শশাঙ্ক প্রধান: করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মৃত্যু হল এক মহিলার। পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা থানার অন্তর্গত বাড়-রাধানগর গ্রামের তপতী পাল নামক ওই গৃহবধূ বয়স ৪৮ বছর। তাঁর আগে থেকেই শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ছিল। গত ৫ই এপ্রিল কোভিশিল্ড নিয়েছিলেন স্থানীয় জাগুল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। যদিও ভ্যাকসিনের কারণেই তিনি মারা গেছেন এমনটা প্রমাণিত হয়নি কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার ২ঘন্টা পর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি যা থেকে বেরুতে পারেন নি। ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রায় ১৮ঘন্টার মধ্যে মৃত্যূ হয় তাঁর। পরিবার সূত্রে জানা গেছে সোমবার বেলা ২টা নাগাদ ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন তিনি। মৃত্যু হয় মঙ্গলবার সকাল ৯টা নাগাদ।
তপতীর ছেলে অনির্বান জানিয়েছেন, ‘মায়ের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা ছিল এটা স্বাস্থ্য কর্মীদের জানিয়েও ছিলাম আমরা। সেটা জানানোর পরেও যখন স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেছেন ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে তারপরই মা ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হয়েছিলেন। আমি এবং আমার বাবা দুজনেই মায়ের ভ্যাকসিন নেওয়ার বিরোধী ছিলাম। বিষয়টি নিয়ে মায়ের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়েছিল কিন্তু মা জেদ ধরেই ওই ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন। মা বারবার বলেছেন, “যেখানে দিদিমণি (স্বাস্থ্যকর্মী)রা বলছেন ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে সেখানে তোমরা আপত্তি করছ কেন?”
অনির্বান বলেন, মায়ের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। রক্তাল্পতা ছিল। এ নিয়ে চিকিৎসা হয়েছে। ভালই ছিলেন উনি। তবুও আমি বা বাবা চাইনি মা করোনা প্রতিষেধক নিক। কারন প্রতিষেধক নিয়ে অসুস্থ হওয়ার খবর তো হয়েছে আগেও। আর মা যেহেতু শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভোগেন তাই আমরা বারণ করেছিলাম। কিন্তু মা আমাদের কথা শোনেননি। সোমবার মা যখন জেদ করল ভ্যাকসিন নেবেই বলে আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ডেবরা চলে আসি। এখানে আমার কাজও ছিল। বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলেন। আগের দিনই বাড়ি ফিরছিলেন। সোমবার ভ্যাকসিন নেওয়া নিয়ে বাবার সঙ্গে ঝগড়া হয়। বাবা মাঠে চলে যান চাষের কাজে। আমাদের বাদাম চাষ করা হয়েছে। সেখানে জলসেচ করছিলেন বাবা। মা বাবাকে ফোন করে বলে, ‘তুমি যদি না আস তাহলে আমি একাই ভ্যাকসিন নিতে যাব।’
অনির্বনের কথায়, ‘বাবা এরপর বাড়ি ফিরে মা কে নিয়ে জাগুল স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যান। আবারও স্বাস্থ্য কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন বাবা। স্বাস্থ্যকর্মীরা আশ্বস্ত করেন যে কিছু হবেনা। এরপরই কোভিশিল্ড দেওয়া হয় মাকে।’ বাড়ি ফিরে তপতী, স্বামী দিলীপ এবং অনির্বান একই সাথে খাওয়া দাওয়া করেন। বিকাল চারটা নাগাদ শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বাড়িতে রাখা ইনহেলার, গ্যাসের ওষুধ দেওয়ার পরও শ্বাসকষ্ট কমছে না দেখে দেড় কিলোমিটার দূরে বগুয়ান খিরিসতলায় গ্রামীন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এঁরই তত্বাবধানে চিকিৎসা চলত তপতীর। তাঁকে অক্সিজেন এবং স্যালাইন দেওয়া হয়। ধিরে ধিরে শ্বাসকষ্ট কেটে যায় কিন্তু রাত্রি ১০টা নাগাদ শুরু হয় মাথার যন্ত্রনা, মাথা ঘোরানো এবং বমি বমি ভাব।
এরপর ওষুধ দেওয়া হলে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন মহিলা। গ্রামীন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই রাত কেটে যায়। মঙ্গলবার সকালে ফের শুরু হয় প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট। মহিলা এবার বলতে থাকেন যে তিনি আর বাঁচবেননা। এরপরই অক্সিজেন যুক্ত আ্যম্বুলেন্স করে তাঁকে ডেবরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। অনির্বানের অভিযোগ, ‘স্যালাইন চ্যানেল পরিবর্তন করা আর একটু অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা হয়নি এখানে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে নিয়ে যেতে বলে। আমরা নিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু পথেই মারা যান মা।
যদিও ভ্যাকসিনের জন্য মৃত্যু হয়নি বলেই জানিয়েছে স্বাস্থ্য কর্তারা। ডেবরা ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে বলা হয়েছে মহিলাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে ১ঘন্টা অবজার্ভেশনে রাখা হয়েছিল। সুস্থ হয়েই বাড়ি গেছিলেন তিনি। পরে অন্য কোনও কারণে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ভ্যাকসিনের সঙ্গে এই মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানানো হয়েছে।