নরেশ জানা: IIT-Kharagpur বাইপাশ কিংবা ইন্দা থেকে চৌরঙ্গীর চওড়া রাস্তা সব ঢেকে আছে গাঢ় কুয়াশার আস্তরনে। কৌশল্যা থেকে বারবেটিয়া হয়ে ৬০ নম্বর বালেশ্বর-রানীগঞ্জ জাতীয় সড়ক অথবা রূপনারায়নপুর থেকে সাহাচক হয়ে নিমপুরা, ৬নম্বর হাওড়া-মুম্বাই জাতীয় সড়ক যেন কুয়াশার চাদরে আপাদমস্তক মোড়া! রাত ১১টা থেকে যে কুয়াশা নামতে শুরু করে ধিরে ধিরে তা ঘিরে ধরে শাল সেগুন আর মেহগনি, শিরীষ, তেঁতুল আর অজস্র নাম না জানা গাছে ভরা IIT ক্যাম্পাস! গোটা খড়গপুর জুড়েই কুয়াশার দাপাদাপি। IIT মেনগেট থেকে আধুনিক ক্লকটাওয়ার আর ব্রিটিশ আমলের হিজলি জেলের মিনার, যেন মায়াময় কোনো এথেনশীয় নগরী।মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল আবহাওয়া দপ্তরের পঞ্জিকাতে, আলিপুর বলেছিল তারপর খড়গপুরের সাথেই হাড় কনকনে একটা শীত একটা চওড়া ইনিংস খেলবে সারা দক্ষিনবঙ্গে! কিন্তু কোথায় বৃষ্টি? বদলে ভোরের সকাল জমাট বাষ্প যেন দম মেরে বসে আছে IIT ফ্লাইওভার, গোলবাজার সেতু আর খড়গপুর রেল স্টেশনের ওপর দিয়ে বোগদা-বাস স্ট্যান্ড ছুঁয়ে যাওয়া রেলওয়ে ফুট ব্রিজ! যে শীত কদিন আগেও চাঁদমারি আর বাংলো সাইডের পারদ নামিয়ে দিয়েছিল ১০ডিগ্রি সেলসিয়াসে এখন তা সর্বনিম্ন ১৫ডিগ্রির ওপরে! বুধবার সকালে IIT Kharagpur Campus Weather রিপোর্ট বলছে খড়গপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ডিগ্রি সেলসিয়াস কিন্তু অনুভূত হচ্ছে ২৮ ছাড়িয়ে।
বুধবার ভোরে কলাইকুণ্ডা কিংবা মহেশপুর, বড়কলা থেকে সাইকেলে সবজি নিয়ে খড়গপুর শহরে আসা ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন সেন চক হয়ে খরিদার দিকে আসার সময় এমনই অবস্থা ছিল যে, সামনে ১০ ফুটের বেশি দেখা যায় না। ঘন কুয়াশার চাদর ঢেকে ছিল চারদিক। আর আশঙ্কা জাগিয়ে হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, শুধু মঙ্গলবার বা বুধবার নয়, আগামী কয়েক দিন ভোররাত এবং সকালের দিকে এমন ঘন কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা অনেকটাই কম থাকবে। জাঁকিয়ে শীত পড়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
কিন্তু কেন হঠাৎ করে আবহাওয়ার এই পাগলামো? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেন, “আপাতত এমনই আবহাওয়া থাকবে। তাপমাত্রার তারতম্য খুব একটা হবে না। বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাস্প ঢোকার কারণে উত্তরে বাতাস বাধা পাচ্ছে। ভোর এবং সকালের দিকে কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমছে। কাশ্মীর, দিল্লিতে তাপমাত্রাও কিছুটা বেড়েছে।”
মঙ্গলবার এবং বুধবার সকালে কলকাতা-সহ দক্ষিণের জেলাগুলিতে ঘন কুয়াশার কারণে গাড়ি চলাচলে সমস্যা হয়। কলকাতায় বিমান ওঠানামাতেও দেরি হয়েছে। কুয়াশার ঝড়ো ব্যাটিং চললেও জাঁকিয়ে শীতের সম্ভাবনা আপাতত নেই। যতক্ষণ না বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্পের বাধা সরছে, সকালের দিকে শীতের আমেজ মিলবে না। কুয়াশায় ঢাকবে রাস্তাঘাট। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে স্বাভাবিকের থেকে তাপমাত্রার পারদ কিছুটা বেশি। কাশ্মীর, দিল্লিতে পারদ কিছুটা চড়ছে। তার উপরে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাস্প রাজ্যে ঢোকার ফলে বাধা পাচ্ছে উত্তরে বাতাস। সপ্তাহের শেষে তাপমাত্রার সামান্য হেরফের হলেও, জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়়ার আশা দেখেছে না হাওয়া অফিস।
অন্যদিকে জাতীয় সড়কে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা করা হয়েছে চালকদের। বলা হয়েছে অবশ্যই ‘ফগ কাটার’ আলো ব্যবহার করতে হবে। কুয়াশায় আলোর বিচ্ছুরণ যাতে বিভ্রম না ঘটাতে পারে তারজন্য সাদার পরিবর্তে গাঢ় হলুদ আলোর ব্যবহার বাঞ্চনীয়। রাত ১২টার পর থেকে ৫টা অবধি যতদূর সম্ভব গাড়ি না চালানোই শ্রেয়। রাজ্য সড়কের মোড়, লেন কাটিংয়ে ট্রাফিক নজরদারি আরও কড়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।