নিজস্ব সংবাদদাতা: উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর ছেলেকে ডাক্তার করতে চান? ৩২লক্ষ টাকায় ফিলিপিনস থেকে এমবিবিএস পড়িয়ে দেবে এই সংস্থা কিংবা ব্যাঙ্গালুরুর কোনও মেডিক্যাল কলেজ থেকে বিএসএসসি নার্সিং, জিএনএম অথবা বিফার্ম, ডিফার্ম, মেল নার্সিং। বাবা-মা সর্বস্ব বাজি রেখে ছেলেমেয়েকে ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, নার্স বানানোর জন্য ছুটছে আর ফাঁদ পেতে রয়েছে জালিয়াতের দল।
এমনই এক ফাঁদে পড়ে নিজের পি.এফের ১৫লাখ টাকা তুলে ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে গিয়ে সর্বস্ব খুইয়ে বসে আছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলা থানার গোবর্ধনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহড়দা পোষ্ট অফিসের অন্তর্গত সিতি বিন্দা গ্রামের নকুল সাহু। নকুলবাবু তার ছেলে ইন্দ্রজিৎকে এমবিবিএস পড়ানোর জন্য ৩২লাখের প্যাকেজের মধ্যে ১৫লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছেন কিন্তু ইন্দ্রজিৎ এখন ফিলিপিন্সের বদলে ব্যাঙ্গালুরুর কলেজে একটি অখ্যাত কোর্স করছে তাও নিজে পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে।
শুধু ইন্দ্রজিৎ নয়, পিংলা, ময়না, সবংয়ের এরকমই অজস্র ছাত্রছাত্রী আজ প্রতারনার শিকার। যার মধ্যে রয়েছে বাঁকি গ্রামের দীপ্তিমা সামন্ত, সবংয়ের মৌসুমী মন্ডল, নারাঙ্গা দিঘীর কেয়া দাস, দক্ষিণ ময়নার সুশান্ত বেরা, আনন্দপুরের সায়ন জানা, বাকচার তনুশ্রী মন্ডল, দোনাচকের দীপশিখা মাইতি সহ চল্লিশ পঞ্চাশ জন। পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এরকমই বহু ছেলেমেয়ের অভিভাবকের কাছ থেকে এমবিবিএস বিএসসিনার্সিং বি ফার্ম,ডি ফার্ম দেশ-বিদেশে পড়ানোর সুযোগ করে দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেছে Plan Edu Consultant Learning Solution Pvt. Ltd নামে একটি সংস্থা।
ময়নার বলাইপন্ডা বাজারে একটি অফিস খুলে ২০১৯ সাল থেকে পড়ানোর নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা উচ্চমাধ্যমিক পাস করা ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে তুলছিল। সেই ছেলেমেয়েদের এখন হোস্টেলের খাবার বন্ধ, পরীক্ষা দেওয়া বন্ধ কারন অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা তুললেও টাকা দেওয়া হয়নি কলেজগুলিকে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় দুই মেদিনীপুরের ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবকরা ময়নার বলাইপন্ডার সেই সেন্টারের সামনে জড়ো হয়ে ঘেরাও করে ওই সেন্টারে কর্মরত কৃষ্ণা পড়িয়া নামের এক মহিলাকে যিনি ওই সেন্টারের চার্জে ছিলেন। ময়না র কাঁচিচক গ্রামের বাসিন্দা এই কৃষ্ণাও ছাত্রছাত্রীদের ফোন নম্বর জোগাড় করে তাদের এবং অভিভাবকদের ফোন করত, প্রলুব্ধ করত বিভিন্ন কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার জন্য। বিক্ষোভের সময় পরিস্থিতি জটিল হলে ময়না থানার পুলিশ এসে মহিলাটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসে।
শনিবার সকালে ময়না থানায় পৌঁছান অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা। থানার পক্ষ থেকে বলাইপণ্ডার ওই সেন্টারের মালিক পাঁশকুড়া কাসাবারে বাসিন্দা নব কুমার পালকে ডেকে পাঠানো হলেও খোঁজ মেলেনি তার। এর আগেও ২০২০ সালে পিংলা থানায় এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল বলে অভিভাবকদের দাবি। অভিভাবকরা এখন পড়েছেন দো-টানায়। অভিযোগ করলে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের বকেয়া ক্লাশ, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ থাকবেনা। তাঁরা চাইছেন পুলিশ অভিযুক্তদের চাপ দিয়ে কলেজ গুলোর বকেয়া মিটিয়ে দিক যাতে তাদের কোর্স শেষ হয় কিন্তু মূল অভিযুক্ত ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ইন্দ্রজিৎ জানিয়েছে, ‘বাবার সর্বস্ব চলে গেছে আমাকে পড়াতে প্রতারকদের পাল্লায় পড়ে। এখন আমার আত্মহত্যা ছাড়া পথ নেই।’