Homeএখন খবরপরিবর্তন করতে পারি এমএলএকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষোদগার দলীয় নেতার! তোলপাড় ডেবরা

পরিবর্তন করতে পারি এমএলএকে, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষোদগার দলীয় নেতার! তোলপাড় ডেবরা

শশাঙ্ক প্রধান: ফাটল ছিলই কিন্তু সেই ফাটলের মুখ যে কাছের জনের দিক থেকেই বেরুবে এটা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি ডেবরার বিধায়ক সেলিমা খাতুন বিবি। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা বিধানসভা ক্ষেত্র এমনিতেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মুখে। মুখ পাল্টে ২০১৬তে জয় এসেছিল কানের পাশ দিয়ে কিন্তু ২০২১র লড়াই বড় কঠিন। বিজেপি ফ্যাক্টর আর বাম ফ্যাক্টর তো আছেই কিন্তু তার চেয়েও বড় ফ্যাক্টর সেই ফ্যাক্টর হল বিভীষন ফ্যাক্টর কিন্তু সেই বিভীষনের আতঙ্ক যে ঘরের এত কাছে সেটা বোঝাই যায়নি! বোঝা গেল সোমবার দু’দুটো বোমায়। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে বোমা দুটি ফাটিয়েছেন ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ কর্মাধ্যক্ষ রতন দে।

নিজের ফেসবুকে রতন দে দুটি কথা লিখেছেন। প্রথম কথাটি হল ‘আমি চাইলে এম এল এ পরিবর্তন করতে পারি।’ আর দ্বিতীয় কথাটি হল,’ টাকা ছাড়া কিছু বোঝেনা।’ খুবই সাদা মাটা কথা, একমাত্র এমএলএ কথাটি ছাড়া কোনও সূত্র নেই, কারও নাম নেই। সুতরাং সরাসরি তিনি কাউকে বলেছেন এমনটা দাবি করেননি। কিন্তু ডেবরার মানুষের বক্তব্য, “কী আশ্চর্য্য! রতন দে কী দার্জিলিংয়ের এমএলএ পরিবর্তন করার কথা বলেছেন নাকি মেদিনীপুরের?” বিষয়টি নিয়ে রতন দে আর কিছু বলেননি। মঙ্গলবার লুকোচুরি খেলেছেন দিনভর।

রতন দে বর্তমানে কর্মাধ্যক্ষ হলেও এক সময় ডেবরার তৃনমূল ব্লক সভাপতি বা কিং মেকার ছিলেন। ব্লকের তাবড় তাবড় নেতা যেমন আলোক আচার্য্য, বিবেক ব্যানার্জীদের বিরুদ্ধে গিয়ে সেলিমা খাতুন বিবিকেই মেনে নিয়েছিলেন আর কয়েকদিন আগে অবধিও তিনি ছিলেন সেলিমার ঘরের লোক। সেই মানুষটি কেন হঠাৎ এই পোষ্ট করল তা নিয়ে ধন্দ হওয়াই স্বাভাবিক। বিশেষ করে ২দিন আগেই রতন দে নিজের ফেসবুকে সেলিমার একটি জনসভার পোষ্ট করে বলেছিলেন, দ্য মাস লিডার বা জননেত্রী। তাহলে ২দিনের মধ্যে কী এমন ঘটে গেল যে তিনি একেবারে, ‘টাকা ছাড়া কিছু বোঝেনা’র মত কথা বলতে গেলেন?

দ্য খড়গপুর পোষ্টয়ের পক্ষ থেকে রতন দে বা সেলিমা বিবি দুজনকেই বারংবার ধরার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু মঙ্গলবার বিকেল অবধি কাউকে ফোনে ধরা যায়নি। রতন দে একটু পরে ফোন করছি বলে করেননি আর সেলিমা ফোন ধরেননি। তাঁর বাড়িতে গিয়েও দেখা মেলেনি। ফলে এ বিষয়ে ২জনের বক্তব্য আমরা পাইনি। ডেবরার রাজনীতিতে রতন এবং সেলিমার বিরোধী আরেক তৃনমূল নেতা আলোক আচার্য্য ফোন ধরেননি। তিনি রাজ্যের বাইরে আছেন বলে জানা গেছে। ডেবরার অপর এক নেতা অবশ্য বলেছেন, সন্ধ্যার পর রতন দে র পোষ্টকে গুরুত্ব না দেওয়াই উচিৎ। রতন দের পোষ্টটের জবাবে যেমন কেউ তাঁকে সমর্থন করেছেন তেমন কেউ এই প্রশ্নও তুলেছেন যে, ‘আপনি সুস্থ আছেন তো?’

ডেবরার বর্তমান ব্লক সভাপতি তথা প্রাক্তন বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতি অবশ্য বলেছেন, ” উনি যখন বলেছেন যে বিধায়ক পরিবর্তন করতে পারেন তখন ধরেই নেওয়া যায় উনি মূখ্যমন্ত্রীর কাছের লোক এবং হটলাইনে যোগাযোগ আছে। আমি চাইব তাহলে অন্য কাউকে এমএলএ না করে বরং উনি নিজেই এমএলএ হয়ে জিতে আসুন, পরিবর্তন করুন আর ডেবরার মানুষের হয়ে কাজ করুন, ডেবরার উপকার করুন এটাই আমরা চাইছি।”

কিন্তু রতন দে কী সত্যি খুব বলাখিল্যতা করেছেন? মনে হয়না। বরং কিছু ইঙ্গিত পাওয়া গেছে তার গত মাস খানেকের পোষ্টে। ২৫শে অক্টোবর রতন দে পোষ্ট করছেন, ‘রাজনীতি থেকে অবসর নিলাম কিন্তু।’ এরপর ৩১শে অক্টোবর তিনি নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর একটি বিজয়া সম্মিলনীর সভা নিজের ওয়ালে পোষ্ট করেছেন। এরপর নভেম্বরের ১তারিখে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর সেই বিখ্যাত মন্তব্যের একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছেন যেখানে তিনি বলছেন, ‘আমি হেলিকপ্টারেও নামিনি আর লিফটেও উঠিনি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতেই উপরে উঠেছি।’ আর ৬দিন আগে নিজের ওয়ালে রতন দে বলছেন, “শুভেন্দুকে মুকুল ভববেননা, ক্ষতি হবে।” অর্থাৎ শুভেন্দু অধিকারী মুকুলের চেয়েও শক্তিশালী যাকে আন্ডার এস্টিমেট করলে ভুল হবে।

রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দু এখন ফ্যাক্টর। শুভেন্দু দলে বা অন্যদলে যেখানেই থাকুন না কেন একটি শর্তেই থাকবেন তা’হল একসময়ে তাঁর পর্যবেক্ষনে থাকা জেলাগুলিতে শেষ কথা তিনিই বলবেন। ফলে প্রার্থী তো তাঁরই। এখন রতন দে যদি শুভেন্দু অনুগামী হয়ে যান তবে এমএলএ পরিবর্তন করতেই পারেন এমনকি রাধাকান্ত মাইতির ইচ্ছা পূরণ হতেও পারে। বর্তমান রাজনীতিতে খুব অসম্ভব নয় বিষয়টা। কে জানে তিনি পাতায় পাতায় ছলছেন কিনা?

RELATED ARTICLES

Most Popular