নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ি ফেরার অজুহাত দেখিয়ে বেধড়ক মেরে মাথা ফাটানোর পাশাপাশি হাত ভেঙে দেওয়া হল এক ব্যক্তির। অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। গত প্রায় ১২ঘন্টা সংজ্ঞাহীন ওই ব্যক্তি এমনই দাবি করা হয়েছে পরিবারের তরফ থেকে। বিজেপি দাবি করেছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার থেকেই এই উন্মত্ত তান্ডব চালানো হয় রাত ১১টার সময়। আক্রান্ত পরিবারের এক মহিলাকে ধর্ষন করার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ওই গৃহবধূ। মঙ্গলবার প্রায় মধ্যরাত পেরিয়ে যাওয়া এই তান্ডবের ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা থানা এলাকার পদ্যমপুর গ্রামে।
ডেবরা পঞ্চায়েত সমিতির জলিমান্দা গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই গ্রামের এক গৃহবধূ রুপালি সামন্ত ডেবরা থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে বলেছেন, “তাঁদের পরিবারের এবং অন্য একটি পরিবারের দুই সদস্য কাজের সূত্রে মহারাষ্ট্রে থাকেন। লকডাউনে আটকে পড়েছিলেন তারা। এরপরই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতেই তারা ফেরার উদ্যোগ নেন এবং বাড়িতে তারা ফোন করে জানায় যে তারা ফিরছে। এই খবর পাওয়ার পরই মঙ্গলবার রাতে একদল মানুষ তাদের বাড়িতে চড়াও হয় এবং ছেলেদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া যাবেনা এই দাবি তুলে তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর চালায়। তাঁর ভাসুর মেঘনাথ সামন্তকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে লোহার রড দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় এবং রক্তাক্ত অবস্থাতেই তাঁকে গাছে বেঁধে আরও মারা হয় যার ফলে তার হাত ও পা ভেঙে যায়। অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় তাঁকে প্রথমে ডেবরা সুপারস্পেশালিটি ও পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।”
ওই গৃহবধূর আরও অভিযোগ দুর্বৃত্তরা তাঁর সঙ্গেও অশালীন আচরণ করে। শাড়ি ও ব্লাউজ ছিঁড়ে দেওয়া হয় এবং তাঁকে ধর্ষনের চেষ্টাও করা হয়।স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রশান্ত পাত্র জানিয়েছেন, ” গ্রামের দুটি ছেলে বাড়ি ফিরছে এমন খবর পেয়ে ছেলে দুটি যাতে গ্রামে না ঢুকে এমনই দাবি তুলে গতকাল রাতে থানায় যায় ওই তৃণমূলের লোকেরা। আমিও থানায় গেছিলাম। আমি বলেছিলাম, গ্রামের ছেলে গ্রামে ফিরবে সরকারি নিয়ম মেনে তাদের চেক আপ হবে এবং কোয়ারেন্টাইন হবে এতে আপত্তির কি আছে? ওই পরিবারও জানিয়ে দিয়েছিল যে বাড়ি ফিরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরই তারা ঘরে ঢুকবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও থানা থেকে ফিরে এসেই মেঘনাদ সামন্তের বাড়িতে চড়াও হয় তৃণমূলের ওই দুষ্কৃতিরা এবং নির্বিচারে ভাঙচুর ও মারধর করা হয়।”
প্রশান্ত পাত্র আরও দাবি করেছেন, “সংলগ্ন এলাকায় আগামী রবিবার দুঃস্থ মানুষদের সবজি ও ত্রান বিলির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বিজেপির উদ্যোগে। কারা প্ৰকৃত দুঃস্থ তারই একটি তালিকা আমরা প্রস্তুত করছিলাম। সেই তালিকা প্রস্তুত করতে ওই পরিবারের একটি ছেলে আমাদের সাহায্য করছিল সেই রাগ থেকেই এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বর্তমানে মেঘনাদ সামন্তের অবস্থা এতটাই আশঙ্কা জনক যে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।”
যদিও তৃণমূলের দাবি ঘটনাটি আরাজনৈতিক। গ্রামের কিছু মানুষ ওই পরিবারকে বোঝাতে গিয়েছিল এখুনি যাতে মহারাষ্ট্র ফেরৎ ওই শ্রমিকদের ঢুকতে না দেওয়া হয় কিন্তু মেঘনাদ সামন্ত তাদের দিকে তেড়ে আসে কাটারি নিয়ে। এরপর বচসা থেকে হাতাহাতি এবং নিজেরই কাটারির আঘাতে আহত হন তিনি। এরসঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে বিজেপি এমনটাই দাবি করেছেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক সেলিমা বিবি।
অন্যদিকে বুধবার খবর সংগ্ৰহ করতে গেলে অভিযুক্তরা দুটি সংবাদমাধ্যমের সংবাদকর্মীকে ঘিরে ধরে। কার অনুমতি নিয়ে তাঁরা গ্রামে ঢুকেছেন সেই প্রশ্ন তুলে দীর্ঘক্ষন ঘেরাও করে রাখা হয় তাঁদের। পরিষ্কার বোঝা যায় কোনও কিছুকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।