্শন করে ফেরার পথে ওই দৃশ্য দেখতে পাই। হনুমানের দল যেন চিৎকার চেঁচামেচি করে আমারই দৃষ্টি আকর্ষন করছিল। কিছু বলতে চায় ওরা। আমারই বাড়ির ছাদে ঘটছিল কান্ডটা। প্রতিবেশী বিশুকে নিয়ে উঠে পড়ি ছাদে। এরপর জাল সমেত বাচ্চাটাকে নীচে নামিয়ে ছুরি দিয়ে জাল কেটে কেটে ওকে মুক্ত করি। তারপর ছেড়ে দিতেই একলাফে মায়ের কাছে। তার যে সে কী আনন্দ না দেখলে বুঝতে পারবেননা।”
‘নেহাৎই হনুমানের বাচ্চা, না হলে নির্ঘাত থ্যাংক ইয়ু বলে দিত!’ কে যেন মজা করে বলল। কল্যানবাবু বললেন, ‘সে না বললেও বুঝতে অসুবিধা হয়না। বাচ্চাকে ফিরে পেয়ে মায়ের যা আনন্দ আর মায়ের চোখে আমি কৃতজ্ঞতার ভাষা দেখতে পেয়েছি।’ গোপীবল্লভপুরের দক্ষিন পাড়া অবশ্য সত্যি সত্যি কৃতজ্ঞ কল্যানের প্রতি। তাঁর এই কীর্তির জন্য খুশি এলাকার সাধারণ মানুষ। রামভক্তদের শাবকটির ভালমন্দ কিছু হয়ে গেলে অন্য পাড়াকে মুখ দেখাত কি করে তারা?