ভীষ্মদেব দাশ, খেজুরি (পূর্ব মেদিনীপুর): চিনের পিতায়া বা ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের ড্রাগন ফলের চাষ এখন খেজুরিতে। ফল দেখতে চাষির বাগানে ভিড় জমাচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। ফল কিনতেও বাসিন্দাদের ভিড়। ক্যাকটাস (ফণিমনসা) জাতীয় উদ্ভিদের ফল ড্রাগন ফল নামে পরিচিত। যা আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, মেক্সিকো, এশিয়া সহ ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে দোআঁশ মাটিতে জন্মায়।
চিকিৎসাবিজ্ঞান ও চাহিদা অনুযায়ী বাগানের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থনৈতিক, শারীরিক উন্নতির ক্ষেত্রে এই ফলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরির মাটিতে সফল হল ড্রাগন ফল চাষ। ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে খেজুরি-২ ব্লকের ৫জন চাষিকে ড্রাগন ফলের চারা দেওয়া হয়েছিল। খেজুরি-২ ব্লকের ব্লক কৃষি অধিকর্তা প্রীতম দাস জানান, আত্মা প্রকল্পের মাধ্যমে ৫জন চাষিকে চারা দেওয়া হয়েছিল।
৫জন চাষির বাগানেই ফল হয়েছে। তবে নরশূল্যাচকের দেবাশীষ হাজরার বাগানে ভালো ফল ফলেছে। আমরা সিমেন্টের খুঁটি, চারাগাছ দিয়েছিলাম। এবছরও ৫জন চাষিকে নতুন করে চারা দেব। খেজুরির মাটিতে ড্রাগন চাষ হবে। পরীক্ষাতে প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছি। আগামী বছর থেকে ফলগুলো বাইরে বিক্রি করার জন্যও জেলা কৃষি অধিকর্তার সাথে কথা হয়েছে। ড্রাগন ফলের তিনটি শ্রেণীর মধ্যে গোলাপি রঙের প্রজাতির চারা বিলি হয়েছে, তবে আরও দামি হল হলুদ রঙের প্রজাতির ড্রাগন ফল। হলুদ রঙের প্রজাতির চারা আনার চেষ্টা চলছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ করতে খুব ভালো কাজ করে ড্রাগন ফল। পাইটোঅ্যালবুমিন যৌগ ও ভিটামিন-সি পরিপূর্ণ থাকায় রোগ নিরাময়ে মহৌষধি ড্রাগন ফল।
শর্করা,প্রোটিন,ক্যালসিয়াম,আয়রন,ফসফরাস, ক্যারোটিন,ভিটামিনে পরিপূর্ণ ড্রাগন ফল। ফলে ক্যানসার, চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে সকল রোগের যম এই ফল। এইমুহুর্তে জেলায় সেভাবে পরিচিতি হয়নি ড্রাগন ফলের, চাষও খুব একটা হয়না। কিন্তু বাইরের বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম, ৫৫০-৭০০টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় ফলটি। বিদেশি ড্রাগন ফল চাষে সফল খেজুরির চাষি দেবাশীষ হাজরা। খেজুরি-২ ব্লকের হলুদবাড়ি পঞ্চায়েতের নরশূল্যাচকে বাড়ি দেবাশীষ বাবুর। চাষাবাদ করা তাঁর নেশা। ভেষজ উদ্ভিদের পাশাপাশি আম, পেয়ারা, কমলালেবু চাষে পারদর্শী তিনি। বিভিন্ন কৃষি মেলা প্রদর্শনীতে গাছ, ফুল, ফল নিয়ে যান তিনি। একাধিক পুরষ্কারও রয়েছে তার ঝুলিতে। নতুনত্ব চাষের ক্ষেত্রে ঝোঁক বেশি বরাবর।
ড্রাগন ফল নাম শুনেই ব্লক অফিস থেকে আনেন চারাগাছ। উৎসাহের সাথে লাগিয়েছেন ৪৮টি গাছ। সেই গাছগুলো এখন ফলে ভর্তি। ২০১৯সালে মে-জুন মাসে তিনি চারা লাগিয়েছিলেন। এক বছরের মাথায় গাছগুলোতে ফল হয়েছে। কোনও ফলের ওজন ৩০০গ্রাম আবার কোনও একটা ৪০০গ্রাম। এলাকার মানুষরাই বাড়ি থেকে ফল কিনে নিয়ে যায়। বাজারমূল্য বেশি হলেও ৪০০টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন দেবাশীষ বাবু।
ভালোবেসে নতুন ফল উপহারও দিচ্ছেন ঘনিষ্ঠদের। ফল দেখতে, কিনতে সারাক্ষণ ভিড় বাড়িতে। দেবাশীষ বাবু বলেন, জৈব সার দিয়েই গাছ বড় করেছি। ১বছর গাছ পরিচর্যা করার পর ফল পেলাম। রাতে ফোটে ড্রাগন ফুল। রাতে ৯টার সময় ফুল ফোটার অপেক্ষায় বসে থাকি। দারুণ অভিজ্ঞতা, আনন্দ পেলাম।
খেজুরির ভৌগোলিক গবেষক তথা কলাগেছিয়া জগদীশ বিদ্যাপীঠের ভূগোল শিক্ষক মিহির কুমার প্রধান বলেন, ড্রাগন ফল হল সর্বরোগহরা। বেলে দোআঁশ মাটিতে এই গাছ হয়। মাটি উঁচু করে রোপন করলে অর্থাৎ জলনিকাশী ভালো রাখলে গাছ নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে না। ক্যাকটাস জাতীয় গাছ এই গাছ দেড় থেকে ২মিটার লম্বা হয়। জৈব সার পেলে গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে। খেজুরির পরিবেশ, মাটি এই ফল চাষের জন্য আদর্শ। ড্রাগন গাছ সরকারিভাবে চাষিদের দেওয়া হয়েছে। সঠিক ধারণার অভাবে অনেক চাষি গাছ বাঁচাতে পারেননি। তবে ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও বাজারের চাহিদা আগামীদিনে অনেক চাষিকে চাষ করতে উৎসাহিত করবে।