হামর মাঁঞভাখি কুড়মালি দীপ্তি মাহাত
(গবেষক ছাত্রী, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়)
মাতৃ স্বাদ থেকে আজও বঞ্চিত কুড়মালি ভাষা ৷
মাতৃজঠর থেকে শেখা ভাষা একদিন মুছে যায় ৷ কুড়মালি ভাষার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজ নেই বললেই চলে ৷ কোথায় যেন ভাষার সঙ্গে ভাষার টিকে থাকার লড়াই ৷ চাপিয়ে দেওয়া ৷ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাষা গোষ্ঠীকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেওয়ার লড়াই ৷
রাষ্ট্র বলছে প্রত্যেক মানুষ তার নিজের ভাষায় কথা বলবে, সংবিধান বলছে প্রত্যেক মানুষ তার মাতৃভাষায় কথা বলবে তার অধিকার আছে ৷ ভাষার জন্য মানুষ শহীদ হচ্ছে, ভাষার জন্য দেশ ভাগ হচ্ছে ৷ ভাষার মধ্যে দিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ এক অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় করছে, ভাষায় মানুষ্য জাতির মেরুদন্ড ৷ রাষ্ট্র বা সরকার স্বীকৃতি দিচ্ছে, কিন্তু চর্চা হচ্ছে হচ্ছে কই ?
ভাব বিনিময়ের মাধ্যম হলো ভাষা ৷ কিন্তু নীতিগত বৈষম্যর স্বীকার হচ্ছে , ষড়যন্ত্রের স্বীকার হচ্ছে, লুপ্ত হচ্ছে অনেক প্রাচীনতম ভাষা ৷ এই ধরুন কুড়মালি ভাষা স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৭ সালে ৷ সঙ্গে রাজবংশী, কামতাপূরি দ্বিতীয় রাজভাষা হিসাবে আলোচনা,সেমিনার, সাহিত্যে বিস্তৃত ভাবে আলোচনা হচ্ছে ৷ প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠিত রুপ দেওয়ার উদ্যেগই বা হচ্ছে কই! প্রাত্যহিক জনজীবনে ব্যবহৃত ভাষার মূল্যায়নই বা হচ্ছে কোথায়! প্রত্যেক ভাষায় স্ব-স্ব স্বন্ত্রতা আছে ! তার নিজস্ব ভাব বিষয় বস্তু ব্যকরন গত গুন আছে ৷ বার বার প্রাতিষ্ঠানিক জায়গা থেকে উপ বলে ষড়যন্ত্রের স্বীকার হচ্ছে না তো?
প্রত্যেক ভাষায় সংরক্ষন হোক, চর্চা হোক, সবাই নিজের ভাষায় কথা বলুক ৷ আঞ্চলিক গোষ্ঠী সমূহের ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়া হোক ৷ কর্মক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়া হোক ৷ যাতে সময়ের মূল্যবোধে ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম থাকে ৷ এই যে ধরুন কোন একটা ভাষা সামাজিক জীবনের অঙ্গ ৷ একজন সাঁওতালি ভাষা জানা মানুষ যখন তার কমিউনিটি তে বিলং করবে ৷ তখন তার ভাষায় তার মাধ্যম হয়ে ৷ রাষ্ট্র যে নীতি নিয়ে ভাষা চর্চা করছে! তা সন্দেহ থেকেই যায় ৷ ২১ শে ফেব্রুয়ারী ভাষাদিবস ওই একটা দিন সোশ্যাল মিডিয়া, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু সিলেক্টটিভ জায়গাতে পালন করলে ৷ মাতৃভাষা আদৌও পরিপুষ্ট বা সঞ্চারিত হবে তা বলা বাহুল্য ৷
কুড়মালিও একটি আদিম স্বতন্ত্র ভাষা, প্রতিষ্ঠানিক জায়গায় স্ব-বিরোধীতার ফলে লুপ্তপ্রায়ের পথে হারাতে বসেছে ৷ যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিধানসভায় বিল পাশ করেছে ২০১৭ | পশ্চিমবঙ্গে ৯ জেলায় ৪২ লক্ষ কাছাকাছি মানুষের বাস ৷ মূলত পূরুলিয়া,ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া,পশ্চিম মেদিনীপুরে এর সংখ্যা টা বেশি কুড়মালি ভাষায় কথা বলে ৷ আজো তাদের লিপির স্বীকৃতি নেই, সংরক্ষনের ব্যবস্থা নেই ৷ এই ভাবে অসংখ্য স্ব-ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে আধুনিক যুগে চর্চা এবং পরিচর্যার অভাবে ৷ স্বাধীন রাষ্ট্রের অনেক ভাষায় তার স্বীকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত ৷