নিজস্ব সংবাদদাতা; দিঘা: মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে হার মানালো দিঘা। ভর সন্ধ্যায় বাজার ভর্তি লোকের সামনেই দুই বৃহন্নলাকে স্রেফ উলঙ্গ করে দিয়ে পেটানো হল। বাঁশ লাঠি কিল চড় লাথি সহযোগে বেধড়ক মারের সঙ্গে অর্ধ নারীদের আপাঙ্গ লেহন করল দিঘায় পৌরষত্বের চোখ। খোলা বাজারের চকচকে নিয়ন আলোয় ঘন্টা খানেক ধরে চলা এই বর্বরতা থেকে বাঁচানোর জন্য দীর্ঘক্ষন কারও দেখা মেলেনি ।
![](http://thekharagpurpost.in/wp-content/uploads/2020/08/IMG_20200826_020410-300x275.jpg)
বুকে থাকা লজ্জা নাকি পিঠে পড়া লাঠি কোনটা বাঁচাবে আর কোনটা ছেড়ে দেবে উন্মত্ত জনতার সামনে ঠিক করতে না পেরে বৃহন্নলারা অসহায় আর্তনাদ ক্ষমা প্রার্থনায় বারংবার ভেঙে পড়ল। সুন্দরী দিঘার এমন বর্বর অমানবিক আচরনের স্বাক্ষ্য থাকলেন কিছু পর্যটকও। পরে কিছু মানুষ ও পুলিশ এসে তাঁদের আরও মারের হাত থেকে বাঁচান।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই মোবাইলে মোবাইলে ছড়িয়ে পড়েছে সেই ভাইরাল হওয়া কুৎসিত কদর্যতা। অথচ এঁরা পর্যটকই, বেড়াতেই এসেছিলেন দিঘায়। কিন্তু সেই প্রাচীন প্রবাদ, কুকুর কে মারতে হলে বদনাম দিয়ে মার, সেভাবেই এদের মাতাল, হিজড়া বলে দেগে দিয়ে পেটানো হল!
দিঘার যে খোলা বাজারে এই নারকীয় অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে তা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত নেহেরু মার্কেট।
![](http://thekharagpurpost.in/wp-content/uploads/2020/08/IMG_20200826_021527-221x300.jpg)
বাজারের কিছু দোকানদার এবং দিঘা দাপিয়ে বেড়ানো কিছু স্থানীয় যুবকের দাবি, কলকাতার বাসিন্দা চার পর্যটক যারা তৃতীয় লিঙ্গ বা বৃহন্নলা, সোমবার সন্ধ্যায় তারা নাকি মদ্যপ অবস্থায় অশ্লীল গালিগালাজ এবং অঙ্গভঙ্গি করছিলেন। প্রথমে তাঁদের নাকি এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলা হয় কিন্তু তাঁরা
![](http://thekharagpurpost.in/wp-content/uploads/2020/08/IMG_20200826_020323-285x300.jpg)
তারপরও ওই একই আচরন করছিলেন এমন অভিযোগে তাঁদের ঘিরে ফেলেন স্থানীয়রা। দু’জন কোনও ভাবে পালাতে পারলেও বাকি দু’জনকে ধরে চলে বেধড়ক মার। লাঠি, বাঁশ হাতে নৃশংসভাবে পেটানো হয় তাঁদের।
মাটিতে ফেলে চলে দেদার লাথি। আর তারই ফাঁকে ছিঁড়ে ফেলা তাঁদের পোশাক।পুরোপুরি নগ্ন করে দেওয়া হয় দুজনকে। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে একে অপরকে ধরে নিজেদের নগ্নতা আড়াল করার চেষ্টা করছেন দুজনে। কিন্তু পরক্ষনেই তাঁদের আলাদা করে দিয়ে পেটানো হচ্ছে, খামাচানো হচ্ছে, চুলের বেণী ধরে মাটিতে লুটিয়ে দেওয়া হচ্ছে আর জান্তব উল্লাসে ফেটে পড়ছে জনতা। চলছে কুৎসিত অশ্লীল গালাগালি।
দীর্ঘক্ষন ধরে চলে এমন অত্যাচার। পরে পুলিশ এসে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁদের উদ্ধার করে। ভর্তি করা হয় দিঘা হাসপাতালে। মজার ব্যাপার পুলিশের তরফেও একটি অংশ জনরোষের তত্ত্ব খাড়া করেছেন। তাঁদের মতে ওঁদের আচরনে ক্ষুব্ধ হয়ে কিছু মানুষ এমনটা করেছে। কেন এই ঘটনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দিঘা মোহনা কোস্টাল থানার ওসি বিনয় মান্না।
দিঘা নেহেরু মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুশীল প্রধান গোটা ঘটনাই আবার ঠেলে দিয়েছেন অজ্ঞাত পরিচয় সাধারন মানুষের ঘাড়ে। তিনি বলেন, ‘ওই বৃহন্নলারা বাজারে ঢুকে অসভ্যতা করেছিল মানুষের সঙ্গে। খেপে গিয়েই ওদের মারধর করেছেন মানুষ।’ এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে নৃশংসতার সেই ভিডিও।
মানুষ সোচ্চার হয়েছেন এই বর্বরতার বিরুদ্ধে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, যেখানে পর্যটকদের সহায়তা, নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য গোটা দিঘা জুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে সেখানে পুলিশ এত দেরিতে পৌছালো কেন? যদিও পুলিশের দাবি তারা যদি না সময়মত ঘটনাস্থলে পৌঁছাত তাহলে উন্মত্ত কিছু জনতার গণপিটুনিতে হয়তো মারাই যেতেন ওই দুই বৃহন্নলা।
রামনগর ১ ব্লকের বিডিও বিষ্ণুপদ রায় বলেন, ‘ অত্যন্ত অনভিপ্রেত ঘটনা। গণপিটুনি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।’ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মোহনা কোস্টাল থানার পুলিশকে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিডিও। ঘটনার ২৪ ঘন্টা পরেও ধরা পড়েনি কেউ। অথচ ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে কারা কারা এই অসভ্য বর্বরতার সঙ্গে যুক্ত। অথচ এই ধরনের ঘটনায় আক্রান্তদের কোনও অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে, গ্রেপ্তারও করতে পারে