ওয়েব ডেস্ক: বেসরকারি হাসপাতাল মানেই ঝাঁ চকচকে কেবিন, আইসিইউ আর চোখের নিমেষে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ। অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায় পুরো টাকা না মেটাতে পারলে রোগীর মৃতদেহও আটকে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ তবুও বহুমানুষের ভরসা সেই বেসরকারি হাসপাতাল। কিন্তু এই বেসরকারি হাসপাতালগুলি সাধারণ মানুষের জন্য কতটা নিরাপদ কিংবা আদেও নিরাপদ কিনা তা কিন্তু চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল আহমেদাবাদের কোভিড হাসপাতালে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ড। বৃহস্পতিবার হাসপাতালের আইসিইউতে শর্ট সার্কিটের কারণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৮ জন করোনা আক্রান্তের। এই ঘটনায় প্রশ্নের মুখে বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো। একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে বিল কমপক্ষে লাখ খানেক। আইসিইউ-র ভাড়া প্রায় কয়েক লক্ষ। কিন্তু একটি আইসিইউ কেবিন যেখানে নানারকম যন্ত্রাংশ থাকে, সেখানে সহজেই শর্ট সার্কিট হতে পারে। ফলে আদেও কি প্রতিদিন কেবিনগুলির ওয়ারিং চেক করা হয়? এবিষয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
প্রথমত, এত বড় হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যাবস্থা কি আদেও ছিল? যদি থাকে তবে আগুন লাগলো কিভাবে? দ্বিতীয়ত, করোনা পরিস্থিতিতে পরিকাঠামোর তুলনায় বেশী রোগীকে ভর্তি করায় বিদ্যুতের ওপর চাপ পড়াতেই কি এই দুর্ঘটনা? তৃতীয়ত, সরকারের তরফে হাসপাতালগুলিতে, বিশেষত করোনা পরিস্থিতিতে বিপদ এড়াতে পুরনো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলি বাতিল করে নতুন যন্ত্রাংশ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আদেও কি সরকারের সেই নির্দেশ মেনে নতুন যন্ত্রাংশের ব্যবহার করেছিল এই বেসরকারি হাসপাতাল? বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডের জেরে এধরণের একাধিক প্রশ্নের মুখে আমেদাবাদের বেসরকারি হাসপাতাল। জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারের অগ্নিকান্ডে আমেদাবাদের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ৮ জনের মধ্যে ৫জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা। ঘটনার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোট ৩৫ জন করোনা রোগীদের দ্রুত অন্য হাসপাতালে সরানো হয়েছে।
জানা গিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে আমেদাবাদের নভরংপুরার শ্রে সুপার স্পেশ্যালিটি হসপিটালটিকে আপাতত করোনা হাসপাতাল করা হয়েছে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সাড়ে তিনটে নাগাদ আচমকা হাসপাতালের আইসিইউ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই ধোঁয়া থেকে মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আইসিইউ ও সংলগ্ন ওয়ার্ড। গোটা হাসপাতাল ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। আগুন লেগেছে বুঝতে পেরে প্রাণ বাঁচাতে অসুস্থ অবস্থাতেই হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক রোগী। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দমকলের বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন। তবে উদ্ধারকার্য শুরু হওয়ার আগেই তীব্র আগুনে এক্কেবারে পুড়ে যান আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন ৮ করোনা আক্রান্ত রোগী। এরপর তাদের উদ্ধার করে রাতেই অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের মৃত্যু হয়৷ বেসরকারি হাসপাতালে এহেন গাফিলতিতে স্বাভাবিকভাবেই হাসপাতাল চত্ত্বরে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি মৃতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি আমেদাবাদ সরকারের তরফেও মৃতদের পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে৷ তবে সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করলেও মৃত মানুষগুলিকে কি আর ফিরে পাবে পরিবারের সদস্যরা? এদিনের এই ঘটনায় হাসপাতালে গাফিলতি ঠিক কতটা তাই এই মূহুর্তে খতিব দেখছেন আমেদাবাদ প্রশাসন।