নিজস্ব সংবাদদাতা: ২৪ ঘন্টা পরে অষ্টমদফা তথা শেষদফার ভোট আর দুদিনের মাথায় ভোট গণনা অথচ এখনো নিজেদের ভোটই দিতে পারেননি বহু ভোট কর্মী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকেই এমন খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিজেদের মতামত প্রয়োগ করার জন্য মরিয়া ওই ভোট কর্মীরা ছুটছেন নির্বাচন কমিশন থেকে পোস্ট অফিসে। কমিশন বলছে পোস্টাল ব্যালট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আর পোস্ট অফিস বলছে তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি ব্যালট।
গত কয়েকটি ভোটে ভোট-কর্মীদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী ও শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চ। বেশকিছু সাফল্যও অর্জন করেছেন তাঁরা। বাংলায় নির্বাচনী সংস্কারে মান্যতা প্রাপ্ত সংগঠনের রাজ্য সম্পদক কিংকর অধিকারী জানিয়েছেন, “আমরা খবর পাচ্ছি এখনও পর্যন্ত জেলার বহু ভোট কর্মী তাদের পোস্টাল ব্যালট পাননি! এঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন ভোটাধিকার প্রয়োগে। এতো গণতন্ত্রের লজ্জা!’
তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ভোট হয়ে গিয়েছে গত ২৭ মার্চ এবং ১ এপ্রিল কিন্তু আজ পর্যন্ত জেলার বহু ভোটকর্মীর পোস্টাল ব্যালট পেপার এসে পৌঁছালো না। বহুবার অভিযোগ জানানোর পর জেলা নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছিলেন, ধৈর্য ধরুন নিশ্চয় পেয়ে যাবেন। এখন তাঁরা জানাচ্ছেন, তাঁদের কোনো ত্রুটি নেই। পোস্ট অফিসের কোন গন্ডগোল থাকতে পারে। কার ত্রুটি আমরা জানি না। ভোট কর্মীগণ যাতে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। ভোট কর্মীদের ভোটের কর্তব্য পালন করানোর জন্য যে তৎপরতা দেখিয়েছেন নির্বাচন কমিশন যতটাই উদাসীনতা দেখাচ্ছেন তাঁদের মতামত প্রয়োগের অধিকারকে নিশ্চিত করতে। এটা চরম লজ্জার!”
ডেবরা থানার ভগীরথপুরের বাসিন্দা বৃন্দাবনচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্রীকান্ত জানা বলেন, ‘আমার ভোটের দায়িত্ব ছিল চন্দ্রকোনা বিধানসভা এলাকায়। ভোট ছিল ১লা এপ্রিল। ওই একই দিনে ভোট ছিল আমার ডেবরা বিধানসভা এলাকায়। স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে হবে। যেখানে আমার ভোট দেওয়ার কথা সেই বুথে ভোট দেওয়ার সময় আমার স্ত্রী দেখেও এসেছেন যে আমার নামে পোস্টাল ব্যালট কথা লেখা রয়েছে। অথচ আজ অবধি সেই ব্যালট পাইনি। উপযুক্ত জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি পোস্টাল ব্যালট ছেড়ে দেওয়া হয়েছে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে কিন্তু পোস্ট অফিস বলছে তাঁদের কাছে ব্যালট এসে পৌঁছায়নি।”
একই অভিজ্ঞতা শালবনীর শিক্ষক সুকান্ত চক্রবর্তীরও। তাঁর নিজের বিধানসভায় ভোট ছিল ২৭শে মার্চ আর ভোট গ্রহণের দিন ছিল ১লা এপ্রিল। ২৭শে মার্চের আগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁর যেহেতু ১তারিখ ভোটগ্রহণ তাই ২৭ তারিখ নিজের বুথেই ভোট দিতে পারবেন। শালবনী হাইস্কুলে নিজের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন তাঁর নামে পোস্টাল ব্যালট ইস্যু হয়েছে। তাই ভোট দিতে পারেননি। সেই পোস্টাল ব্যালটের জন্য আজও অপেক্ষা করে আছেন। বিডিও থেকে জেলাশাসক, নির্বাচন দপ্তর সর্বত্রই জানিয়েছেন কিন্তু এখনও অবধি সুরাহা হয়নি।
পোস্টাল ব্যালট এসে পৌঁছায়নি খোদ কিংকর অধিকারীর কাছেও। তিনি নিজেও ভোট গ্রহণ করেছেন। ক্ষুব্ধ কিংকর বাবু জানিয়েছেন, ” সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি, ভোট গণনার পূর্বে প্রতিটি ভোট কর্মীর পোস্টাল ব্যালট পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভোট কর্মীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করুক। কোনো অজুহাতেই নির্বাচন কমিশন ভোট কর্মীদের গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার কেড়ে নিতে পারে না। আগে সমস্ত ভোটকর্মীর ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করে তারপর ভোট গণনা হোক।”