নিজস্ব সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি, ২১ ফেব্রুয়ারি: সমাজের স্বার্থে উন্নয়ণমূলক নানা কাজ করে চলেছে গবেষক দম্পতি অনির্বাণ নন্দী ও পৌলমী নন্দী (চাকি)। প্যাড ব্যাংক থেকে চাষি বন্ধু পোর্টাল, ১০ টাকার টিউশন হোক কিংবা ঋতুচক্রে সচেতনতা; নানা কাজ করে সমাজে নজির গড়েছেন শিলিগুড়ির এই কৃতি দম্পতি। প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলাদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে তাঁরা ১০ টাকার টিউশন চালু করেছেন। আজ প্রশিক্ষণ পেয়ে উপকৃত অনেকেই। সেই কাজ করতে করতে চার বছর অতিক্রম করল অনির্বাণ-পৌলমীর।
রবিবার শিলিগুড়ির শক্তিগড়ের রবীন্দ্র মঞ্চ ও পাঠাগারে তাঁদের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ৪র্থ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর এই অনুষ্ঠানেই বসে চাঁদের হাট। সাংবাদিক থেকে সমাজ সংস্কারক, শিক্ষক থেকে শতবারের রক্তদাতা; একাধিক মণি মানিকে জ্বলজ্বল করেছিল আজকের আসর। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত করিমুল হক, সাংবাদিক অংশুমান চক্রবর্তী ও তুষার নন্দী, সমাজসেবী ও রক্তদাতা উৎপল কুমার, সমাজসেবী উজ্জয়িনী দেব মুখোপাধ্যায় ও সোনালি সামন্ত।
এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে করিমুল হক বলেন, ‘মানুষ যতদিন আমার পাশে থাকবে, আমিও তাঁদের স্বার্থে কাজ করে যাব। আমি সেলাই ট্রেনিং সেন্টার খুলেছি গ্রামের মেয়েদের জন্য। তাঁদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে। আপাতত বাড়িতেই এক কোটি টাকা অর্থের সাহায্যে হাসপাতাল তৈরি করছি ও মানুষের সেবায় নেমে পড়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘যাঁরা মহাপুরুষ ছিলেন, তাঁদের আদর্শ মেনে যদি আমরা কিছুটা হলেও চলি, তাহলে আমরা আদর্শ মানুষ হবো। মানুষের জন্য লড়াই করতে হবে, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাহলেই আমরা প্রকৃত মানুষ। আমার হাসপাতালের নাম করিমুল হক মানবসেবা সদন সোসাইটি রেখেছি।’ করিমুল বাবু বিশেষ করে বৃদ্ধ মা বাবাকে দেখাশোনা ও নিস্বার্থভাবে মানুষকে সাহায্য করার উপর জোর দিয়েছেন।
অন্যদিকে উজ্জয়িনীদেবী বলেন, ‘অনির্বাণ পৌলমী সমাজের কাছে বিশাল একটি উদাহরণ। পড়াশোনা, ডিগ্রি, ও ব্যস্ততার পাশাপাশি যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা উৎসাহিত হয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিতে হবে। তবে, কাল করব, পরশু করব বা ওরা তো করছেই, আমরা আবার কেন করব? এসব না ভেবে সামনে এগিয়ে আসতেই হবে। নয়তো আমাদের শিক্ষা মিথ্যে। পড়াশোনা শিখে যদি সেটা মানব কল্যাণের কাজে না আসে, তেমন শিক্ষা রেখে লাভ নেই।’
গবেষণা, চাকরি তৎসঙ্গে সমাজসেবা, কখনই ক্লান্তির ছাপ থাকেনি অনির্বাণ ও পৌলমীর কপালে। হাসিমুখে সবটা দিয়ে সমাজকে গড়ে তোলার কাজে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন তাঁরা।
গবেষক দম্পতি অনির্বাণ নন্দী ও পৌলমী নন্দী (চাকি)-র কথায়, ‘সমাজসেবা মানেই সমাজের প্রতি আমাদের অবদান। আমরা প্রত্যন্ত চা বাগানের মহিলা ও যুবতীদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ১০ টাকার টিউশন ও প্যাড ব্যাংক চালু করেছিলাম। আজ তা পৌঁছে গিয়েছে কয়েক হাজার মানুষের কাছে। দেখতে দেখতে ৪ বছর অতিক্রম করল আমাদের এই কাজ। মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান আমাদের এনার্জির যোগান দেয়। গবেষণার পাশাপাশি আমরা এই কাজ করে যেতে চাই। যাতে পরবর্তীতে কেউ উপক্ষিত না থাকে।’