নিজস্ব সংবাদদাতা; দু’দিন হাঁড়ি চড়েনি তাই খাবারের সন্ধানে গিয়ে কেশপুর বাজারে খোঁজ করছিলেন এমন কারোর যার কাছ থেকে সাহায্য পাওয়া যায়। সেই সময় দেখা হয়ে যায় কয়েকজন সিপিএম কর্মীর সাথে। সাংসদ ও অভিনেতা দেবের নিজের জ্যাঠতুতো ভাই বিক্রম অধিকারীর এ হেন অবস্থা দেখে। সিপিএমের কর্মীরা বিক্রমকে চাল আটা ও কিছু টাকা তুলে দেয়। ঘটনার খবর প্রকাশ হতেই কার্যত ক্ষেপে ওঠেন তৃণমূলের নেতা বিধায়করা। ঘটনার জন্য দায়ী করা হয় বিক্রম আর সিপিএমকেই। বিক্রম তৃণমূলকে কিছুই জানায়নি আর সিপিএম বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করছে এমনটাই তাঁদের অভিযোগ, যদিও নিজেদের ত্রুটি ঢাকতে পরের দিনই ত্রাণের পাহাড় পৌঁছে যায় বিক্রমের বাড়িতে।
সাংসদ দেব অবশ্য তৃণমূল নেতাদের ওই আচরনের ধারে কাছে যাননি।
নিজের ট্যুইটারে অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় জ্যাঠতুতো ভাইয়ের এই পরিনতির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলেছেন, দুঃখিত, পুরো ঘটনার জন্য। ধন্যবাদ আমাকে খবর দেওয়ার জন্য। সকালেই রেশন পৌঁছে গেছে। সঙ্গে একটি ছবিও পোষ্ট করেছেন দেব। সেই ছবিতে দেখা গিয়েছে কেশপুরের বিডিও দীপক ঘোষ ও একজন আধিকারিক ত্রান তুলে দিচ্ছেন দেবের ভাই বিক্রমের হাতে, যে ছবি প্রকাশিত হয়েছিল দ্য খড়গপুর পোষ্টে। একই দিনে অর্থাৎ রবিবারই বিডিওর কিছু পরেই কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শুভ্রা দে সেনগুপ্তও ত্রান নিয়ে গেছিলেন বিক্রমের বাড়িতে। গেছিলেন স্থানীয় উপপ্রধান। ত্রান পাঠিয়েছিলেন কেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও। দেব অবশ্য সে সব কোনও ছবিই পোষ্ট করেননি। জানা গেছে ঘটনার খবর প্রকাশ হতেই বিক্রমকে সরাসরি ফোন করেছিলেন দেবের বাবা গুরুপদ অধিকারীও। খোঁজ খবর নেন তিনি।
তৃণমূল নেতাদের মত কারও উদ্দেশ্যে কোনও কটাক্ষ না করেই দেব ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, যে ভাবেই হোক ত্রান পৌঁছেছে এটাই ভাল খবর। ভবিষ্যতে তিনি যে নিজের পুরানো বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে টাচে থাকছেন এটাও জানিয়েছেন তিনি তাঁর সহকারীদের। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছিল বিক্রম খারাপ অবস্থায় আছে এটা জানায়নি স্থানীয় নেতাদের। বিক্রম অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং প্রধানের বাড়িতেও গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে সাংসদের ভাই তাই তার রেশন দরকার নেই বলে উপহাস করা হয়েছে তাঁকে। হতদরিদ্র বাসের হেল্পারি করা খেটে খাওয়া মানুষটি কেন আবাস যোজনায় বাড়ি পাবেনা, কেন তাঁর বিধবা মা ভাতা পাবেননা এর উত্তরে শুভ্রা বলেছিলেন, উনি আবেদন করেননি কিন্তু সংবাদমাধ্যমের সামনেই বিক্রম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে বলেন, মায়ের পেনশনের জন্য বিডিও অফিসে গেছিলাম কিন্তু আমার সামনেই এক নেতা আধিকারিককে ফোন করে জানায় সে না বললে কারও পেনশন হবেনা।
কেশপুরের এক তৃণমূল নেতা জানান, “খবর নিন সরকার পরিবর্তনের পর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির স্বামী চাকরি পেয়েছেন, প্রাক্তন ব্লক সভাপতির স্ত্রীর চাকরি হয়েছে কিন্তু প্রয়োজন আছে এমন তৃণমূলের গরিব ছেলেরাই চাকরি পায়নি। আজ দেবের ভাই বলে আপনারা সাংবাদিকরা এত লাফাচ্ছেন আর বিক্রম ত্রান পেয়েও গেছে। কিন্ত কেশপুরের গ্রামে গ্রামে এরকম অনেক বিক্রম আছে।” যদিও এই দাবি উড়িয়ে তৃণমূল বলেছে কেশপুরের এমন একটি পরিবার পাওয়া যাবেনা যে তারা ত্রান পায়নি।