নিজস্ব সংবাদদাতা : কতদিন পরে এমন মিছিলে হাঁটলে? প্রশ্নটা শুনে মুখ তুলে তাকান দেহাতি মানুষটি। বয়স পঞ্চাশের গায়ে। খালি পা, খাটো ধুতি। গোপীবল্লভপুর বাজারের হাতিবাড়ি মোড় থেকে বিডিও অফিস ছাতিনাশোল, ৪ কিলোমিটার হেঁটেছেন মানুষটি। কপাল থেকে ঘাম গড়িয়ে নামে। সেই ঘাম মুছে জানালেন, “২ বছর আগে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে!” অবাক হওয়ার ছিল, ২বছর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় গোপীবল্লভপুরে এত বড় মিছিল করতেই পারেনি সিপিএম। বললাম, ২বছর আগে সিপিএমের মিছিলে? মানুষটি বললেন, ‘না, বিজেপির মিছিলে।’ তারপর?
‘তারপর আর কি? পঞ্চায়েত দখল হল, পঞ্চায়েত সমিতি দখল হল। সব বিজেপির হল খালি আমাদের কিছু হলনা। বলেছিল তৃনমূলকে সরালে ব্লকের ভূগোল বদলে যাবে। কোথাও কিছু বদলায়নি। ব্লক সভাপতি দানগি সরেনকে তৃনমূল আর পুলিশ মিথ্যা মামলায় জেলে ঢুকালো কিন্তু মাসের পর মাস তাঁকে জামিন না করিয়ে জেলেই রেখে দিল নিজেরা লুটে পুটে খাবে বলে। এই ক’দিন হল জামিন পেয়েছে। দানগি বুজেছে কিনা জানিনা কিন্তু আমরা বুঝে গেছি। ভিতরে ভিতরে সব গাঁটছড়া বাঁধা আছে। তৃনমূল বিজেপি এক!” বললেন আদিবাসী মানুষটি। আর তিনিই বললেন লালঝান্ডার মিছিলে হেঁটেছেন দশ বছর আগে, বিধান সভা নির্বাচনের সময়।
তাঁর কাছেই জানা গেল হাজার বারোশ’র এই মিছিলে ৩০০ জনই এসেছে সাতমা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে। ২০২১ আগে যখন ময়দানের দলবদলের মতই যখন তৃনমূল আর বিজেপিতে দলবদল হচ্ছে তখন ভেতরে ভেতরে এভাবেই মানুষ ফের ফিরে আসছে লাল ঝান্ডার তলায়। শুধু বিজেপি থেকে নয়, তৃনমূল থেকেও। আর সে কারনেই দশক ছড়িয়ে লালঝান্ডার এত বড় মিছিল দেখতে পেল সিপিএম।
মঙ্গলবার গোপীবল্লভপুর সত্যি সত্যি ১০ বছর পিছনের সিপিএমকেই দেখতে পেয়েছে স্বমহিমায়। মানুষের মনে ফিরে এসেছে দশ বছরের পুরনো স্মৃতি। এদিন গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকের বিডিও অফিসের ডেপুটেশন কর্মসূচিতে সিপিমের কর্মসূচি ছিল কেন্দ্রীয় বেসরকারীকরণ এবং কৃষি বিল এর বিরুদ্ধে এবং তৃণমূলের স্বজনপোষনের বিরুদ্ধে। গোপীবল্লভপুর বাজার থেকে ছাতিনাশোল পর্যন্ত সিপিএম সহ বাম দলগুলোর সম্মিলিত মিছিল। কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা সিপিএম এর সম্পাদক পুলিন বিহারী বাস্কে, অনিল পৈড়া, বিশ্বরঞ্জন খামরী,শোভন পাল এর মতো বাম নেতারা। নেতা নয়, মানুষের ভীড়ই চমকে দিয়েছে তৃনমূল আর বিজেপিকে। দু’দলই খুঁজছে এত সিপিএম ছিল কোথায়?