Homeএখন খবরবিজেপিতে যোগদান দিয়েও জেলা পরিষদ সদস্য ফিরলেন তৃণমূলে; ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানোতর...

বিজেপিতে যোগদান দিয়েও জেলা পরিষদ সদস্য ফিরলেন তৃণমূলে; ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানোতর তুঙ্গে

নিজস্ব সংবাদদাতা: বেশ কিছুদিন আগে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মালদা জেলার তৃণমূলের ১৪ জন জেলা পরিষদ সদস্য সহ বেশ কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌড় চন্দ্র মন্ডলের হাত ধরে রাজ্য বিজেপি পার্টি অফিসে তৃণমূল করে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ফের ফিরলেন তৃণমূলে।

সে সময় বিজেপি নেতৃত্বের দাবী করেছিল জেলা পরিষদ বিজেপির দখলে চলে আসলো। কিন্তু সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই হরিশ্চন্দ্রপুর ৯ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের সদস্য সন্তোষ চৌধুরী সিদ্ধান্ত বদল করে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফিরলেন। কিছুদিন আগে বিজেপি দাবী করে মালদা জেলা পরিষদ তাদের দখলে। যদিও মালদা জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূর বলেন, মালদা জেলা পরিষদ তৃণমূলের দখলেই রয়েছে। অবশেষে সেই যোগ দেওয়া জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যেও একজন ফিরে এল তৃণমূলে। ঘরের ছেলে ফিরে এল ঘরে। কিন্তু এই ঘরে ফেরা নিয়ে দেখা গিয়েছে কিছুটা গোষ্ঠী কোন্দল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্তোষ চৌধুরী কে তখন গাদ্দার আখ্যা দিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা লাগাতার পোস্ট করেছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সন্তোষ চৌধুরী নিজেই প্রকাশ্যে জানালেন তিনি বিজেপিতে যোগদান করেন নি। তিনি তৃণমূলের রয়েছেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে তার নামে মিথ্যা কুৎসা ছড়ানো হচ্ছে এলাকায়। এই জন্যই তিনি সরব হয়েছেন।

এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বের দাবী, শুধুমাত্র দলের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্য এ ধরনের মিথ্যা খবর বিজেপি ছড়াচ্ছে। সন্তোষ চৌধুরী কখনই বিজেপিতে যোগদান করেন নি। একটা ভুল বোঝাবোঝি হয়েছিল তার জন্য একটা মিথ্যা খবর প্রচার হয়ে গিয়েছিল। আজ আমরা সেটা পরিষ্কার করে দিলাম। জেলা পরিষদ সদস্য সন্তোষ চৌধুরী তৃণমূলে রয়েছেন।

এদিকে এলাকার বিজেপির নেতৃত্ব দাবী করেছেন, এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব ভয় দেখিয়ে, চাপ দিয়ে সন্তোষ চৌধুরীর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছেন। তাছাড়া তিনি বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন। তার জন্য নির্দিষ্ট কাগজে স্বাক্ষর করেছেন। এখন চাপের মুখে নতি স্বীকার করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

এ প্রসঙ্গে ৯ নম্বর জেলা পরিষদ আসনের সদস্য সন্তোষ চৌধুরী জানান, তিনি কোনদিনও বিজেপিতে যোগদান করেনি। সন্তোষ বলেন, “জেলার দলত্যাগী জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে আমি অনুপস্থিত ছিলাম। আমি কাজের জন্য কয়েকদিন বাইরে ছিলাম। সে সময় আমার নামে ভুয়া খবর ছড়িয়ে এলাকার বিজেপির নেতারা দলের মধ্যে আমার বিরূপ ভাবমূর্তি তৈরি করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমি আগে তৃণমূলের ছিলাম, এখনও তৃণমূল এই আছি এবং আগামীতে আমার বিধানসভা এলাকায় ৪৫ নম্বর চাঁচলের নিহার রঞ্জন ঘোষের হয়ে প্রচারে নামব।

এদিকে সন্তোষ চৌধুরী দলত্যাগের খবর চাউর হওয়ার পরেই ফেসবুকে সন্তোষ চৌধুরীকে গদ্দার বলে অভিহিত করে পোস্ট করেছিলেন তৃণমূলের তুলসীহাটা অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম। এ প্রসঙ্গে তুলসিহাটা অঞ্চলের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি মনোজ রাম জানান, “আমি শুনেছিলাম বিজেপি রাজ্য পার্টি অফিস হোস্টিংসে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে সন্তোষ চৌধুরী বিজেপিতে যোগদান করেছেন এবং তার নাম সেখানে ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই আমি ওই ধরনের পোস্ট ফেসবুকে করেছিলাম। তাছাড়া আমাদের জেলা সভানেত্রী মৌসুম নূর ওনাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন। জেলা এবং ব্লক নেতৃত্বের নির্দেশ যতক্ষণ না আসে ততক্ষণ সন্তোষ চৌধুরী তৃণমূলে আছেন কি না সে বিষয়ে পরিষ্কার আমি কিছু বলতে পারব না।“

এদিকে এ প্রসঙ্গে বিজেপির হরিশ্চন্দ্রপুর মন্ডল সভাপতি রূপেশ আগারওয়াল জানান, “এরা তৃণমূল ছেড়ে বিভিন্ন শর্ত নিয়ে নিজের নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিজেপিতে যোগদান করেছিল। ভেবেছিল বিজেপিতে যোগদান করে বিধানসভার পদপ্রার্থী হতে পারবে। কিন্তু বিজেপি এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে দল চালায় না। বিজেপিতে আসতে গেলে তাকে প্রথমে বিজেপির সাধারণ কর্মী হয়ে থাকতে হবে। এরা তাই নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ না হওয়ায় দল ছেড়ে পুরনো তৃণমূলে ফিরে গেছে। এদের চলে যাওয়ায় দলে কোনও প্রভাব পড়বে না।“

এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর নম্বর ১ তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস জানান, একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল তার ফলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় সন্তোষ চৌধুরী দলত্যাগ করে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। উনি মালদা জেলা পরিষদের সভাধিপতি গৌড় চন্দ্র মন্ডলের চাপে সই করে দেন। পরে সেটা বুঝতে পারেন। আগামীতে ১০ নম্বর জেলা পরিষদের সদস্য শ্যামল মন্ডল ও ফিরবেন এই আশা করছেন বলেই মানিক বাবু জানান।

ভোটের প্রাক্কালে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে চলছে দলবদল এর নাটক। মানুষ এই দলবদলের রাজনীতি কীভাবে নেয় সেটাই দেখার বিষয়। তবে নির্বাচন প্রাক্কালে এই ভাবে একবার দল ছেড়ে দেওয়া, ফের আবারও দলে ফিরে আসা এবং এই ঘটনা ঘিরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশ দলীয় নেতা-কর্মী মাঝে, এতে যে শাসক শিবির কিছূটা হলেও অস্বস্তিতে পড়ছে, সে বিষয়ে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।

RELATED ARTICLES

Most Popular