নিজস্ব সংবাদদাতা: আবারও মধ্যযুগীয় বর্বরতা, আবারও ঘাটাল! কিছুদিন আগেই রাতভর খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল এক গৃহবধূকে সঙ্গে তাঁর কল্পিত প্রেমিক। ঘটনাস্থল ছিল ঘাটাল মহকুমার দাসপুর আর এবার ঘটনা ঘটল খোদ ঘাটালেই। দেখা গেল এক গৃহবধূকে জুতোর মালা পরিয়ে ঘোরানো হচ্ছে গোটা গ্রাম। আর তার পেছনে পেছনে হাতে লাঠি নিয়ে হাঁটছে গাঁয়ের মাতব্বর সহ ছেলে থেকে বুড়ো। ভিড়ের সঙ্গেই হাঁটতে হাঁটতে উল্লাসে ফেটে পড়ছে কচিকাঁচার দল, এমন কী মহিলারাও!
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল থানার প্রতাপপুর গ্রামের সেই ভিডিওটি আগুনের মত ছড়িয়ে পড়েছে গোটা জেলায়। দেখা যাচ্ছে, বৃষ্টি ভেজা কাদা মাটিতে গলায় জুতার মালা পরিয়ে হাঁটছে এক তরুণী গৃহবধূ, পেছনে একাধিক পুরুষ হাতে লাঠি। করে তাঁকে তাড়া করে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর বলছে, ” চল, তাড়াতাড়ি চল।” সাথে লাঠি উঁচিয়ে ইশারায় বলে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে, না চললে মারা হবে সেই লাঠি দিয়ে। সামনে হাঁটতে হাঁটতে সেই ঘটনার ভিডিও করছে এক যুবক। মহিলা একটু থমকে নীরব আকুতি জানাচ্ছেন কিন্তু বৃথাই অনুযোগ। থামলেই বলা হচ্ছে ‘চল, তাড়াতাড়ি চল।’ নিরুপায় মহিলা আবারও চলছেন। সবচেয়ে মারাত্মক যে কচিকাঁচার পাশাপাশি ওই গৃহবধূকে হাঁটাতে দেখা গেছে একজন গৃহবধূ ও তরুনীকেও।
প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে প্রতাপপুর গ্রামের ওই মহিলা বছর কয়েক আগে গ্রামেরই এক যুবকের প্রেমে পড়ে এবং সেই যুবকের সাথে অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে সংসার পাতে। অন্য জায়গায় বসবাসকারী ওই যুবক লকডাউনের বাজারে বারবার কাজ হারিয়েছে। এরপর উপায়ন্তর না দেখে বাড়ি ফিরে আসে দীর্ঘ আড়াই বছর পর গত শুক্রবার। সেই খবর পৌঁছে যায় মহিলার আগের স্বামীর বাড়িতে। খবর পেয়ে রবিবার বেলার দিকে পুরানো স্বামীর বাড়ির লোক গিয়ে ওই মহিলার বাড়িতে চড়া হয়। মহিলাকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনে। তারপর সামাজিক শাসনের নাম করে মহিলাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গোটা গ্রাম ঘোরাতে শুরু করে।
এদিকে স্থানীয় কিছু মানুষ মারফৎ খবর পৌঁছে যায় ঘাটাল থানায়। খবর পেতেই দ্রুত তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে। ঘটনায় আটক করে নিয়ে আসা হয় এক অভিযুক্তকে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ঘটনায় জড়িত কাউকেই রেয়াত করা হবেনা। সুত্রে খবর এই ঘটনায় য়ারা জড়িত তাদের সকলতে গ্রেফতার করা হবে। ঘাটাল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক তথা SDPO অগ্নীশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, একজনকে আটক করা হয়েছে। খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে কারা কারা এই ঘটনায় জড়িত। উল্লেখ্য কিছুদিন আগেই নিজের মামাবাড়িতে এসে দাসপুরে এরকমই হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন এক গৃহবধূ। সেই বাড়িতে কেন ওই গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির প্রতিবেশী যুবকও এসেছে সেই প্রশ্ন তুলে দুজনকেই সারা রাত বিদ্যুৎস্তম্ভে বেঁধে রাখা হয়। পুলিশ এসে উদ্ধার করে তাঁদের।