নিজস্ব সংবাদদাতা: সঙ্কট আরও ঘোরালো হল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানা এলাকার ষাঁড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বাকলসা সেবকরাম গ্রামের করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত পোস্ট মাস্টার শুভেন্দু কুমার মাইতির পরিবারে। তাঁর মৃত্যুর ৩০ ঘন্টার মধ্যেই ঘোরালো জ্বরের মধ্যে পড়েছেন তাঁর ৭৮ বছর বয়সী মা সুষমা মাইতি এবং ৫৫ বছর বয়সী দাদা প্রদীপ কুমার মাইতি। পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ায় শালবনী সুপার স্পেশালিটি (করোনা)হাসপাতাল থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর আ্যম্বুলেন্স পাঠিয়ে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে করোনা হাসপাতালে ভর্তি করতে নিয়ে গেলেন স্বাস্থ্য কর্মীরা।
উল্লেখ্য শুক্রবারই রাতেই চূড়ান্ত অসুস্থ হয়ে পড়ার পর শুভেন্দু বাবুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় পরিবার। রাত ১০ টা থেকে লাগাতার অনুরোধ করার পরও আশেপাশের কোনও আ্যম্বুলেন্স পাননি। অবশেষে শনিবার রাত ১টা নাগাদ ২০কিলোমিটার দূরের একটি পরিচিত আ্যম্বুলেন্স এসে পৌঁছালেও তাঁর অবস্থা নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। রাত দেড়টা নাগাদ বাড়িতেই মৃত্যু হয় তাঁর। স্বাভাবিক ভাবেই এবার আর ঝুঁকি নেয়নি প্রশাসন। দুজনের জ্বর এসেছে খবর পাওয়া মাত্রই প্রশাসনের তরফে তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জানা গেছে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ই গোটা পরিবারই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েছিল। শুভেন্দু বাবু সেই সময় ছুটিতে বাড়িতেই ছিলেন। আক্রান্ত হন তিনিও। শুভেন্দু বাবুর বড়দা দীপক মাইতি যিনি হোমিওপ্যাথি চর্চা করেন তাঁরই ওষুধে সবারই জ্বর ভাল হয়ে যায় বলে পরিবারের দাবি।। এরপরই ১৪তারিখ পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার প্রতাপপুর পোস্ট অফিসে নতুন দায়িত্ব ভার নেন শুভেন্দু। দু’দিন কাজ করার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে জ্বর আসে ফের। সহকর্মীকে দায়িত্ব বুঝিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। এবার আর হোমিওপ্যাথি নয় , ওইদিন বিকালেই লোয়াদাদে এম বিবিএস ডাক্তার দেখান। ডাক্তার কিছু পরীক্ষা করতে বলেন এবং ওষুধ দেন।
শুক্রবার বিকাল থেকেই ফের প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। আ্যজমা ছিল তাঁর। চিকিৎসক অক্সিজেন দিতে বলেন কিন্তু যে অক্সিজেন চালু করা পরিমানে তা কম ছিল ফলে মাঝ পথে তা শেষ হয়ে যায়। ফের অক্সিজেন জোগাড় করে তা চালু করতে দেড় ঘন্টা ফাঁক পড়ে। অবস্থা সঙ্কট জনক হয়ে পড়ে। তারপর আ্যম্বুলেন্স না পাওয়া এবং মৃত্যু।
শনিবার স্বাস্থ্য দপ্তর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ফের জ্বর আসে শুভেন্দুবাবুর মেজদা প্রদীপ মাইতি র। সন্তানের মৃত্যুতে ক্রমাগত কান্না ও কিছুই না খাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছিলেন মাও। তাঁর ও জ্বর ফিরে আসে। পরিবারের মোট ১০ সদস্য সহ ২৩ জনের মধ্যে ৭ জনের নমুনা নেওয়া হয় রবিবার এবং বাকিদের নমুনা নেওয়া হয়েছে সোমবার। এরই মধ্যে মৃত শুভেন্দু বাবুর সোয়াব পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে রবিবার রাতে।
যে ৭ জনের রবিবার নমুনা নেওয়া হয়েছে তাঁর মধ্যে শুভেন্দু বাবুর মা ও মেজদা রয়েছে যাঁদের ফল সোমবার রাতেই এসে পৌঁছানোর কথা। কিন্তু যেহেতু শুভেন্দু বাবুর পজিটিভ চলে এসেছে এবং এঁদের জ্বরের উপসর্গ প্রবল হচ্ছে তাই কোনও ঝুঁকি নিতে রাজী নয়। তাই সোমবারই মা ও ছেলেকে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে শালবনী করোনা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। ছবি-প্রতীকী