গৌরনাথ চক্রবর্ত্তী, পূর্ব বর্ধমানঃবিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো ‘কাটোয়া জাগরী’র আয়োজনে তিনদিন ব্যাপী নবম বর্ষ নাট্যোৎসব। ২০–২২ ডিসেম্বর কাটোয়ার সংহতি মঞ্চে অনুষ্ঠিত এই নাট্যোৎসবে ব্যান্ডেল নান্দনিক, বালিগঞ্জ স্বপ্নসূচনা ও কলকাতার প্রাচ্য নাট্যদল তাদের প্রযোজিত নাটক মঞ্চস্থ করে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
‘কাটোয়া জাগরী’র আত্মপ্রকাশ হয়েছিল মূলত গানের দল হিসেবে। গণসংগীতকে অবলম্বন করে পথ চলা শুরু হলেও স্বল্পকালের মধ্যেই গণসংগীত, লোকগান, রবীন্দ্র-নজরুল-অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত-দ্বীজেন্দ্রলালের গান সহ স্বর্ণযুগের বাংলাগানে তারা রাজ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
২০১১ সাল থেকে শুরু হয় তাদের উদ্যোগে তিনদিন ব্যাপী নাট্যোৎসব। কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের বহু নাট্যদল বিগত নয় বছরে এই উৎসবে অংশ নিয়েছে। বর্তমান বছরে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও সংস্থার সদস্যরা দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করে গিয়েছে নাট্যোৎসবকে সফল করার জন্য। কারণ, এ বছর সংহতি মঞ্চে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ শুরু হয়েছে গত অক্টোবরে। পুরোনো গ্ৰীনরুম ভেঙে ফেলা হয়েছে নতুন বিল্ডিং হবে বলে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ফলে গ্ৰীনরুম নেই, মঞ্চের একপাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়ার রাস্তা নেই, মঞ্চের কার্টেন-কল (মাঝের পর্দা) ও উপরের স্কাই খোলা— এই অবস্থায় পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে, সংস্থার সদস্যরা যেকোন পরিস্থিতিতে নাট্যোৎসব করতে প্রস্তুত বলে জানিয়ে দেন। মূলত সদস্যরা রজতজয়ন্তী বর্ষে ‘জাগরী’র নাট্যোৎসব হবে না– এটা মেনে নিতে পারেনি বলেই অসম্ভবকে তারা সম্ভব করতে পেরেছে। আবার এর মধ্যেই তারা নিয়মিত নাট্যচর্চাও চালিয়ে গেছে। গত ২১ নভেম্বর শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে এবং ১ ডিসেম্বর কলকাতার মিনার্ভা থিয়েটারে তাদের নিজস্ব প্রযোজনা মঞ্চস্থ করে এসেছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
এবারের নাট্যোৎসবে প্রথমদিন ব্যান্ডেল নান্দনিক মঞ্চস্থ করে দুটি স্বল্পদৈর্ঘের নাটক, হাজার মাইল অন্ধকার ও নীল হাতছানি। সমাজের হাজারো সমস্যার মধ্যে গণপ্রহারে মৃত্যু ও মোবাইলের বিষময় ফল– এই দুটি বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে। সমীরণ সমাদ্দারের পরিচালনায় নাটক দুটি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দ্বিতীয় দিন বালিগঞ্জ স্বপ্নসূচনা পরিবেশিত ‘হৃদপিন্ড’ নাটকটি বিজয় মুখোপাধ্যায় ও সুদীপ্ত সরকারের নির্দেশনা ও পিয়ালী বসু চট্টোপাধ্যায়, মুরারী মুখোপাধ্যায় এবং বিজয় মুখোপাধ্যায়ের অভিনয়গুণে হলে উপস্থিত মানুষের কাছে উপভোগ্য হয়ে ওঠে। মানুষ পাশাপাশি থেকেও মনের হদিস পায় না। তাই সে সারাজীবন খুঁজে বেড়ায় ‘মনের মানুষ’ আর ‘মানুষের মন’কে। এমন একটা সিরিয়াস বিষয়কে নিয়ে সিরিও কমিক এই নাটকটি দেখতে দেখতে হল হাসি আর করতালিতে বারেবারেই মুখরিত হয়ে ওঠে।
শেষদিন রবিবার পরিবেশিত হয় কলকাতা প্রাচ্য পরিবেশিত নাটক ‘খেলাঘর’।
দেবশংকর হালদার, চৈতি ঘোষাল, অঞ্জনা বসু ও বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখার জন্য কাটোয়ার মানুষের আমন্ত্রণপত্র সংগ্ৰহ করার ক্ষেত্রে তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঐ দিন বিকেল থেকেই নাট্যপিপাসু দর্শকদের ভীড় উপচে পরে সংহতি মঞ্চ চত্বরে। আমন্ত্রণপত্র শেষ হয়ে যাওয়ায় বহু মানুষকে বিফল মনোরথে ফিরে যেতেও দেখা যায়।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশনায় এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ের মুন্সীয়ানায় নাটকটি সকলকে তৃপ্ত করে। বহু মানুষ একবাক্যে স্বীকার না করে পারেননি যে, জাগরী’র এই উদ্যোগ তাদের বহু ভালো নাটক ও বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্বের অভিনয় দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। বছর-বছর যেন এই সুযোগ তারা পান– জাগরী’র কাছে এটাই তাদের প্রার্থনা।