নিজস্ব সংবাদদাতা: আ্যলার্জি ছিল তাঁর। বিভিন্ন সময়ে শরীরে র্যাশ বেরুতো। আর সে কারণেই করোনা ভ্যাকসিন নেননি তিনি। কিন্তু যে ভয়ে তিনি ভ্যাকসিন নেননি সেই আ্যলার্জি এড়িয়ে করোনাকে এড়াতে পারলেননা তিনি। আর সেই করোনাতেই শেষ অবধি প্রাণ হারালেন কলকাতার এক তরুণী চিকিৎসক। মাত্র ৪০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন কলকাতার একটি বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. রেশমি খাণ্ডেলওয়াল । মৃত্যুর আগে শেষ ১০দিন টানা ভেন্টিলেশনে থেকেও শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার একটি বেসরকারি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তরুণী ডাক্তার।
চিকিৎসকের সতীর্থরা জানিয়েছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে MBBS পাশ করেছিলেন রেশমি খাণ্ডেলওয়াল। আর সেখানে থেকেই MD করেন তুখোড় সেই মেধাবিনী। এরপর যোগ দেন কলকাতার এক বেসরকারি নার্সিংহোমে। স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে যথেষ্ট নামডাক হয়েছিল মাত্র কয়েক বছরেই। নিজের ক্ষেত্র ছাড়াও করোনা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু অ্যালার্জি জনিত সমস্যার কারনে টিকা নেননি ডা. রেশমি খাণ্ডেলওয়াল। আর সেই ভয়ই হয়ত কাল হল তাঁর।
মাত্র ৪০ বছর বয়সে রেশমি খাণ্ডেলওয়ালের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন চিকিৎসকদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের আহ্বায়ক রাজীব পাণ্ডে। ডাঃ পান্ডে আক্ষেপ করে বলেছেন, “সময়মতো টিকা নিতে পারলে হয়তো রেশমি খাণ্ডেলওয়ালের এমন পরিণতি হত না।” অ্যালার্জি জনিত সমস্যা থাকলে কী করা উচিত সেই সম্পর্কে আগেই জানানো হয়েছিল, সাধারণ অ্যালার্জিগুলি মানুষের থাকে যেমন, অল্পতেই সর্দি-কাশি হওয়া, কিছু খেলে গা-হাতে র্যাশ, চুলকানি, ধুলোতে অ্যালার্জি থাকলে একজন স্বছন্দে ভ্যাকসিন নেওয়াই যায়। তবে সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনেটরকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে অ্যালার্জির কথা জানাতে হবে। আর তা বাধ্যতামূলক।
জানা গিয়েছে, ‘আর্টিক্যারিয়া’ (Urticaria) অ্যালার্জি ছিল ডা. রেশমি খাণ্ডেলওয়ালের। যাতে সারা গায়ে চাকা চাকা হয়ে যায় এবং প্রবল চুলকানি হয়। অ্যালার্জি বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানিয়েছেন, সিভিয়ার ‘আর্টিক্যারিয়া’ হলে ভ্যাকসিন নেওয়া সম্ভব নয়। যদি নিতেও হয় তাহলে খুব বড় মাপের চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে আগে অ্যালার্জির প্রকোপ কমানোর জন্য ওষুধ খেতে হবে। তবে তাতেও বিপদ থেকে যায়।
রেশমি খাণ্ডেলওয়ালের এই অ্যালার্জি কতটা সিভিয়ার ছিল সেই সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। তবে করোনা আক্রান্ত চিকিৎসককে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। করোনা যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের প্রায় ৪০ জন চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন। এঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ চিকিৎসকরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন বেশ কয়েকজন তরুণ চিকিৎসকও।