শশাঙ্ক প্রধান: মাদক পাচারের দায়ে একটি বেসরকারি মোবাইল পরিষেবা কোম্পানির এক উচ্চ পদস্থ কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার অন্তর্গত তেমাথানি বাজারে শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি বাড়িতে মাদক সরবরাহ করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েছে ওই যুবক। জানা গেছে মাদকাসক্তর বাড়িতে গিয়ে মাদক সরবরাহ করতে গিয়ে পরিবারের মহিলার নজরে পড়ে যায় ওই মাদক সরবরাহকারী। এরপরই মহিলার চিৎকারে ছুটে আসেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তারাই বামাল ধরে ফেলে ওই অভিযুক্ত যুবককে। সবংয়ের তেমাথানির জনবহুল বাজারের এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে এলাকায়। ওই এলাকায় সম্ভ্রান্ত পরিবারের পরিচয়ে থাকা ওই যুবক যে মাদক সরবরাহকারী তা রীতিমত বিশ্বাসই করতে পারছেননা স্থানীয় বাসিন্দারা।
গোটা ঘটনায় চোখ কপালে উঠেছে পুলিশেরও কারন প্রাথমিক তদন্তে তাঁরা জানতে পেরেছে তেমাথানি এলাকার বহু যুবকের কাছেই মাদক পৌঁছে দিত ওই যুবক। বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে চাননি সবং থানার আধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এই তদন্ত। গোটা ঘটনা জানানো হয়েছে উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের এবং তারাই বিষয়টি তদন্ত করে দেখছেন।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা গেছে তেমাথানি বাজারে চঞ্চল ভূঁইয়া (নাম পরিবর্তিত) দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। তিনি প্রায় মরন রোগেই ভুগছেন। পরিবারের সন্দেহ দীর্ঘদিন ধরেই মাদক সেবনের ফলেই চঞ্চলের এই মরনদশা। এই চঞ্চলের বাড়িতেই শুক্রবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ যান সৌভিক দাস নামে একটি মোবাইল পরিষেবা কোম্পানির টিম লিডার। তাঁকে দেখেই বেরিয়ে আসেন মাদকাসক্ত চঞ্চল। এই সময় সৌভিকের হাতে একটি লম্বা মত কৌটো দেখে সন্দেহ হয় চঞ্চলের মায়ের। বাড়ির পরিবার জানত চঞ্চল মাদকাসক্ত কিন্তু বাড়ি থেকে বেরুতে না পারা ছেলেটি কিভাবে মাদক পাচ্ছে তা নিয়ে নাজেহাল ছিল পরিবার। ধারণা ছিল কেউ একজন ছেলেকে মাদক সরবরাহ করছে কিন্তু কে সরবরাহ করছে এটা খুঁজে পাচ্ছিলেননা তাঁরা।
জানা গেছে চঞ্চলের মায়ের প্রশ্ন শুনেই ঘাবড়ে যায় সৌরভ । হাতের কৌটো আড়াল করতে যায় সে কিন্তু ততক্ষণে পরিবারের অন্য লোকেরা ঘিরে ফেলে তাকে। তার হাত থেকে উদ্ধার হয় কৌটো। যার মধ্যে থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু অদ্ভুদ ধরনের পুরিয়া। এরপরই সবং পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় তাকে। প্রাথমিক ভাবে ওই মাদক ব্রাউন সুগার বলেই জানা গেছে।
এদিকে সৌভিক দাস মাদকের কারবার করে জানার পর চমকে উঠেছে গোটা তেমাথানি। গত প্রায় সাড়ে তিনবছর ধরে এই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকেন সৌভিক। সঙ্গে থাকেন স্ত্রী, শিশুপুত্র এবং বিধবা মা। নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর এলাকার বাসিন্দা সৌভিককে প্রায় সবাই চিনত মিশুকে এবং আড্ডাবাজ হিসাবে। চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডায় মেতে থাকতেন স্থানীয় যুবকদের সাথে কিন্তু তলে তলে সেই যুবকদের সাথেই ঘনিষ্ঠতা করে তাঁদের টেনে আনতেন মাদক দুনিয়ায় যাতে তাঁর র্যাকেট ফুলে ফেঁপে ওঠে এবং হয়েও ছিল তাই। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে তেমাথানি এলাকার একাধিক যুবকের নাম যারা শিকার হয়েছে সৌভিকের। আর তাতেই জানা গেছে শুধু তেমাথানি নয় আশেপাশের বহু এলাকাতেই ছড়িয়ে পড়েছিল সৌভিকের এই চক্র।
অবশ্য সৌভিক একা নয় পুলিশের ধারণা আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে এই মাদক চক্রে। জানা যাচ্ছে ওড়িশার জলেশ্বর থেকে এই ব্রাউন সুগার এসে পৌঁছাতো তারপর সৌভিকদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে পড়ত মাদকাসক্ত যুবকদের কাছে। রাতভর ম্যারাথন জেরা করে সৌভিকদের কাছ থেকে পুরো র্যাকেটের খোঁজ পেতে চাইছে পুলিশ। ধৃত যুবকের অবশ্য দাবি সে নিজে এই কারবার করেনা। মাদকাসক্ত যুবকের বারংবার অনুরোধে সে অন্য একজনের কাছ থেকে মাদক নিয়ে তাকে দিতে গেছিল। ওই যুবকের দাবি অনুযায়ী জানা গেছে সবং থানার বেনেদীঘি, বাড়জীবন, বাদলপুর সহ প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই মাদক কারবারিরা।