ওয়েব ডেস্ক : এটা বোধহয় ওরাই পারেন! বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কন্যা নিচ্ছেন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রথম টিকা! মানব বোমার সঙ্গে এর কোনও ফারাক নেই কারন বিশ্বের প্রথম প্রতিষেধক, ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেটা কতটা সফল, আদৌ কাজ করবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। ব্যর্থ হলে প্রাণের ঝুঁকি আছে কিনা তা নিয়ে যখন গোটা বিশ্বে আলোচনা তুঙ্গে, সেসময় নির্ভয়ে করোনার প্রথম টিকাটি নিজের শরীরে প্রয়োগ করে ফেললেন পুতিন কন্যা৷
প্রথম ভ্যাকসিন, ফলে স্বাভাবিকভাবেই একটা ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে, কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা না করে একজন মহিলা হয়ে পুতিনকন্যার এই সিদ্ধান্তে স্বাভাবিকভাবেই কুর্নিশ জানাচ্ছে বিশ্ববাসী। দেশ তথা গোটা বিশ্বের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে এতটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করা যায় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মারণ রোগের কবল থেকে বিশ্বকে মুক্তি দিতে মঙ্গলবারই বিশ্বের প্রথম করোনা ভ্যাকসিন আনল রাশিয়া। যা নিঃসন্দেহে স্বস্তি বিশ্ববাসীর কাছে৷ শুধু তাই নয়, টিকাটি প্রথম প্রয়োগ করা হয়েছে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কন্যার শরীরে। ভ্যাকসিনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্পুটনিক-৫’।
মঙ্গলবার বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করা এই সংবাদ নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, “আজ সকালে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিশ্বে প্রথম কোনও ভ্যাকসিন নথিবদ্ধ হয়েছে। আমার এক মেয়ের শরীরে টিকাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। বলা যেতে পারে সেও এই গবেষণায় অংশগ্রহণ করেছে।”
পুতিন অবশ্য বলেননি তাঁর কোন মেয়ে এই টিকা নিয়েছেন, মারিয়া না ক্যাটরিনা। প্রটোকল মেনেই প্রকাশ করা হয়নি কোনও ছবি। রাষ্ট্রপতি শুধু জানিয়েছেন, “দুবার নিতে হয়েছে টিকাটি। প্রথমবার নেওয়ার পরে তাঁর শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়ছিল। দ্বিতীয়বার টিকা নেওয়ার পর তা ৯৮.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইটে নেমে আসে। তারপর সব স্বাভাবিক আছে।”
সেদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে এই প্রতিষেধককে কেন্দ্র করে আগামী দিনে করোনার সঙ্গে লড়াই আরও তীব্র করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে রাশিয়ার। আপাতত প্রায় কয়েক কোটি টিকা বানিয়ে ফেলেছেন রাশিয়া৷ এমনকি ইতিমধ্যেই তা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে তৎপর হয়েছে মস্কো। প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই রাশিয়ার বানানো এই প্রতিষেধক বাজারে আসার দিন আরও এগিয়ে আনার ঘোষণা করেছিল পুতিন সরকার। বলা হয়েছিল চলতি মাসের ১২ই আগস্ট ভ্যাকসিন বাজারে আনবে রাশিয়া। সেই ঘোষণা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই অর্থাৎ ১১ আগস্টের মধ্যেই সেই কাজ করে ফেলল মস্কো। রাশিয়ার গ্যামালিয়া ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমোলজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজিতে করোনা ভাইরাসের ‘প্রতিষেধক’ তৈরির কাজ হয়েছে। ইতিমধ্যে তা বিভিন্ন ধাপে ১৬০০ জনের উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগও সম্পূর্ণ হয়েছে বলে দাবি রুশ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের। রুশ বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ভ্যাকসিন শরীরে প্রয়োগের পর রোগীর শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াইতে প্রস্তুত।
এই কারণেই অত্যন্ত সাফল্যের সাথে হিউম্যান ট্রায়াল পর্ব পেরিয়ে এসেছে বলে দাবি করেছেন রুশ প্রশাসন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরে ভ্যাকসিন উৎপাদনের গতি দ্রুত বাড়ানো হবে। তাদের দাবি, যদি সব ঠিক থাকে তবে ভ্যাকসিন প্রস্তুতের দৌড়ে রাশিয়াই হবে প্রথম দেশ, যারা কম সময়ের মধ্যে বিশ্বকে মারণ ভাইরাসের সাথে লড়ার অস্ত্র উপহার দিয়েছে। সারা বিশ্বের মানুষের এখন একটাই প্রার্থনা, সফল হোক এই টিকা, জয়ী হোন পুতিন কন্যা।